বাইরে বের হ, রেইপ করে ফেলব: চিকিৎসককে ছাত্রলীগ নেতা (ভিডিও)

বাইরে বের হ, রেইপ করে ফেলব: চিকিৎসককে ছাত্রলীগ নেতা (ভিডিও)

সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক, নিরাপত্তাপ্রহরী ও লিফটম্যান। বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সারোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগকর্মী এ ঘটনা ঘটান।

এ সময় সারোয়ার ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে এক নারী চিকিৎসককে হত্যা ও ধর্ষণেরও হুমকি দেন।

হুমকিপ্রাপ্ত চিকিৎসক নাফিজা আনজুম নিশাত দাবি করেন, বৃহস্পতিবার বিকালে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যাথা নিয়ে একজন রোগী হাসপাতালে আসেন। তার সঙ্গে ছিল ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল। এ সময় তাদের রোগীর পাশ থেকে ভিড় কমিয়ে সিনিয়র চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করতে বলায় তারা ক্ষেপে যান। অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে নিজেদের ছাত্রলীগ নেতা বলে পরিচয় দিয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না দিলে হত্যার হুমকি দিতে থাকেন তারা। তাদের হুমকিতে বিপন্ন বোধ করায় ডা. নাফিজা অন্যান্য সহকর্মীদের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেন।

তিনি দাবি করেন, এ সময় সারোয়ার নামের এক ছাত্রলীগ নেতা ছুরি দেখিয়ে তাকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেন।

ডা. নাফিজা এ নিয়ে তার ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। হুমকি-ধামকি দেওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘উইমেন্স মেডিকেল কলেজের চিকিৎকদের বিরুদ্ধে রোগী ফেলে মোবাইল বা খোশগল্পে মত্ত থাকার আরো অনেক অভিযোগ আছে। এমন অনেক বিষয় আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। বৃহস্পতিবারও একই ঘটনা ঘটে। রোগী ব্যাথায় কাতরাতে থাকলে আমরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে একটু দ্রুত চিকিৎসার কথা বলি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এলেও এখন চিকিৎসা দিতে পারবেন না বলে একজন নারী চিকিৎসক হুমকি দিলে আমার সাথের নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কথা বলায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু ছুরি দেখানো বা তুলে নেওয়ার হুমকির মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তাকে হুমকি দিতে দিতে দেখা গেছে জানালে সারোয়ার সারোয়ার বলেন, ‘হাসপাতালে এ ধরনের উত্তেজিত হয়ে ওঠাটা ঠিক হয়নি। কিন্তু একদিকে বন্ধুর ব্যাথা আরেক দিকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কথা বলায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি।’

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি শাহরীয়ার আলম সামাদ ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ারের পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, ‘ব্যাপারটি আমি জেনেছি। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের কোনো কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবে আমাদের করার কিছু নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই, ছাত্রলীগের নাম নিয়ে কেউ যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম না দেন। হাসপাতালে সেবা পেতে হলে এ ধরনের উচ্চবাচ্য বা হুমকি-ধামকি থেকে বিরত থাকতে হবে। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে এটা খুবই অন্যায় কাজ হয়েছে।’

এ বিষয়ে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. ফেরদৌস হাসান বলেন, ‘হুমকি-ধামকির ঘটনায় চিকিৎসকরা স্ট্রাইক করতে চেয়েছিল, বিষয়টি নিয়ে আমরা শনিবার পর্যন্ত সময় নিয়েছি। আশা করি একটা সমাধান পাবো। এ ধরনের ঘটনায় চিকিৎসকরা কর্মক্ষেত্রে অনিরাপদ বোধ করছেন।’

সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের অবহেলার অভিযোগ বারবার ওঠা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়েও আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করছি।’

