পুলিশ হেফাজতে রাজমিস্ত্রির মৃত্যু, এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

পুলিশ হেফাজতে রাজমিস্ত্রির মৃত্যু, এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

হবিগঞ্জ থানায় পুলিশের হেফাজতে এক রাজমিস্ত্রির মৃত্যু হয়েছে। রাজমিস্ত্রি ফারুক মিয়ার পরিবারের দাবি তাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এ নিয়ে হবিগঞ্জ শহরজুড়ে আলোচনার ঝড় বইছে। ঘটনায় জড়িত পুলিশের শাস্তি দাবি জানিয়ে মিছিল করে স্থানীয়রা।

হবিগঞ্জ থানার এসআই জুয়েল জানান, রবিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তিনি চেক ডিসঅনার মামলায় রাজমিস্ত্রি ফারুককে গ্রেপ্তার করতে হবিগঞ্জ শহরে মোহনপুর এলাকায় তার বাসায় অভিযান চালান। পুলিশের উপস্থিতিতে টের পেয়ে ফারুক সীমানা দেয়াল টপকে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করেন।

পুলিশ জানায়, এ সময় পুলিশের এক সদস্য ফারুক মিয়াকে ধরে ফেলেন। থানায় নিয়ে আসলে তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডা. মিঠুন তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরে তিনি মারা যান। তিনি চেক ডিসঅনার ও একটি দাঙ্গার মামলার আসামি।

তবে ফারুকের ভাই মতিন জানান, একই এলাকার হান্নান মিয়ার কাছ থেকে কয়েক মাস আগে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তার ভাই। এর বিপরীতে ফারুকের কাছ থেকে শুধু সই করা একটি চেক নেন হান্নান। মাঝেমধ্যে তিনি ঋণের টাকা কিছুটা পরিশোধ করলেও সম্প্রতি হান্নান আদালতে ৪৫ হাজার টাকার একটি চেক ডিসঅনার মামলা করেন। আদালতে ফারুকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলা নিষ্পত্তির জন্য রোববার ফারুক পাওনাদার হান্নানকে পাঁচ হাজার টাকা ও গ্রেপ্তার এড়াতে পুলিশকে পাঁচ হাজার টাকা দেন। কিন্তু ওই রাতেই পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায়।

ফারুকের ভাই মতিন আরো জানান, থানায় নিয়ে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর পুলিশ বাড়িতে মোবাইলে জানায় যে, ফারুক গুরুতর অসুস্থ। এ সময় ফারুককে দিয়ে তার পরিবারের এক সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়। ফারুক হাসপাতালে একটি লুঙ্গি নিয়ে আসার জন্য তার ভাতিজাকে বলেন। হাসপাতালে গেলে তারা ফারুককে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।

হাসপাতালের ভর্তির খাতায় ফারুক দুর্ঘটনায় আহত ও বুকে ব্যথায় অসুস্থ বলে উল্লেখ করা হয়।

সোমবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হলে হাসপাতাল চত্বরে অসংখ্য মানুষ জড়ো হন। তারা এ ঘটনায় পুলিশের শাস্তি দাবি করেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ফারুক ৪ ছেলে ১ মেয়ের বাবা। বড় ছেলে মাসুক সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্বিতীয় ছেলে তাউছ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার ৩য় ছেলে কোরআনে হাফেজ এবং একমাত্র মেয়ে আসমা ১০ম শ্রেণি ও ছোট ছেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।

দুপুরে ফারুকের পরিবার ও এলাকাবাসী ছুটে যান পৌর মেয়র মিজানুর রহমানের কাছে। তারা বিষয়টি খুলে বললে পৌর মেয়র মিজান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যার সঙ্গে কথা বলেন।

পরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা হাসপাতালে ফারুকের মরদেহ দেখতে যান। তিনি পরিবার সদস্যদের আশ্বস্ত করেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, যতটুকু শুনেছি ফারুক লোক হিসেবে খারাপ ছিলেন না। ঋণসহ দুটি মামলা ছিল। তাকে মারধর করেনি পুলিশ।

তিনি আরো জানান, ফারুকের বুকে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। পালানোর সময় পায়ে ও হাতে আঘাত পেয়েছিলেন। তারপরও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. মিজানুর রহমান মিজান জানান, মরদেহ দেখে মনে হচ্ছে আঘাতের কারণেই মৃত্যু হয়েছে।

সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মিথুন রায় বলেন, আঘাতের নমুনায় বলছে আঘাতের কারণে মৃত্যু নাও হতে পারে। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে না।

ফারুকের ভাই মতিন জানান, তার ভাইয়ের পায়ে ও বুকে আঘাতের চিহ্ন আছে। ফারুক মিয়ার হৃদরোগসহ জটিল কোনো রোগ ছিল না বলেও তিনি জানান।