তথ্য গোপন করে জনগণকে ঝুঁকিতে ফেলেছে বাংলাদেশ সরকার: রাষ্ট্রদূত মাইলাম

করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে তথ্য গোপন করার প্রবণতা বাংলাদেশকে ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদুত এবং উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার উইলিয়াম বি মাইলাম।

মহামারি মোকাবেলায় পূর্ণ স্বচ্ছতা জরুরি। আর সরকার তা না করে দেশের মানুষদের এক বিপর্যয়ের মধ্যে আবদ্ধ করেছে বলেও মন্তব্য করেন ওয়াশিংটন ভিত্তিক রাইট গ্রুপ, রাইট টু ফ্রিডমের এই প্রেসিডেন্ট।

বুধবার বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে জাস্ট নিউজ সম্পাদক ও রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাইলাম এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। বর্ষীয়ান এই কূটনৈতিক তাঁর দেয়া সাক্ষাতকারে কথা বলেন মহামারির পূর্ব অভিজ্ঞতা আর তখনকার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নিয়েও। জোর দেন মহামারিরা মোকাবেলায় সতর্কতা, কী ঘটছে সেসব তথ্যের অবাধ স্বচ্ছতা আর মুক্তমতের গুরুত্বের উপর। কথা বলেন কঠিন এ মুহূর্তে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ট্রাম্প প্রশাসনের আনাড়িপনা নিয়েও।

বাংলাদেশের মহামারি প্রস্তুতির দৈন্যদশা ছাড়াও কথোপোকথনে উঠে আসে গণমাধ্যম, মানবাধিকার দলন আর সাম্প্রতিক সাত পশ্চিমাদূতকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বাকযুদ্ধের প্রসঙ্গও।

জাস্ট নিউজ পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের অনুবাদ তুলে ধরা হলো:

মুশফিক: স্বাগত জানাচ্ছি রাইট টু ফ্রিডম প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দূত এবং উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার উইলিয়াম বি মাইলামকে। কেমন আছেন আপনি?

মাইলাম: আমি ভালো আছি। আবারো আপনাকে পেয়ে আনন্দিত।

মুশফিক: আমার ধারণা আপনি বাড়িতে থাকার আদেশ পালন করছেন। কেমন কাটছে আপনার দিনগুলো?

মাইলাম: হ্যাঁ। আমি এটাই করছি। সামাজিক দূরত্ব মানছি। খুব বেশী একটা বাইরে বের হচ্ছিনা। হাঁটার জন্য দিনে একবারের বেশি বের হইনা। জুম মিটিংএ অংশ নিচ্ছি। সঙ্গে জুমে কথা বলে অনেক সময় কাটাচ্ছি। এই যেমন এখন আপনাকে সঙ্গ দিচ্ছি। আজই মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক একটি আলোচনায় জুমের মাধ্যমে অংশ নিয়েছে এছাড়া বই পড়ে আর লিখেও ভালো একটা সময় পার করছি। করোনাভাইরাস এসে ঘরের মধ্যে কাজগুলোকে বাড়িয়ে দিয়েছে। যেটা এ পরিস্থিতি না থাকলো হতো এমনভাবে হতো না। যাই হোক ভালো আছি। সুস্থ থাকার চেষ্টা করছি যেটা এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ।

মুশফিক: যে মুর্হূতে আমরা করোনাভাইরাস নিয়ে কথা বলছি তখন বিশ্বজুড়ে এ মহামারিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে আর আক্রান্ত হয়েছে ৪০ লাখেরও বেশি আক্রান্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রই সবার উপরে অবস্থান করছে? যুক্তরাষ্ট্রে মহামারির অবস্থাটা এতোটা নাজুক কী করে হলো?