ফেসবুকে দেওয়া ডা. নাজিফা আনজুম নিশাতের পোস্টটি তুলে ধরা হলো-

সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজের আজকের দুপুরের ঘটনা। ইউরোলজির এক পেশেন্ট আসলো। ডিউটি ডাক্তারের অনুরোধে আমি গেলাম পেশেন্ট রিসিভ করতে। কারণ আমার অ্যাডমিশন ছিল। গিয়ে দেখি প্রায় ১৫ থেকে ১৬ জন ছেলে সাথে আছে। পেশেন্টর হিস্ট্রি নিতে নিতে খুব বিনয়ের সাথে বললাম- আপনারা একজন থাকুন, বাকিরা বেরিয়ে যান।

একজন বললেন, আমাদের সামনেই ট্রিটমেন্ট দেন। আমি বললাম, পেশেন্টকে এক্সপোজ করতে হবে। আর হসপিটালের তো একটা প্রটোকল আছে। তারা বললেন- তারা সবাই থাকবেন এবং সবার সামনেই আমাকে ট্রিটমেন্ট দিতে হবে।

তারপর এদের মধ্যে একজনের অনুরোধে বাকিরা বেরিয়ে গেলেন। তিনজন দাঁড়িয়ে থাকলেন। পেশেন্টকে এক্সামিন করতে করতে আবার মানুষ ঢোকা শুরু করল। আমি তখন বললাম, ‘দেখুন আপনাদের আমি বারবার বলেছি আপনারা একজন থাকুন, বাকিরা বেরিয়ে যান।’

যথেষ্ট বিনয়ের সাথে। তখন এদের মধ্যে সরোয়ার নামের একজন বলল, ‘তোমার এমডিকে আমি কান ধরে এনে দাঁড় করাব, কর ট্রিটমেন্ট।’

আমি তখন বললাম, কি বললেন আপনি? সে বলল (আঙুল উঁচিয়ে), ‘কিছু বলি নাই। পেশেন্ট ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। ট্রিটমেন্ট দাও।’

আমি বললাম, ‘দেখেন ক্ষমতাধর ব্যক্তির জন্য যে ট্রিটমেন্ট, আপনার পেশেন্টের জন্যও একই ট্রিটমেন্ট। সবাইকে আমরা একইভাবে চিকিৎসা দেই। এবং সবার জন্য একই নিয়ম। সুতরাং আপনাদের বের হতে হবে।’

এর মধ্যে আমি পেশেন্টের বিপি মাপা শুরু করে দিয়েছি। তখন তিনি আমাকে তুই তুকারি শুরু করলেন। আমি আর সহ্য করতে না পেরে কান্না করতে করতে CA, IMO রুমে গিয়ে ভাইয়া, আপুদের ঘটনা জানাই। তারপর সেই ছেলে আমার পিছন পিছন এসে কোমর থেকে ছুরি দেখিয়ে বলে- ‘তোর সাহস কত। লাশ ফেলে দিবো।...বাইরে বের হ একবার। রেইপ করে ফেলব। আমার পা ধরে তোকে মাফ চাওয়া লাগব...।’

আরও অকথ্য ভাষায় গালাগাল। তারপর সিএ ভাইয়ার গায়ে হাত তোলার উপক্রম করে। তার গালাগালির ভিডিও ও আছে। এই হলো একজন ডিউটি ডক্টরের নিরাপত্তার অবস্থা। আমরাও রোজা রাখি। আমাদেরও ক্লান্তি হয়, ক্ষুধা লাগে। কিন্তু পেশেন্টের প্রতি এসবের কোন আঁচ পড়তে দেই না। এত ঘটনার মধ্যেও সেই পেশেন্টের কাগজপত্র শক্ত করে আমার হাতে ধরা ছিল। তার ট্রিটমেন্টও দেওয়া হয়েছে। যদিও তারা পরে DORB নিয়ে চলে যায়। কোথায় আমাদের নিরাপত্তা? রাজনৈতিক ক্ষমতার কাছে আমরা কতকাল জিম্মি থাকব?

https://www.facebook.com/amadersomoy/videos/429077047657126/

এমআই