নির্বাচনের তফসিল নিয়ে সংকট কাটেনি

নির্বাচনের তফসিল নিয়ে সংকট কাটেনি

ঢাকা, ১৩ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : নির্বাচন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর পুনঃনির্ধারণ করা হলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট৷ তারা মনে করছে, নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার নামে এক ধরনের চালাকি করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে আদতে নির্বাচনে কারচুপির পরিকল্পনা করছে তারা৷

এর আগে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল ২৩ ডিসেম্বর৷ কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ আরো কিছু দল ও জোটের দাবি ছিল নির্বাচন পেছানোর৷ ঐক্যফ্রন্ট লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে নির্ধারণের দাবি জানায়৷ কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নূরুল হুদা সোমবার ঢাকায় ইভিএম মেলায় জানান যে নির্বাচন হবে ৩০ ডিসেম্বর৷ এ জন্য মনোনয়ন-পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৮ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে৷ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সব দলের অংশগ্রহণ আশা করেছিলাম এবং তা হয়েছে৷ এ জন্য দলগুলোকে অভিনন্দন জানাই৷ ঐক্যফ্রন্টসহ বিরোধী দলগুলো পুনঃতফসিলের আবেদন জানিয়েছিল, তাদের আবেদনে আমরা পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’

নির্বাচনের তারিখ পেছানোর পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাত্র সাতদিন নির্বাচন পেছানোর মধ্যে সরকারের চালাকি আছে৷ এটা একটা প্রতারণা৷ সরকার ভয় পাচ্ছে এবং তাই তারা চালাকি ও প্রতারণা করছে৷ আরো অনেক সময় আছে৷ তাই নির্বাচন আরো পেছানো যায়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এমনভাবে নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কিনা ৩১ ডিসেম্বর ইংরেজি নববর্ষের আগের দিন৷ এছাড়া নির্বাচনের আগের দু'দিন শুক্র ও শনিবার সরকারি বন্ধ৷ ইংরেজি নববর্ষের আগের দিন কি বিদেশি পর্যবেক্ষক এখানে থাকবে? বিদেশিরা সব দেশে চলে যাবে৷ সরকার তখন ইচ্ছামত ব্যালট পেপারে সিল মারার সুযোগ পাবে৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এখনো আমাদের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত আছে৷ তারা ক্যাম্পেইনও চালাচ্ছে৷ সরকারের প্রতি আহ্বান, এই প্রতারণা আর চালাকি বন্ধ করে যৌক্তিক সময় নিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে৷’’

এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব দলই নির্বাচন পেছানোর দাবি করেছে৷ আমরা সব দিক বিবেচনা করে এক মাস নির্বাচন পেছাতে বলেছি৷ এবং সেই সময়ও আছে৷ সাতদিন বেশি সময় নয়৷ এখন বিরোধী দলের কোনো কথাই যদি সরকার শুনতে না চায়, তাহলে একটি ভালো নির্বাচন হবে কীভাবে? নির্বাচন কমিশন যদি সব সময়ই সরকারি দলকে সুযোগ-সুবিধা দেয় আর বিরোধী দলকে শত্রুজ্ঞান করে, তাহলে তো মীমাংসার দিকে এগানো খুব কঠিন৷ আমরা তো আমাদের পাওনাটুকুই চাই৷ আমরা তো কোনো বাড়তি সুবিধা চাই না৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচন ভালো কী মন্দ হবে সেটা আরো পরের বিষয়৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশন বিরোধী দলকে নির্বাচনে চাচ্ছে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন৷ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, উৎসবমুখর করতে হলে আরো সময় দরকার৷ আমরা ফ্রন্ট নেতারা এখন বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷’’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আগেও বলেছি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর করতে নির্বাচন যদি পিছানো হয়, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না৷ কমিশন যে সাতদিন নির্বাচন পিছিয়েছে, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাই৷’’

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচন আরো পেছানোর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তারা আসলে দেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি চায় না৷ তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে৷ তারা চায়, বাংলাদেশ একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হোক৷ তাই তাদের দাবি শেষ হয় না৷’’

এদিকে সংসদ নির্বাচনের তারিখ সাতদিন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী৷

এবারের নির্বাচনে সব দলই অংশ নিচ্ছে৷ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য মনোনয়নপত্র বিক্রি সোমবার শেষ হয়েছে৷ বুধবার থেকে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে৷ বিএনপিও মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে সোমবার থেকে৷ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে নিজের মনোনয়নপত্র কেনার সময় সোমবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘নির্বাচনের কোনো পরিবেশ বা পরিস্থিতি নেই৷ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আমরা অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করব৷’’

আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির দলীয় কর্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের তারিখ এক সপ্তাহ পেছানোর সিদ্ধান্তকে আওয়ামী লীগ সমর্থন করে৷ এই সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার শুধু নির্বাচন কমিশনের৷ এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই৷ নির্বাচনের তারিখ না পেছালেও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসত, এটা আমরা জানতাম৷ কারণ নির্বাচনে আসা তাদের সিদ্ধান্ত৷’’

এর বাইরে জাতীয় পার্টিসহ সব দলই প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র বিক্রি করছে৷ জামায়তে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক না থাকায় তাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করবে৷

নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিক্রি হচ্ছে ঢাকা থেকে৷ তাই প্রার্থী হতে আগ্রহী ও সমর্থকদের ব্যাপক ‘শো ডাউন’-এর কারণে শহর প্রায় অচল হয়ে পড়েছে৷ ট্রাফিক ব্যবস্থা বলতে গেলে ভেঙেই পড়েছে৷

প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয় ২০১৪ সালের ১২ জানুয়রি৷ আর সংসদ সদস্যরা শপথ নেন ৯ জানুয়ারি৷ ২৯ জানুয়ারি সংসদের অধিবেশন বসে৷ সেই হিসেবে, বর্তমান সরকারের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত৷ তাই বিরোধীদের কথায়, ২৮ জানুয়ারির আগে নির্বাচন করলেই হবে৷

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/০০০২ঘ.)