জাতীয় স্বার্থে পদত্যাগ করুন: ঢাবি উপাচার্যকে ছাত্র ইউনিয়ন

জাতীয় স্বার্থে পদত্যাগ করুন: ঢাবি উপাচার্যকে ছাত্র ইউনিয়ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য আখতারুজ্জামান মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘জাতীয় স্বার্থেই ক্যাম্পাসের গাছ কাটা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে মেট্রোরেলের স্টেশন তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।’ এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা বলেন, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন এই উপাচার্যের পদত্যাগ।

মঙ্গলবার ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ ও সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে প্রতিদিন শত শত রোগীর স্যাম্পল বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের শনাক্তকরণের কাজ চলছে, আর তার ঠিক নিচেই চলছে এরকম একটি অস্বাস্থ্যকর নির্মাণ কাজ। এই উপাচার্য বারবার প্রমাণ করেছেন, তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থ, গবেষণার স্বার্থের থেকে সরকারের পদলেহনই মুখ্য।’

বিবৃতিতে বলেন, আজ উপাচার্য যেই জাতীয় স্বার্থের কথা বললেন, তিনি পদে থাকা অবস্থাতেই গণরুম সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে, গবেষণায় বরাদ্দ কমেছে, শক্তিশালী হয়েছে হলের ওপর সন্ত্রাসীদের দখলদারিত্ব। অথচ এসব সমস্যা তিনি সমাধান না করে একের পর এক অর্থহীন কথা বলে লোক হাসিয়েছেন বিভিন্ন সময়। তিনি যদি সত্যিকার অর্থেই জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করতেন তবে বহু আগেই পদত্যাগ করতেন।

তারা আরো বলেন, শিক্ষার মান হওয়া উচিত আমাদের দেশের জন্য ফার্স্ট প্রায়োরিটি। আমরা যখন বাজেটের ১৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের কথা বলি, তখন উপাচার্যের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না। আমরা দেখতে পাই, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের উপাচার্য শিক্ষাখাতের দুরবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই উপরন্তু একটা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দায়দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন।

তারা আরও বলেন, ডাকসু বা প্রশাসন কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বাস্তু সংকট নিরসন করতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় ১০ হাজার উদ্বাস্তু মানুষ বাস করে। তারা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত করে, জড়িয়ে পড়ে ছিনতাইয়ের সঙ্গে। টিএসসিতে একটি স্টেশন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্বাস্তু ও ভাসমান মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে। অপরদিকে কমবে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা।

বক্তব্যের শেষে বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, করোনাভাইরাস দেশে জাতীয় স্বার্থে করা সব তথাকথিত উন্নয়নের গোমর ফাঁস করে দিয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয় বরং চিন্তা-চেতনা এবং মানবিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নই এখন প্রধান জাতীয় স্বার্থ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা হলেই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা হবে। যদি উপাচার্য স্যার আসলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ রক্ষা করতে চান, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে চান তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যে স্টেশন করা হচ্ছে তা সরানোর উদ্যোগ নিন। আর যদি সরকারের দালালিকেই নিজের কাজ মনে করেন, তবে মনে রাখবেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় দালালদেরকে সবসময় ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলেছে। ইতিহাসকে ভুলে যাবেন না।