মাইলাম: এর অন্যতম কারণ আমি যেটা বলবো সেটা হলো- আমরা পৃথিবীর বৃহৎ দেশগুলোর মধ্যে একটি। আফ্রিকা এবং ভারতের পরই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। প্রাথমিকভাবে এর পেছেন যে কারণটা রয়েছে সেটা হলো আমাদের সরকারের এ নিয়ে কোনো ধরণের প্রস্তুতিই ছিলোনা। সরকার ছিলো সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত আর ব্যর্থ। কোভিড-নাইনটিন ছড়িয়ে পড়ার শুরুর মাসগুলোতে যেভাবে সাড়া দেবার কথা ছিলো সরকার সেভাবে পারেনি। এখানে জনসংখ্যা একটা ইস্যু হলেও বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা খুবি দুর্ভাগ্যজনক। কারণ দেশটা এখন খুব দক্ষ প্রেসিডেন্ট বা প্রশাসন ধারা চালিত হচ্ছেনা।কথাটা শুনতে অনেকটা পক্ষপাতদুষ্ট মনে হতে পারে। কিন্তু এমনটাই ঘটেছে বলে আমি মনে করি।

মুশফিক: জনস হপকিন্সের পরিসংখ্যান মতে বুধবার মৃতের সংখ্যা ৮৩,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।
মাইলাম: হ্যাঁ। আমিও খবরটা জেনেছি।

মুশফিক: আপনার কি এমনটা মনে হয়- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন এর ভয়াবহতা নিয়ে শুরুর দিকে সন্দিহান ছিলো?

মাইলাম: তার এ বিষয়ে তাদের মধ্যে কতটা সন্দেহ ছিলো এটা নিয়ে আমি খুব একটা নিশ্চিত না। তবে আমার ধারণা এ বিষয় নিয়ে সন্দেহের ভিতরেই ছিলো। প্রেসিডেন্ট নিজেই বলেছিলেন তিনি এটার কার্যকরিতা নিয়ে বিশ্বাস করেন না। তাকে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছিলেন এই বলে যে-সামনে খারাপ একটা কিছু আসছে, আমাদেরকে তার জন্য তৈরি হওয়া উচিত। প্রস্তুতি নেয়া দরকার। প্রেসিডেন্টতো এ বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে কীভাবে পুনরায় নির্বাচিত হবেন সেটা নিয়েই বেশী আগ্রহী ছিলেন। রাজনীতির বদলে এ মুহূর্তে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের নিরাপদ জীবন আর নিরাপত্তাটাকে বেশী প্রাধান্য দেবার দরকার ছিলো।

মুশফিক: বর্তমান সময়ের এই মহামারীর সঙ্গে পৃথিবীর ঘটে যাওয়ার অন্য মহামারীর মধ্যে আপনি কী ধরনের তফাত দেখতে পান?

মাইলাম: এটা খুবি অসাধারণ একটা প্রশ্ন করেছেন। আপনার এরকম বিষয়গুলোতে খুব ভালো একটা আগ্রহী দেখছি। বড় ধরণের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সম্পৃত্ত ব্যক্তিদের লক্ষণ এটা, যেটা আপনার মাঝে দেখছি। এ বিষয়টা আমি আনন্দ বোধ করছি।..এ ধরনের প্যানডেমিক আমরা গত ৫০ বছরে দেখিনি। এরকম একটা প্যানডেমিকের মুখোমুখি হয়েছিলাম। তাতে এতো বেশি করে মানুষ মারা যায়নি। এটা ১৯৫৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রান্ত করে, যার সাক্ষী আমি। এক ভয়াবহ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, বিছানায় পড়েছিলাম ৩ সপ্তাহ। আমি ছিলাম স্টুডেন্ট, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বর্ষে ছিলাম। আমি এতোটাই অসুস্থ ছিলাম যে কোনো কিছু করার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি তখন ডাক্তার দেখাই। তিনি ছিলেন স্ট্যানফোর্ড হাসপাতালের। তিনি বললেন-তুমি খুবি অসুস্থ বাসায় ফিরে যাও। আমি তোমাকে হাসপাতালেও রাখতে পারছিনা যেহেতু কোনো বেড খালি নেই। সাথে করে কিছু ঔষুধের পিল দিলেন। স্ট্যানফোর্ড হাসপাতাল তখন অন্য শিক্ষার্থীদের দ্বারা ভর্তি ছিলো। সময়টা আমার খুব ভালো করেই মনে পড়ে কারণ এমন অসুস্থ কখনোই হইনি। খুব বিপর্যের মাঝে তিনটি সপ্তাহ কাটিয়েছি। শেষমেষ সুস্থ হয়ে উঠি। আর ভালো একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সে ব্যাঘাত ঘটে। পড়াশোনার এ ঘাটতি অবশ্য কাটিয়ে উঠেছি।

