ধর্ষণ পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার’ পদ্ধতি নিষিদ্ধ

ধর্ষণ পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার’ পদ্ধতি নিষিদ্ধ

ঢাকা, ১২ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : ধর্ষণের শিকার নারীর শারিরীক পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার’ (দুই আঙ্গুলের মাধ্যমে ধর্ষণের পরীক্ষা) পদ্ধতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর মেডিকেল পরীক্ষার জন্য হেলথ কেয়ার প্রটোকলে বর্ণিত পদ্ধতি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য নির্যাতিত নারীর আত্মীয়, চিকিৎসক, পুলিশ ও নারী নার্স রাখতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

বিচারকালে আইনজীবী কখনো নির্যাতিত নারীকে অমর্যাদাকর প্রশ্ন করতে পারবেন না বলেও রায়ে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে সেমিনার বা কর্মশালার মাধ্যমে এই নীতিমালা সবার কাছে পৌঁছাতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসে ধর্ষণের শিকার নারীর মেডিকেল পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার’ পদ্ধতিকে সেকেলে ও অনৈতিক বলে হাইকোর্টে মতামত উপস্থাপন করেন পাঁচ ফরেনসিক মেডিকেল বিশেষজ্ঞ।

বিশেষজ্ঞরা আদালতে বলেন, ‘এ পদ্ধতি সেকেলে। যৌন নির্যাতনের পরীক্ষার আধুনিক অনেক পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। টু ফিঙ্গার পদ্ধতিটি অনৈতিক।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী, একই হাসপাতালের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইল ল্যাবরেটরির প্রধান ডা. সাফিউর আখতারুজ্জামান, মিরপুরের ডেল্টা মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. জাহিদুল করিম আহমেদ, বারডেম হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিনের প্রফেসর ডা. গুলশান আরা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব ল, মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট মুজাহিরুল হক এ মতামত দেন।

শুনানিতে বলা হয়, সনাতন পদ্ধতিতে (দুই আঙ্গুলের মাধ্যমে) ধর্ষণের পরীক্ষা করার কারণে অনেক ভিকটিম পরীক্ষা করতে আসে না। আর এ কারণে অনেকে ধর্ষিত হয়েও বিচার পায় না। ভারতে এ পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে।

ধর্ষণের পরীক্ষার জন্য নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করতে ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, মানুষে জন্য ফাউন্ডেশন, নারী পক্ষ এবং ডাক্তার রুচিরা তাবাচ্ছুম ও ডাক্তার মোবারক হোসেন খান একটি রিট আবেদন করেন। এরপর ধর্ষণের পরীক্ষায় নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।

পুলিশ, চিকিৎসক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের জন্য সমন্বিত ওই নীতিমালা তৈরি করে তা তিন মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। স্বাস্থ্য সচিবকে এই নীতিমালা করার জন্য একটি কমিটি গঠনেরও আদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি রুলও জারি করেন আদালত।

এ আদেশের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন স্বাস্থ্য সচিব। ওই কমিটির পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি নীতিমালা দাখিল করা হয়। সেখানে ধর্ষিত নারীর সঙ্গে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের, পুলিশ, ডাক্তারসহ সবাইকে কেমন আচরণ করতে হবে তা ওই নীতিমালায় আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়।

এ অবস্থায় আদৌ এই ‘টু ফিঙ্গার’ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা আছে কি না-সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়ার জন্য রিট আবেদনকারীরা আদালতের কাছে আবেদন জানায়। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ আগস্ট ৫ চিকিৎসককে ১৬ আগস্ট আদালতে উপস্থিত থাকতে বলেন হাইকোর্ট। সেই মোতাবেক চিকিৎসকরা হাইকোর্টে এসে মতামত দেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০০৮ঘ.)