প্রেমের নামে ইউএনওর যৌনতা: শাস্তি শুধু বদলি

প্রেমের নামে ইউএনওর যৌনতা: শাস্তি শুধু বদলি

নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় জামালপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের পর এবার একই অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন সুনামগঞ্জ উপজেলার তাহিরপুর উপজেলার ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজ। তার বিরুদ্ধে প্রেমের নামে এক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানো এবং তার নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকে হিসাব খুলে আয়বহির্ভূত লাখ লাখ টাকা লেনদেনের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে তাকে প্রত্যাহার না করে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। কেন আসিফ ইমতিয়াজকে প্রত্যাহার না করে অন্যত্র বদলি করা হলো তা জানতে বারবার ফোন করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সাড়া দেননি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ। তার প্রতারণার বিচার চেয়ে গত ৫ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী এক নারী। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনা তদন্তে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হারুন অর রশিদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এই কমিটি ইউএনও আসিফের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়। মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকালে একজন কর্মকর্তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মতামত দেওয়া হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

এদিকে ইউএনও আসিফ এবং ভুক্তভোগী ওই নারীর কথোপকথনের একাধিক অডিও রেকর্ড গণমাধ্যমের কাছে রয়েছে। এসব অডিওর ভাষ্য অনুযায়ী, ইউএনওর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে ওই নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। বিষয়টি জানতে পেরে সম্প্রতি ইউএনও আসিফ ওই নারীকে গর্ভপাত করতে চাপ দেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বেশ ঝগড়া-বিবাদ হয়। এক পর্যায়ে মেয়েটি তার গর্ভের সন্তানের স্বীকৃতি চান। কিন্তু ইউএনও সন্তানের স্বীকৃতি দিতে রাজি না হয়ে ওই নারীকে নানাভাবে হুমকি দেন। ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ওই নারীর সঙ্গে ইউএনওর কথাবার্তার তথ্য আমাদের সময়ের কাছে আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউএনও আসিফের চাপে গত ৮ জুন রাতে গর্ভপাত করান ওই নারী। যদিও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ দাবি করেন, অভিযোগকারী মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হওয়া এবং গর্ভপাতের কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেনি। ফলে এ অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করেন, গত বছরের এপ্রিলে ঢাকায় আসিফের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ও আবাসিক হোটেলে একত্রে বসবাসও করেন। কিন্তু কিছুদিন পর আসিফ তার কাগজপত্র ব্যবহার করে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে চট্টগ্রামের কদমতলীতে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে একটি হিসাব খোলেন। এ হিসাবে তিনি আয়বহির্ভূত লাখ লাখ টাকার লেনদেন করেন। তখন তিনি চট্টগ্রামের ডিসি অফিসের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার পদে (এলএও) ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, ভুক্তভোগীর নামে হিসাব খোলার অভিযোগের সতত্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তাদের দুজনের মধ্যে হওয়া কথোপকথনের অডিও ক্লিপগুলো পর্যালোচনা করে অনৈতিক সম্পর্কের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছি।

এদিকে তদন্তে দোষী প্রমাণিত একজন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার বা শাস্তির ব্যবস্থা না করে বদলির ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জামালপুরের সাবেক ডিসির বিরুদ্ধে এখনো অপরাধ প্রমাণিত না হলেও তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। অথচ ব্যাংকে ভুয়া হিসাব খুলে আয়বহির্ভূত লেনদেন ও একজন নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার পরও ইউএনও আসিফকে প্রত্যাহার না করে বদলি করা হয়েছে। সাধারণত এ রকম ঘটনা বিরল।

এমআই