ঢাকা-সিলেট পথে ২০ কিলোমিটার যেতে লাগে ৬ ঘন্টা

ঢাকা-সিলেট পথে ২০ কিলোমিটার যেতে লাগে ৬ ঘন্টা

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানবাহন চলাচল চান্দুরা-আখাউড়া সড়কের জন্যে মড়ার ওপর খাড়ার গা হয়েছে। একবছর ধরেই বেহাল এই সড়ক। রাস্তা জুড়ে হাজারো গাতাগর্ত। বৃষ্টির পানি জমে কোথাও কোথাও পুকুরের আকৃতি হয়েছে সড়কের। মানুষ ঠেকায় পড়েই যেন চলছিলো এতোদিন। যানবাহনের চলাচলও কমে গিয়েছিলো। জেলার বিজয়নগর উপজেলার প্রধান সড়ক এটি।

এই সড়কেই ঢল নেমেছে এখন হাজারো গাড়ির। ভোগান্তি উঠেছে চরমে। সাড়ে ৫ মিটার পাশের ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক পাড়ি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে কয়েক ঘন্টা। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের শাহবাজপুরে তিতাস নদীর ওপর সেতুটির চতুর্থ স্পেনের ফুটপাতসহ রেলিং ভেঙে পড়ে। এরপরই সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) সব ধরণের ভারী ও মাঝারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর ওপর দিয়ে। এরপরই বিকল্প পথ হিসেবে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে ঢাকা সিলেট, কুমিল্লা-সিলেট এবং চট্টগ্রামের বেশীরভাগ যানবাহন চলাচল করতে শুরু করে। এতে এই সড়কের বিভিন্নস্থানে প্রকট যানজট দেখা দিচ্ছে।

যদিও এই সড়কটি ছাড়া বিকল্প আরো দুটি সড়ক রয়েছে। এর একটি হচ্ছে সরাইল-নাসিরনগর হয়ে হবিগঞ্জের লাখাই দিয়ে, অন্যটিও সরাইল-নাসিরনগর হয়ে রতনপুর দিয়ে। তবে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে দুটি মহাসড়ক অর্থাৎ ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের যানবাহন চলাচল করায় এতে ভোগান্তি হচ্ছে সবচেয়ে বেশী।

বিজয়নগর বিআরডিবি’র চেয়ারম্যান দীপক চৌধুরী বাপ্পী জানান, ‘বুধবার বিকাল ৫ টার দিকে তিনি বিজয়নগরের সিংগারবিল থেকে চান্দুরা রওনা হন। ১৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে তার ৫ ঘন্টারও বেশী। রাত সাড়ে ৯ টার পর চান্দুরা পৌছান তিনি। সিএনজি অটোরিকসা, রিকসা, সবশেষ পায়ে হেটে এই পথ পাড়ি দেন।’ সড়কের কালীরবাজার, মোল্লারটেক, নোয়াগাও, আড়িয়ল এসব এলাকায় যানজট বেশী বলে জানান বাপ্পী।

জানা গেছে, চম্পকনগর থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগে কমপক্ষে সাড়ে ৩ ঘন্টা। সড়কটি দিয়ে পুরোদমে যাত্রীবাহী বাস ছাড়া পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে। মহাসড়কের যানবাহনের কারনে স্থানীয় যানবাহন বিশেষ করে সিএনজি অটোরিকসা চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এলাকার মানুষকে চলতে হচ্ছে পায়ে হেটেই। এর বাইরে উপজেলার ভেতরের সড়ক ব্যবহার করে যতটুকু পারছেন সিএনজি করে চলছেন তারা। তাছাড়া যানজটের কারনে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী গাড়ির নারী-শিশু যাত্রীরাও অনেক কষ্ট সইছেন। দূর্ঘটনাও ঘটছে। চম্পকনগরের মোল্লারটেকে বুধবার রাতে পাথরবাহি ট্রাক উল্টে পড়ে। মোল্লারটেক এবং আড়িয়লে আরো মালবাহি দুটি গাড়ি উল্টে পড়ে রাস্তার পাশে।

বিজয়নগর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্র জানিয়েছে- চান্দুরা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২২কিলোমিটার। এরমধ্যে সাড়ে ১৭ কিলোমিটারই বিজয়নগর উপজেলায়। ২০১৮ সালে সড়কটি মেরামত করা হয় ২৪ লাখ টাকায়। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরো ৬ লাখ টাকার কাজ করা হয়। কিন্তু এসব কোন কাজই টিকেনি। লোক দেখানো কাজ করে টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। প্রথম দফায় হওয়া ২৪ লাখ টাকার কাজের তেমন অস্তিত্ব খুজে না পেয়ে ঠিকাদারের বিল আটকে দেয়া হয় । পরে ঠিকাদারকে দিয়ে আরো ৫ লাখ টাকার কাজ করিয়ে ওই বছরের জুনে বিল পরিশোধ করা হয় বলে জানিয়েছেন এলজিইডি’র কর্মকর্তারা।

চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক বিজয়নগর উপজেলার প্রধান রাস্তা হলেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চান্দুরা থেকে কুমিল্লা বা চ্ট্রগ্রাম যাওয়ার বিকল্প সড়ক হিসেবেও ব্যবহার হয় এটি। জেলা সদরে না গিয়ে এই সড়ক দিয়ে আখাউড়া বাইপাস সড়কে এসে সুলতানপুর-আখাউড়া বা আখাউড়া-কসবা সড়ক দিয়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যুক্ত হওয়া যায়। তাছাড়া এই সড়ক দিয়ে আখাউড়া স্থল বন্দরে যাওয়া আসা করে পন্যবাহি ট্রাক। কিন্তু এক বছরেরও বেশী সময় ধরে গুরুত্বপূর্ন এই সড়ক বেহাল। চলাচলে নাভিশ্বাস উঠে এলাকার মানুষের। তাদের দৃষ্টিতে জেলায় এরচেয়ে খারাপ রাস্তা আর নেই। প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা, গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে এলাকার চালকরা আরো আগে থেকেই গাড়ি চলাচল কমিয়ে দেন এই সড়কে। সড়কটির সবচেয়ে খারাপ অবস্থা চান্দুরা থেকে কালীরবাজার পর্যন্ত। এখন শতশত গাড়ির যাতাকলে সড়কের অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

এই অবস্থায় সড়ক টিকিয়ে রাখার পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি’র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সড়কতো ভাঙ্গবেই’।

তবে মাস খানেকের মধ্যে সড়কের কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন। তিনি জানান, বিজয়নগরের এই সড়ক এবং কসবার আরেকটি সড়কের কাজের জন্যে একত্রে ৪৪ কোটি টাকার দরপত্র হয়েছে। দরপত্রের ইভ্যালুয়েশনও শেষ হয়েছে। এটি এখন মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিদেশী প্রকল্পের অধীনে কাজটি হবে বলে এর দরপত্র প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে বলেও জানান তিনি। ৪৪কোটি টাকার মধ্যে বিজয়নগরের এই সড়কের জন্যে বরাদ্দ ২৪ কোটি টাকা।

উপজেলা প্রকৌশলী বলেন- মুল কাজ না হওয়া পর্যন্ত মানুষ স্বস্তি পাবেনা। তারপরও আমরা যতটুকু পারি স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করছি। তাছাড়া সড়কের এই অবস্থার কারনে আমরা নিজেরাও ভোগান্তির শিকার। প্রতিনিয়তই আমাদেরকে এই সড়ক দিয়ে চলতে হয়।

এমআই