
আজ বিজয়ের দিন। এবারের বিজয় দিবস একটু ভিন্ন। একটু আলাদা স্বাদের এই বিজয়! আবু সাঈদ আর মুগ্ধের মতো হাজারও রক্তে ভর করা এ বিজয়।
মিছিলের ঠিক আগে আমি বা আমরা হারালাম এক মিছিলের কবিকে।
"এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়"। তার এই কালজয়ী পংক্তি মিছিলের আগে আবু সাঈদকে বুক পেতে দিতে সাহায্য করেছিলো। হাজারও তরুণ জীবন দিতে রাজপথে নেমেছিলো। এ কবিতাটি লেখার পর এক কবি সমালোচক বলেছিলেন, “হেলাল হাফিজ যদি আর কোনো কবিতা না লেখেন, অসুবিধে নেই। তার একটা কবিতাই যথেষ্ট।”
হেলাল হাফিজ সংগ্রামী শৈশবের সংগ্রামী কবি ছিলেন। প্রেরণার কবি ছিলেন। আমার আবৃত্তির কবি ছিলেন তিনি।
একদা তিনি বলেছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের তিনজন কবি গণ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। কবি হেলাল হাফিজ, কবি নির্মলেন্দু গুণ আর কবি আল মাহমুদ। তাদের কবিতা কবিতার দ্রৌপদী চৌহদ্দি পেরিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁচেছে।
এদের মধ্যে, অনেকে ভেবেছে হেলাল হাফিজ একটা বই লিখে মারা গেছে। সে বেঁচে নেই। কবি হিসেবে কবি নির্মলেন্দু গুণের মৃত্যু হয়েছে আরো বহু আগে। তার কবি প্রতিভা আর অবশিষ্ট নেই।
আমাদের প্রিয় কবি আল মাহমুদ তিনি টগবগে তরুণ, জ্বলজলে উজ্জ্বল। বাংলা সাহিত্যে এই কবি অমর। তার মৃত্যু নেই।
যদিও হেলাল হাফিজের আইডলোজির সাথে আমার কোনো মিল নেই। তিনি যা খেলতেন তা উচ্চারণ না করা নেহায়েত ভালো মনে করছি। তাতে কি? দিওয়ানে হাফিজের অনেক এর সাথে আমি একমত নই!
তবু তাঁর প্রতি কোথাও যেনো আমার মায়া ছিলো, দরদ ভরা মায়া। তিনি আসলেই কবি ছিলেন। দুটি লাইন লেখে কিরকম অজস্র মানুষের মাঝে চিরস্মরণীয় হওয়া যায় সে ম্যাজিক তার জানা ছিলো। কবি জীবনানন্দ দাস বলেছেন, "সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি"। হাফিজ কবিই ছিলেন। তার কবিতা আমাদেরকে নাড়া দিতো, দারুণ ভাবে। কিছু চরণ পড়লে তারুণ্যের ঝড় বয়ে যায় শরীরে।
যেমন,
"স্বাধীনতা সব খেলো, মানুষের দুঃখ খেলো না"
'নিউট্রন বোমা বোঝো মানুষ বোঝো না'
"কথা ছিল একটি পতাকা পেলে..."
“কষ্ট নেবে কষ্ট …”
হেলাল হাফিজ, সারাটা জীবন একাকিত্ব কে সঙ্গী করে একাকীই চলে গেলেন।
তবে সস্তা সিনেমার কাহিনীর মতো তাঁর আর হেলেনের সম্পর্ক ছিলো না। যা কিছু ফেইসবুকের স্টেটাসকে মুখরোচক করে ফেলেছে। আসলে কবিরা প্রায়ই নিঃসঙ্গ থাকেন। শব্দ আর ছন্দই তাদের সঙ্গ। তবে আল মাহমুদের মতো বিশ্বাসী হলে কবিকে হয়তো এতোটা নিঃসঙ্গ হতে হতো না। বিয়ে করে ভালোবাসা যায় বিয়ের আগে ভালোবাসা ততোটা হয় না, তা তিনি তরুণদেরকে শেখায়ে যেতে পারতেন।
আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন কবি হেলাল হাফিজ। আপনার মুখ থেকে শোনা কবিতার সেই হেলেন বেঁচে থাকলে এখনো, আল্লাহ তাকে ভালো রাখুন। আপনার সৎ মা, উনিও যে জীবনেই আছে, সে জীবনে সুখী হউন। আল্লাহ এ বিজয়কে মহিমান্বিত করুন।
আমিন।
আবু সাঈদ আনসারী
১৬ই ডিসেম্বর ২০২৪॥ লন্ডন, বিলেত ॥