রণক্ষেত্র মধুখালী, মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের গুলি, সংঘর্ষ

রণক্ষেত্র মধুখালী, মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের গুলি, সংঘর্ষ

ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যাকারীর বিচার দাবিতে জনতার মহাসড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মধুখালী। উপজেলা সদর থেকে ঘোপঘাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে পুলিশ ও স্থানীয় জনতার মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার ঘটনা ঘটে। তিন ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে প্রশাসন ও বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার মধুখালী উপজেলা ঈদগা মাঠের পাশে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে কয়েক হাজার মানুষ উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী এলাকার ঘটনাস্থল অভিমুখে রওনা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি মধুখালী হতে ঘোপঘাট ১০ কিলোমিটার পথ যাওয়ার পর পুলিশের বাধায় পড়ে। এসময় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তিনজন আহত হন। আহতদের মধ্যে দুই জনকে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও একজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় খবর রটে আহতদের মধ্যে একজন মারা গেছে। এমন খবরে বিক্ষুদ্ধ জনতা আরো উত্তেজিত হয়ে উপজেলার মালেকা চক্ষু হাসপাতালের সামনে, নওপাড়া ইউনিয়নের নওপাড়া ইউয়িনের মোড়ে, বাগাট ইউনিয়নের আড়কান্দি ব্রীজ, ঘোপঘাট, আড়পাড়া ইউনিয়ন ও কামারখালী ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে।

এর মধ্যে নওপাড়া, ঘোপঘাট, মালেকা চক্ষু হাসপাতাল ও মধুখালী বাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে গাছের গুড়ি, বাঁশ দিয়ে কোথাও আবার আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ এলাকায় পুলিশ রাবার বুলেট টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা দুরে অবস্থান করে আবার মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা অবরোধে সড়কের দুপাশে শত শত যান আটকা পড়ে। পুলিশ সুপার, র‌্যাব ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সহায়তায় কিছুক্ষণের জন্য যান চালু করা হলেও মধুুখালী বাজার এলাকায় রাস্তায় গুড়ি ফেলে টায়ারে আগুন লাগিয়ে ফের মহাসড়কটি অবরোধ করে স্থানীয়রা। এসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশ ও বিভিন্ন যানবাহন লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে পরিবহনগুলো বিকল্প পথে যাওয়ার চেষ্ঠা করে। বিকালে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে যান চলাচল করতে শুরু হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া কয়েকজন নারী জানান, বিচারের দাবিতে আমরা আজ পাঁচ দিন মহাসড়কে অবস্থান করছি। কোন মায়ের কোল খালি হলে সেই মাই-ই জানে সন্তান হারানোর ব্যথা। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচার চাই।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া কয়েকজন জানান, পঞ্চপল্লীতে নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়েছিল, গুজব ছড়িয়ে তাদেরকে গণ পিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাইতে রাস্তায় নেমেছি। পুলিশ আমাদের উপর নির্বিচারে গুলি করেছে। তারা এখন পর্যন্ত কোন আসামিকেই ধরতে পারেনি। এ ঘটনার বিচারের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।

এদিকে মানববন্ধনটি কোন নেতা বা দায়িত্বশীল ব্যক্তির ডাকে হয়নি। শুধুমাত্র ফেসবুকের কয়েকটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ব্যানার পোস্টার লিফলেট ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে শত শত মানুষ এতে অংশ নেন।

মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বকু বলেন, এ ঘটনায় তৃতীয় পক্ষের কারো ইন্ধন থাকতে পারে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমদাদ হোসেন বলেন, পরিবেশ এখন শান্ত। তবে পুলিশের ১০ থেকে ১৫ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কোন মামলা হবে কিনা তা পরে বিবেচনা করা হবে। তিনি আরো বলেন, দোষী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, প্রকৃত ঘটনা বের করে আনতে পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এ ধরনের আন্দোলন পুলিশের কাজ ব্যাহত হবে। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য, ১৬ই এপ্রিল মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী এলাকার বারোয়ারী মন্দিরে অগ্মিকাণ্ডের ঘটনায় পাশের পঞ্চপল্লী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের নির্মাণ শ্রমিকদের সন্দেহের বশে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। তাদের মধ্যে সহোদর দুই ভাই ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে মাঠে কাজ করছে পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা।