মৌলভীবাজারে মিলল আরেক ‘বদরুল’, স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে জখম

মৌলভীবাজারে মিলল আরেক ‘বদরুল’, স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে জখম

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সামিরা আক্তার নামে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রকাশ্যে দা দিয়ে কুপিয়েছে এক বখাটে। এ সময় বখাটে জুয়েল আহমদকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। আহত ছাত্রী সামিরার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার কুলাউড়া-ঘাটের বাজার সড়কের মীরশংকর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।

সামিরা আক্তার কুলাউড়া পৌর শহরের সাদেকপুরস্থ আল হেরা ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সামিরা উপজেলার মীরশংকর গ্রামের আরব আমিরাত প্রবাসী সরফ উদ্দিনের বড় মেয়ে।

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ছাত্রীর মা সাহারা বেগম এবং স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, সামিরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে উপজেলার ভূকশীমইল ইউনিয়নের সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাবস্থায় সাদিপুর গ্রামের মৎস্যজীবী বকুল মিয়ার ছেলে জুয়েল আহমদ প্রায়ই তাকে (সামিরাকে) উত্ত্যক্ত করতো। বিষয়টি ছাত্রীর অভিভাবকরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জুয়েলের বাবা ও ভাইদের ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করবে না ওই মর্মে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। এ ঘটনার পর ভয়ে ওই ছাত্রীর অভিভাবক তাকে (সামিরা) কুলাউড়া পৌর শহরের আলহেরা ক্যাডেট স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করেন। এরপরও ওই বখাটে প্রায়ই সামিরাকে উত্ত্যক্ত করতো।

শনিবার দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ির ফেরার পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে মীরশংকর বাজারে গিয়ে নামে সামিরা। সেখান থেকে হেঁটে বাড়িতে প্রবেশের সময় রাস্তায় একা পেয়ে জুয়েল প্রকাশ্যে ধারালো দা দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। স্থানীয়রা সামিরার চিৎকার শুনে এগিয়ে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তার মাথায় ও কানে দায়ের কোপ রয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে স্থানান্তর করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

এদিকে স্থানীয়রা জুয়েলকে আটক করে কুলাউড়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

ছাত্রীর মা সাহারা বেগম আহাজারি করে বলেন, জুয়েল আমার বড় মেয়েকে সব সময় উত্ত্যক্ত করতো। এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার বিষয়টি জানতেন। আমার স্বামী প্রবাসে থাকেন। আজ আমার মেয়ের জীবন সংকটে। আমি আমার মেয়ের হত্যার চেষ্টাকারীদের উপযুক্ত বিচার চাই।

সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবির জানান, ওই ছাত্রী ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাবস্থায় জুয়েল তাকে উত্ত্যক্ত করতো। বিষয়টি জানার পর আমরা স্কুলের শিক্ষক ও তাদের এলাকার মেম্বারসহ জুয়েল ও তার বাবাকে ডেকে আনি। জুয়েল ও তার অভিভাবকের মুচলেকা রাখি যাতে পরবর্তীতে ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত না করে।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, জুয়েলকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২০১৬ সালের বছরের ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ডিগ্রি (পাস) পরীক্ষার্থী খাদিজা বেগমকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের অনিয়মিত ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। ঘটনার পরপর উপস্থিত লোকজন বদরুলকে আটক করে পুলিশে দেন। এ ঘটনায় ৪ অক্টোবর বদরুলকে একমাত্র আসামি করে খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস মামলা করেন। ৫ অক্টোবর বদরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ২০১৭ সালের ৮ মার্চ খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি বদরুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড দেন সিলেটের মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা।

রায়ে আদালত বলেন, প্রেমের বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। মানুষের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা থাকতেই পারে। কিন্তু তার জন্য এ ধরনের নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড কাম্য হতে পারে না।

রায় ঘোষণার পর বদরুলকে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। প্রিজন ভ্যানে ওঠার সময় বদরুল সবার উদ্দেশে জোর গলায় বলেন, তাঁর কিছু হবে না।

এমআই