রাইট টু ফ্রিডমের ভার্চুয়াল আলোচনায় মাইলাম, শহীদুল, ড. জিয়া ও সাব্রিয়া

রাস্তায় ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার, বিশ্বব্যাংকের ১০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্ধ, বিপর্যয়ের কারণ মানবসৃষ্ট

রাস্তায় ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার, বিশ্বব্যাংকের ১০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্ধ, বিপর্যয়ের কারণ মানবসৃষ্ট

করোনাভাইরাসের মতো বৈশ্বিক মহামারিতে যখন মানুষ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে তখনো ক্ষমতাসীনদের কাছে ‘দল রাজনীতি’ই প্রাধান্য পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও লেখক শহীদুল আলম।

তিনি বলেন, ‘মহামারিতে যেখানে সরকার বা বড় সংস্থাগুলোর অগ্রণী ভূমিকা রাখা দরকার সেখানেও বিপদে সাড়া দিতে প্রথমে অগ্রসর হয়েছে এদেশের ছোট ছোট অনেক সংস্থা আর সাধারণ মানুষের ব্যক্তি উদ্যেগ।’

মহামারি প্রেক্ষাপটে শাসকগোষ্ঠীগুলোর দলীয় স্বার্থ রক্ষার বিষয়টির কড়া সমালোচনা করে শহীদুল আলমের মতোই অনেকটা একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার ও রাইট টু ফ্রিডম’র প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম।

মাইলাম বলেন, ‘বিশ্বে এই মহামারিতে অনেকেই দলীয় ইস্যুকে বড় মনে করছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার করোনা সংকটের কোনো সমাধান বের না করে দলের ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভ্যাকসিন না পাওয়া পর্যন্ত আশার আলো দেখছি না। ক্ষয়-ক্ষতি যা হচ্ছে তার পেছনে প্রাথমিকভাবে রয়েছে মানবসৃষ্ট অনিয়ম। দায়টা সমাজব্যবস্থার দলকানা রাজনীতির।’

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র নিউট্রিশন স্পেশালিস্ট ও পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ ড. জিয়া হায়দার বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড নাইটিন মোকাবিলায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্ধ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আক্রান্ত দেশগুলোর পাশে দাঁড়াতে ইতোমধ্যে ১৪ বিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এই বিশ্ব অর্থনৈতিক সংস্থা।’

রাইট টু ফ্রিডম’র পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম সদস্য ও লেখিকা সাব্রিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অনির্বাচিত সরকারের দ্বারা শাসিত হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে এক স্বৈরাশাসকের কর্তৃত্বে চলছে বাংলাদেশ। মহামারির সময়েই সরকার মানবাধিকার লংঘন করে যাচ্ছে। এসময়ে মানুষ গ্রেফতার হচ্ছে, গুম হচ্ছে।’

করোনাভাইরাস ইস্যুতে বিশ্ব পরিস্থিতি, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, মুক্তমত-মানবাধিকার, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং করোনা ভ্যাকসিনসহ নানান ইস্যুতে ওয়াশিংটন ভিত্তিক রাইট গ্রুপ- রাইট টু ফ্রিডম’র এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এমন অভিমত তুলে ধরেন আলোচকরা।

সঞ্চালনায় ছিলেন জাস্ট নিউজ সম্পাদক ও রাইট টু ফ্রিডম’র নির্বাহী পরিচালক মুশফিকুল ফজল আনসারী।

জাস্ট নিউজ পাঠকদের জন্য সমকালীন বিষয় প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এই আলোচনার বাংলায় ভাবানুবাদ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে করোনা মোকাবেলায় স্বচ্ছতার বিষয়টি নিশ্চিতের গুরুত্ব তুলে ধরে টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব শহীদুল আলম বলেন, ‘কোভিড-নাইনটিন মোকাবিলায় যে জিনিসটার ঘাটতি রয়েছে সেটা হলো স্বচ্ছতা। জনগণের জানার অধিকার আছে, সরকারের উচিত জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। এস্তরে স্বচ্ছতাগুলো ফিরিয়ে আনা জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক যখন চাল চুরি কিংবা অন্য যেকোনো অনিয়ম নিয়ে লিখছে তাদের শেষ পরিণতি হচ্ছে জেল। সম্প্রতি এই কারণে দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে সরকাররে কােভিড-নাইনটিন মনিটরিং সেল। তাকে রাখা হয়েছে বহু সংখ্যক কয়েদিতে ঠাসা জেলকক্ষে। এটা এমন একটা সময়ে ঘটছে যখন আমরা আইসোলেশনের পরামর্শ দিচ্ছি।’

রাস্তায় লোকজন সাহায্য খুজেঁ বেড়াচ্ছে- দেশের এমন করুণ চিত্র উল্লেখ করে শহীদুল বলেন, ‘সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ে আম্ফানের হানা আমরা দেখেছি। এক ফটোসাংবাদিকের তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে লোকজন পানিতে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ পড়ছে। একজন মন্ত্রীতো বলেই দিয়েছেন দেশের একজন মানুষও ক্ষুধার্ত নয়। আমি যখন কথা বলছি এখানে রাত ১০ টা বাজে। লোকজন রাস্তায় খাবারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। আসলে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম করোনায় মৃত্যুর রিপোর্ট পেলাম ১৮ মার্চ। জনগণ এখন এটা জানে কেনো তা ১৭ মার্চ পরে জানার সুযোগ হলো। আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম। তিনি জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ডিসেম্বরে তিনি মিটিং করেছেন।কী পরিকল্পনা নেয়া উচিত, কী ঘটতে পারে এসব নিয়ে আলোচনা হয়। যদি মিটিংটা ডিসেম্বরে হয়ে থাকে তাহলে মার্চের মাঝামাঝি সময়ের আগে আমরা কোনোকিছুই জানতে পারলাম না? এটা আসলেই অদ্ভূত।’

মানুষের মারা যাবার মতো সময়েও সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতি প্রাধান্য পাচ্ছে মন্তব্য করে শহীদুল বলেন, ‘সম্প্রতি ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটা একটা পুরনো হাসপাতাল। অনেক হাসপাতালে কােভিড-নাইনটিন সেবা চালু হয়েছে। কিন্তু আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা তাতে রাখা হয়নি। পাঁচজন মারা গেলো। আমরা যেটা করছি সেটা জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে নয় করছি ব্যবসার কথা মাথায় রেখে। গণস্বাস্থ্য একটি টেস্ট কিট আবিষ্কারের কথা বলেছে সেটার কার্যকরিতা পরীক্ষা করার জন্য সরকার কালক্ষেপণ করছে। যা খুবই হাস্যকর। দ্রুতগতি দেখছি রেমিডিসিভির ঔষুধের ক্ষেত্রে। আমরা যারা যাচ্ছি এখানেও রাজনীতি।’

দেশের সংকটের মধ্যে কিছু আশার দিক রয়েছে মন্তব্য করে শহীদুল বলেন, ‘অনেক ভালো কাজো কিন্তু আমরা দেখছি। অনেকগুলো সংস্থা এগিয়ে এসেছে, তারা একে অপরকে সাহায্য করছে। এগিয়ে এসেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। যেখানে সরকার বা বড় সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসা দরকার সেখানে ছোট ছোট সংস্থা এবং মানুষ ব্যক্তি উদ্যেগে এগিয়ে এসেছে, অসাধারণ সব ভূমিকা রাখছে।’

হীন দলান্ধতা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে ভুগাচ্ছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত মাইলাম বলেন, ‘বিশ্বে এই মহামারিটা অনেকে দলীয় ইস্যু বানিয়ে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এটার সমাধান বের না করে দলীয় ইস্যুতে পরিণত করেছে। অন্য ইউরোপীয় দেশে করেনা মোকাবিলায় যে সুবিধা দেয়া হচ্ছে, ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে যা করা হচ্ছে সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে, আমি বলবো ১০ বছর পেছনে।কত কয়েক বছর ধরে যে দলীয় প্রশাসন দেশ চালাচ্ছে তাদের দলান্ধতায় পুরো দেশবাসী ভুগছে। আমার মনে হচ্ছে করোনার একটা দ্বিতীয় ধাক্কা সামাল দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভাইরাসটি দেশের পূর্ব-পশ্চিমে হানা দিয়েছে কিন্তু মধ্যখানটা মুক্ত ছিলো। যেহেতু ভাইরাস ছড়িয়েছে, আর এটির কোনো পাসপোর্ট লাগেনা, তাই টেক্সাস এবং পশ্চিমের অঙ্গরাজ্যগুলো আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশী।১৯১৮ মহামারির সময়টাতে প্রশাসনের স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিলো। তখন ১৯১৮-২০ এ সময়টাতে ১ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলো।ভ্যাকসিন না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আশার আলো দেখছি না। ক্ষয়-ক্ষতি যা হচ্ছে তার পেছনে প্রাথমিকভাবে মানবসৃষ্ট অনিয়ম বেশী দায়ী। সমাজব্যবস্থার দলকানা রাজনীতিটা এর পেছনে দায়ী।’

মহামারিতে নিম্ন আয়ের লোকেরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী মন্তব্য করে শহীদুল বলেন, ‘যাদের কোনো ঘর-বাড়ি নেই, সঞ্চয় নেই, যাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই এসব লোকদের প্রয়োজনকে আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে। প্রণোদনা প্যাকেজ যেটা ঘোষণা দেয়া হয়েছে তাতে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে পােশাক কারখানা মালিক আর ব্যবসায়ীদের। যারা খাবারের জন্য রাস্তায় তারা কোনাে অর্থ সহযোগিতা পাচ্ছেনা। আগাম কোনো স্বাস্থ্য উপকরণের প্রস্তুতি ছিলোনা। আমার মনে হয় এ সমস্যাগুলো আমরা সমাধানা করতে পারতাম। এটা এখনো সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য প্রথম দিন থেকে বলেছিলো তারা করোনা শনাক্ত করণে সহায়তা করতেই টেস্ট কিট বানিয়েছে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এর কার্যকরিতা এখনো পরীক্ষা করা হয়নি। অথচ জনগণের এটা খুবি প্রয়োজন।’

বিশ্বে কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রসঙ্গ এনে মাইলাম বলেন, ‘যদি কতৃত্ববাদী শাসনের কথায় আসি তাহলে সেটার নজীর পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে আছে। বাংলাদেশে যেমন শাসকদের কতৃত্ববাদীতা রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে কম্বোডিয়াতেও। এখন ভাইরাস মোকাবেলায় শাসকগোষ্ঠীরা কেমন করছে যদি সে প্রসঙ্গে আসি তাহলে ডা.জিয়ার কথাকে সমর্থন জানিয়ে বলতে হয় এটি নিয়ন্ত্রণে ভালো সফলতা দেখিয়েছে কম্বোডিয়া। সে তুলনায় বাংলাদেশের চিত্রটা খুবি খারাপ। করোনা মোকবেলায় কতৃত্ববাদী দেশগুলো যদি সফলতা পেয়েও থাকে তবে সেটা এক সাময়িক সুফল। দীর্ঘ মেয়াদের কথা ভাবলে জনগণের কতৃত্ববাদী শাসন থেকে বের হওয়া প্রয়োজন।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে আমি অনেক অধ্যয়ন করেছি, ১৯১৮ সালের বৈশ্বিক মহামারির পরিস্থিতি দেখেছি। সবচাইতে বেশি জরুরি হলে রাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা। বাংলাদেশ সরকার কাজের দিক থেকে স্বচ্ছ নয় যেটুকু জানি, কম্বোডিয়া কতটা স্বচ্ছতার প্রমাণ দিচ্ছে সেটাও জানা প্রয়োজন।’

মাইলাম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আর কথা বলতে ইচ্ছে হচ্চেনা। খুব ধনী দেশ হবার পরও করোনা মোকাবেলায় আমরা যেটা করেছি সেটা খুবি খারাপ নজির।’

মতপ্রকাশের বাধা প্রসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রসঙ্গ তোলে ধরে শহীদুল বলেন, ‘মতপ্রকাশ বিষয়টা নিয়ে দেশ প্রেক্ষাপটে যেমন কথা রয়েছে তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের কথাও বলা যায়। মতপ্রকাশে বিভিন্ন দেশের বেহাল অবস্থার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু ভূমিকা রয়েছে। যদি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে দেশটির ভূমিকা, গুয়েন্তানামো বের কথা আমরা জানি, সিরিয়া, ইরাক এবং লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কী করেছে তা দেখেছি। তারাই গাদ্দাফি এবং লাদেনের মতো লোক তৈরি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘কমিউনিস্টে বিশ্বাস করে বলে তারা পৃথিবীতে লাখো লাখো মানুষকে হত্যা করেছে। প্রেসিডেন্ট আসাদের বিষয়টি আপনারা জানেন তাকেও অভিযুক্ত করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্য। সব কিছুই চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে।’

