দেশ নিয়ে আমি কিছু লেখতে চাই না। ভয় হয়, শংকা হয়।

দেশ নিয়ে আমি কিছু লেখতে চাই না। ভয় হয়, শংকা হয়।

দেশ নিয়ে আমি কিছু লেখতে চাই না। ভয় হয়, শংকা হয়। দেশে অনেক আত্নীয় স্বজন রয়েছেন। তাঁদের জন্য মন কাঁদে। আজ আবারও মনটা ভীষন খারাপ হলো, সাংবাদিক মইনউদ্দিন মঞ্জু ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ অবচেতন দেহ দেখে। বলি, এর শেষ কোথায়?

কেউ যেনো আর রেহাই পাচ্ছে না। কি ভয়ংকর অবস্থা! হায় স্বদেশ, এ কি রকম চেহারা হলো তোমার? মানুষের মর্যাদা বলতে কি কিছু নেই? পাখির মতো কেনো গুলি করি আমরা?

দূরন্ত সাংবাদিক মঞ্জু ছুটে চলেছেন পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকে। আমি বাংলাদেশে চ্যারিটির কাজে গেলে তিনি আমাকে বারবার সংঙ্গ দিয়েছেন। তাঁর আন্তরিকতায় মুগ্ধ আমি।

আজ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে পড়ে থাকতে দেখে মনটা আৎকে উঠলো! পরম করুণাময়ের কাছে দোয়া করি তিনি যেনো তাঁকে ভালো করে দেন। আমিন।

চ্যানেল এসে যে সমস্ত ফান্ড রাইজিং করি বেশিরভাগ সময়ে যে মানুষটির প্রতিবেদন আমরা দেখাই তিনি মইনউদ্দিন মঞ্জু। আমাদের দর্শকেরা তাঁর নিউজ ক্লিপ দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে দান করেন।

৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধের বর্বতা যেনো হার মানলো এবার। মা বলতেন, কাতারে কাতারে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে গুলি করতো পাক সেনারা। তাদের অন্তর মনে হয় পাথর দিয়ে তৈরি। যুদ্ধ শেষে বাড়িতে ফিরে শুধু ছাই পেয়েছিলেন। সোনা গহনা কিছুই সেইভ করতে পারেননি। তবে দেশের সোনারা যে বিজয়ের মালা আমাদেরকে পরিয়েছিলেন তার চেয়ে বড়ো ‘গহনা’ আর কি হতে পারে? আজকে বারবার মায়ের সেই কথাগুলো মনে পড়ছে।

এ দেশেই আমার জন্ম, শৈশব, কৈশর কেটেছে। যৌবনে দেশ ছাড়লাম। কতো কবিতা- গানে মুখরিত ছিলো আমাদের সে দিনগুলি। ছাত্র হিসেবে খারাপ ছিলাম না। ছাত্র থাকা অবস্হায় খবরের কাগজে কাজ করেছি, তখন রেডিও ও বিটিভির যুগ, রেডিওতে খবর পড়েছি, বিটিভিতে ও অনুষ্ঠান করেছি। কোনো প্রতিষ্ঠান আমাকে কোথাও অপদস্ত করেনি।মারা তো ‘দূরের শোনা গল্প’! কিন্তু আজ একি হলো?

সব কিছুর একটা শেষ আছে। বার বার প্রশ্ন জাগে জানি না এ দূর্যোগের শেষ কোথায়?

কবি সুকান্তের ভাষায়-

‘‘বন্ধু, তোমার ছাড়ো উদ্বেগ, সুতীক্ষ করো চিত্ত, বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত।’’

সমাজের, দেশের, রাষ্ট্রের যারা বিবেকবান, শিক্ষিত সমাজ - আমরা কি সবাই অন্ধ হয়ে গেলাম? যেমনটা জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় বলেছেন-

“অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা; যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই—প্রীতি নেই—করুণার আলোড়ন নেই পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।”

আর কতো? আর কতো রক্ত ঝরাতে হবে? শেক্সপিয়ীরের লেইডি ম্যাকবেথের মতো অবস্থা - “ All the perfumes of Arabia will not sweeten this little hand.”

“আরবের সব পারফিউম এই ছোট্ট হাতকে মিষ্টি করবে না।” কারণ, হাতে অনেক রক্ত!

তবে আমরা নিরাশ হবো না। ইন শা আল্লাহ।

“এ আকাশ মেঘে ঢাকা রবে না, আলোয় আলোয় হেসে উঠবে। এ নদী গতিহীন হবে না, সাগরের পানে শুধু ছুটবে...।”

পরম করুণাময় আমাদের দেশ আর মানুষের মর্যাদা ফিরিয়ে দিন। সবার মঙ্গল করুন।

আমিন।

আবু সাঈদ আনসারী
আগস্ট ০৪, ২০২৪॥ লন্ডন, ইংল্যান্ড।