এরপর আরেকটা বড় মহামারি আসে ১৯১৮ সালে। এখন যে মহামারি চলেছে সেটা এর চেয়ে আরো ভয়াবহ ছিলো। মহামারিটাকে স্প্যানিশ ফ্লু বলা হয়। সবাই মনে এটার উৎপত্তি হয়েছিলো স্পেনে। আসলে কিন্তু তা নয়। এটার শুরু যুক্তরাষ্ট্রে। আপনি কী জানেন?

মুশফিক: না। জানতাম না।

মাইলাম: এটা ক্যানটাকিতে শুরু হয়েছিলো। এই সময়টাতে বিশ্বযুদ্ধ চলছিলো। সব ইউরোপীয়ান দেশগুলো সে সময় স্পেনে লড়ছিলো। সব দেশ এতে জড়িয়েছিলো। চার লাখের মতো মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিলো। স্পেন সে সময় যুদ্ধে জড়িত ছিলোনা। তারা ছিলো নিরপেক্ষ। হাজার হাজার সেনা জাহাজে করে যোগ দিচ্ছিলো, তার ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছিলো। সেনারা যখন দেশে ফিরছিলো তখন পুরো ইউরোপে তা ছড়িয়ে পড়ে। তখন ফ্লুটি যুক্তরাষ্ট্রকে আরো বেশি আক্রান্ত করে। আমি এই প্যানডেমিকটি নিয়ে পড়াশোনা করেছি। করোনা ভাইরাসের মতোই ঐ ভাইরাস প্রতিরোধে মানুষের জন্য কোনো সুরক্ষা ছিলোনা। এটা খুব দ্রুত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছিলো। এখন আমরা যে ব্যবস্থা নিয়েছি, তখনো সে ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছিলো। এটার জন্য কোনো ধরণের ঔষুধ বা ভ্যাকসিন ছিলোনা যেমনটা এখন দেখছেন। প্রথম ধাপের সংক্রমণ শেষে দ্বিতীয় ধাপে ইউরোপে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছিলো। সেসময় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা , স্কুল-কলেজ বন্ধ করা, সভা-সমাবেশ বন্ধ করা এবং সবাইকে বাড়িতে অবস্থানের কথা বলা হয়েছিলো। তখনো শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়, আর তাতে আক্রান্ত, মৃত্যুর হার এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে উদ্ধার হওয়াসহ বেশ কিছু সুফল পাওয়া গেলো। চিকিৎসাগত এই পদ্ধতিগুলো কার্যকর প্রমাণিত হয়। পদ্ধতিগুলো গ্রহণের এক পর্যায়ে সময়ের ব্যবধানে শহরগুলো উন্মুক্ত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বিশেষজ্ঞ এখন আছেন তারা এ বিষয়টি নিয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন, যেমন চিকিৎসাগত পদ্ধতি এবং শহরগুলো উন্মুক্ত করার বিষয়ে।

সবচাইতে বড় যে মহামারী হয়েছে, যেটা নিষ্ঠুুরতম মহামারী, সেটা হলো ১৪ শতকের প্ল্যাগ মহামারি। এটা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার চার ভাগের তিনভাগ মানুষকে হত্যা করে। এ মহামারি পুরো ইউরোপকেই বিভিন্নভাবেই বদলে দিয়েছিলো। বিশেষ করে প্রভাব পড়েছিলো কর্মজীবি মানুষদের ক্ষেত্রে।