স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশে অব্যবস্থাপনা আর দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে ড. জিয়া হায়দার বলেন, ‘বাংলাদেশে মাথাপিছু স্বাস্থ্য খাতে বছরপ্রতি ব্যয় হয় ৩২ ডলার। দক্ষিণ এশিয়ার ভেতর এটা সর্বনিম্ন। আমি পূর্ব বা মধ্য আয়ের এশিয়ান কোনো দেশের আর উদাহরণ দেবোনা। একারণে স্বাস্থ্য বিষয়টা বাংলাদেশে অবহেলিত। কোভিড-নাইনটিন সংক্রমণ বিশ্বে স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশার চিত্র উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশটিও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ঝুঁকিতে আছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যা ঘটছে- করোনাভাইরাস সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মার্চের শুরুর দিকে কোভিড-নাইনটিনকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করা হয়।এমনকি এই মহামারির মধ্যেও দেশের কয়েকটি আসনে উপ-নির্বাচন করা হয়েছে। লকডাউন-সামাজিক দূরত্ব বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হয়নি। ঘোষণা দিয়ে কারাখানা শ্রমিকদের ঢাকায় আনা হলো আবার কদিন পর চলে যেতে বলা হলো। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে আপনি যত জটিল রোগেই আক্রান্ত হন না কেন, কোভিড সনদ ছাড়া আপনি সেবা পাবেননা।’

পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে উল্লেখ করে ড. জিয়া বলেন, ‘দেশে কোনো স্থিরতা নেই। প্রথম দিন থেকেই ছিলো পরিকল্পনার ঘাটতি। দেশের চিকিৎসার একটা বড় অংশ যাচ্ছে ব্যক্তি মালিকানার চিকিৎসা খাতে। কিন্তু কোভিড মোকাবিলায় তাদের বিপরীত দিকটাই আমরা দেখতে পেলাম।’

নিজের মায়ের মৃত্যুতে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দুরবস্থার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২৩ এপ্রিল মাকে হারিয়েছি। তাকে ইউনাইটেডে ভর্তি করা হয়। আমার চিকিৎসা জীবনে আমি এই প্রথম দেখলাম লাইফ সাপোর্টে থাকা কোনো রোগীকে ডিসচার্জ করতে।কোনো ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা ছাড়াই তাকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এটা তার ব্রেইন কোষ ক্ষতিগ্রস্থ করে, তিনি কোমায় চলে যান, এরপর আর বাঁচানো যায়নি।তাদের রিলিজের সাতদিন পর তিনি মারা যান। এটা নিয়ে আমি কথা বলেছি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ পাঠিয়েছি।’

বাংলাদেশ অনির্বাচিত সরকারের হাতে শাসিত হচ্ছে মন্তব্য করে লেখিকা সাব্রিয়া বলেন, ‘সম্প্রতি একটি বই সম্পাদনা করেছি 'বাংলাদেশ সাফারিং পিপল আন্ডার স্টেট টেরোরিজম’। অনেক বিশিষ্ট লেখকদের লেখা রয়েছে এতে; লিখেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাও। বইটিতে উঠে এসেছে সরকারের স্বচ্ছতার অভাব, মুক্ত চিন্তায় বাধা দেয়ার বিষয়গুলো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অনির্বাচিত সরকারের হাতে শাসিত হচ্ছি। ২০০৯ সাল থেকে এক স্বৈরাশাসকের কর্তৃত্বে চলছে বাংলাদেশ। মহামারির সময়েই সরকার মানবাধিকার লংঘন করে যাচ্ছে। এসময়ে মানুষ গ্রেফতার হচ্ছে, গুম হচ্ছে।’

সাব্রিয়া বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময়েও বাংলাদেশে ভালো কোনো চিত্র আমরা দেখছিনা। সংকটের মধ্যেই কঠিন সময় পার করছে জনগণ।’

করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রসঙ্গে ড. জিয়া হায়দার বলেন, ‘ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং বাজারে আসতে এখনো সময় লাগবে। বেশ কিছু দেশ এটি তৈরি করতে চেষ্টা করছে, কত দ্রুত নিয়ে আসা যায়। যেমন চীনের কথা বলতে পারি। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন। এটা শতভাগ নিরাপদ হতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যদি আমরা পেছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখবে এটা তৈরি হতে, এবং সাধারণ মানুষের জন্য বাজারে আসতে ১-২ বছর সময় লাগবে। আমরা আগামী বছরের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে, এর আগে আমি এটার কোনো সম্ভাবনা দেখিনা।’

জিএস/