বাহুবলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

বাহুবলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩

হবিগঞ্জ, ১৬ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : বাহুবলে স্ত্রী-সন্তানের সাথে ঈদ করা হলো না প্রবাসী নাছির উদ্দিনের। প্রবাস থেকে বাড়ি ফেরার পথে ঘাতক বাস চাপায় তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে রিসিভ করতে আসা সহোদরসহ দুর্ঘটনায় আরো ৫ জন গুরুতর আহত হন। পরে আহত আব্দুল্লাহ (৪০) নামে অপর একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

বুধবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবল সদর সংলগ্ন মোহনা কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে।

আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার অপর এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিলীমা আক্তার (৭) নামে এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে।

উপজেলার চন্দনিয়া গ্রামের নছর উদ্দিনের পুত্র প্রবাসী নাছির উদ্দিন বিগত ১২ বছর ধরে দুবাইয়ে কর্মরত ছিলেন। তিন সন্তানের জনক নাছির প্রতি ২/৩ বছর পরপর ছুটিতে দেশে আসেন এবং স্বজনদের সাথে সময় কাটান। এ বার ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে তিনি দেশে স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আসেন। বুধবার দুবাই থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে একটি ফ্লাইটে রওনা হন। তার সহোদর ইছার উদ্দিনসহ কয়েকজন তাকে রিসিভ করতে সিলেট বিমানবন্দরে যান। রাতে নাছির উদ্দিন সিলেট বিমানবন্দরে নামেন। স্বজনরা তাকে রিসিভ করেন। পরে সিলেট থেকে তারা যাত্রীবাহী বাসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পথে রওনা হন। রাত পৌঁনে ১২টায় তারা বাহুবল উপজেলা সদরের মৌচাক পয়েন্টে নেমে একটি সিএনজি অটোরিকশাযোগে বাড়ির পথে রওনা হন। সিএনজি অটোরিকশাটি কয়েকশ ফুট দূরবর্তী মোহনা কমিউনিটি সেন্টারের কাছে পৌঁছামাত্র পিছন দিক থেকে আসা দ্রুতগামী শ্যামলী পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৫১৩২) একটি বাস যাত্রাবাহী ওই সিএনজিকে চাপা দেয়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস ও সিএনজি দুটোই পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে গেলে প্রবাসী নাছির উদ্দিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

এ ঘটনায় আহত হন নিহত নাছির উদ্দিনের সহোদর ইছার উদ্দিন (৩০), একই উপজেলার বালিচাপড়া গ্রামের আছদ উল্লাহর পুত্র নুরুল্লাহ (৪৬), হাবিজপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র সেলিম মিয়া (৪০), হরিতলা গ্রামের মুনছব উল্লার পুত্র আব্দুল্লাহ (৪০) ও একই গ্রামের এরাজত উল্লাহর পুত্র সিএনজি চালক শফিক মিয়া (৪০)। আহতদের তাৎক্ষণিক বাহুবল ও পরে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে, প্রবাসী নাছির উদ্দিনকে কাছে পাওয়ার জন্য উদগ্রীব পরিবারের সদস্যদের কাছে মিনিট দশেকের মধ্যেই মৃত্যু সংবাদ পৌঁছে যায়। আনন্দে আত্মহারা পরিবারটিতে নেমে আসে রাজ্যের শোক। রাতের নিরবতা ভেঙে শুরু হয় স্বজন হারানো আর্তনাদ। নিমিষেই ভারী হয়ে ওঠে এলাকার আকাশ-বাতাস।

বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় আহত আব্দুল্লাহ (৪০) মৃত্যুবরণ করেন। নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। চালক পালিয়ে গেলেও ঘাতক বাসটি আটক রয়েছে।

অপর দিকে, বৃহস্পতিবার মহাসড়কে দ্বিগাম্বর বাজারের অদূরে কালীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অপর এক সড়ক দুর্ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী নিলীমা আক্তার (৭) নিহত হয়। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা ২ ঘন্টারও বেশি সময় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। নিহত নিলীমা আক্তার উপজেলার হাজীমাদাম গ্রামের খোয়াজ উল্লার কন্যা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় স্কুল ছুটির পর ছাত্রী নিলীমা আক্তার মহাসড়ক পারাপারের সময় সিলেটের দিক থেকে আসা ‘লণ্ডন এক্সপ্রেস’-এর একটি যাত্রীবাহী বাস তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই শিশু নিলীমার মৃত্যু হয়। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে উভয় পার্শ্বে শতশত যানবাহন আটকা পড়ে। দুপুর ২টার পর বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী ও বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধ তোলে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৬৪০ঘ.)