মুশফিক: আমরা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ফিরতে চাই। দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে আপনার অনেক অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। দেশটি এখন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্য সবচাইতে বেশি ঝুঁকিতে আছে। বর্তমান সরকার মহামারির শুরুর দিকে বিষয়টা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায়নি। তারা ব্যস্ত ছিলো মুজিববর্ষ উদযাপনকে ঘিরে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা মহামারি নিয়ে তথ্য গোপন করেছে। আর যারা বিষয়টির গুমর ফাঁস করে দিতে চেয়েছে উল্টো তারাই আক্রান্ত হয়েছে । এখন একটা চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। লোকজন হাসাপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পাচ্ছেনা। পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে লোকজন ধুঁকছে, মারা যাচ্ছে। এমনকি তারা খাবার এবং ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে এই সংকটেও ক্ষমতাসীন দল ত্রাণের সামগ্রীও লুট করছে। বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট প্রতিবেদনও করেছে। দারিদ্রতা এবং বেকাত্ব সেখানে ক্রমেই বাড়ছে যেমনটা বিশ্বের অন্য জায়গাতেও হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিস্থতিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

মাইলাম: বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আপনার সঙ্গে আমার অনেক কথা হয়েছে। যতটুকু সুযোগ হয়েছে ততটুকু জেনেছি। এ বিষয়ে আপনার কাছে যে তথ্য বা জানাশোনা রয়েছে তেমনটা হয়তো আমার নেই। তবে আমার মনে হয়, যখন দেশের মানুষের করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শুরু হয় অর্থাৎ শুরু দিকের কথা, বাংলাদেশ সরকার জনগণের থেকে তথ্য লুকিয়ে রেখেছে। ১৯১৮ সালের মহামারি থেকে আমরা যেটা শিখেছি সেটা হলো-সবার আগে দরকার সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা। মহামারি মোকাবেলায় সহযোগিতার একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো স্বচ্ছতা। জনগণকে জানতে হবে তারা কি মহামারিতে থেকে বাঁচতে কি করতে পারবে আর কি পারবেনা।

আমার ধারণা সরকার জনগণকে যে তথ্যগুলো দেবার দরকার ছিলো তা দেয়নি। তারা বিষয়টিকে মোটেও আমলে নেয়নি যেমনটা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রথমত আমরা যে জিনিস দেখছি তা হলো পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে করোনা আক্রান্ত হবার পর কি ঘটছে তার সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি খেলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ একটি গরীব দেশ। আমি জানিনা করোনা মোকাবেলায় সবচাইতে ভালো ভূমিকা কোনটি হবে। তবে যেটা দরকার সেটা হলো স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা। মানুষের গণ সমাবেশ বন্ধ করতে হবে। কারণ এ মহামারি একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। আমি জানিনা বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে তারা এটা কিভাবে করবে। এটা আমাদের দেশে সহজ। তবে তাদের জন্য আমি দরদ অনুভব করি। বাংলাদেশের লোকজন ভালো নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

মুশফিক: বাংলাদেশ সরকার ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশনের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স ভাব দেখাচ্ছে।
মাইলাম: আমি এটা জানি।

মুশফিক: সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। এর সঙ্গে নতুন করে আদেশ জারি করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মুক্তমত দমন করার জন্য। এই মহামারির সময়েই ১৬ টি মামলা হয়েছে শতাধিক মানুষের বিরুদ্ধে যার মধ্যে ২২ জন সাংবাদিক রয়েছে। আর মামলাগুলো জানুয়ারির প্রথম থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে। এ তথ্য দিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আর্টিকেল নাইনটিন। আপনি জানেন যে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলায় পশ্চিমা দূতদের নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস টুইটারে এ নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আর তার জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বিষয়টিকে হতাশাজনক এবং অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি উল্টো যুক্তরাষ্ট্র গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন। জার্মানির ডয়েচে ভ্যালেকে দেয়া সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে বাক স্বাধীনতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন। বিষয়টা আপনার কাছে কী মনে হচ্ছে? আপনিও কি তাই মনে করেন?

মাইলাম: অবশ্যই আমি এ মতের সঙ্গে একমত হতে পারিনা। প্রথম কথা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের প্রতিপক্ষ বানিয়ে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এখানে গণমাধ্যম খুবি মুক্তভাবে কাজ করছে। তারা প্রশাসনের কড়া সমালোচকের ভূমিকাও রাখে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের প্রেস রিলিজগুলোকে আমরা সরকার বান্ধব বলতে পারি। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একমত হতে পারছিনা। কারণ বাংলাদেশে মুক্তমত আর মানবাধিকার ভয়ংকর রকমের পরিস্থিতি রয়েছে। বিষয়টা আমাকে খুব পীড়িত করে। প্রাসঙ্গিক তথ্য না জেনেতো আপনি করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে পারবেননা। জনগণকে সে তথ্য জানতে হবে।

মুশফিক: শুধু সাংবাদিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন তা কিন্তু না। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের মতামত ব্যক্ত করছে। সরকার এ ছোটখাটো মতগুলোকেও সহ্য করতে পারছেনা। আমাদের অনেক সাংবাদিক এবং সহকর্মী এখন জেলে। একজন ফেসবুকে পোস্ট দিলো, সরকারের ভালো লাগেনি। পরদিনই পুলিশ তাকে বাসা থেকে তোলে নিয়ে আসে। মহামারির সময়েও এটা ঘটছে যেটা দুর্ভাগ্যজনক।

মাইলাম: এটা খুবি খারাপ নজির। সবকিছুর পরেও যেটা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো-বাংলাদেশের মানুষ করোনায় যেমন আক্রান্ত হচ্ছে তেমনি আর্থিকভাবেও তারা ক্ষতির মুখোমুখি। বাংলাদেশের রপ্তানি থেমে গেছে, অনেক লোক তাদের চাকরি হারাচ্ছে। এ কঠিন সময়ে তাদের মুক্তমত বিশেষ করে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই অপ্রত্যাশিত।

মুশফিক: মহামারির পরের দৃশ্যপট কেমন হবে বলে মনে করেন? এ মহাবিপর্যয়ের পর পৃথিবীর অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে?

মাইলাম: মহামারির পূর্বের পৃথিবী পরে একিরকম হবেনা। শংকা করার মতো অনেকগুলো কারণ আছে। আমাদের অর্থনীতিতে একটা খরা দেখা দিবে। আর সেটা উন্নতি ঘটবে খুব ধীর গতিতে। এটা অনেক দেশেরই অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিবে। বাংলাদেশের যেসব দেশ রয়েছে তারা তাদের রপ্তানি বাণিজ্য হারাবে। খুব দ্রুত তা ফিরে পাবার সম্ভাবনা নেই। আমি চাইনা সত্যিকার অর্থে এমনটা হোক। তবে এটা একটা সম্ভাবনা। মহামারি পরবর্তী ধাক্কাটা খুবি অস্পষ্ট। তবে আমরা যেটা আশা করতে পারে সেটা হলো এই ভাইরাস মোকাবেলায় যত দ্রুুত পারা যায় ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা। এটাই হওয়া উচিত। দক্ষিণ এশিয়ায় কি হতে যাচ্ছে তা আমি জানিনা। তবে বাংলাদেশ এবং ভারতে যে চিত্র দেখতে পাচ্ছি তা হলো করোনা এখনো সংক্রমিত হচ্ছে সেখানে।

মুশফিক: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের এরকম আলোচনা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
মাইলাম: মুশফিক আপনাকেও ধন্যাবাদ। খুব ভালো প্রশ্ন করতে পারেন আপনি!
মুশফিক: ধন্যবাদ।

জিএস/