কভিডকালে বড় কোম্পানির বাম্পার মুনাফা

কভিডকালে বড় কোম্পানির বাম্পার মুনাফা

 

বৈশ্বিক অতিমারী কভিডের অভিঘাতে পর্যুদস্ত পুরো বিশ্ব। শ্লথ হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির গতি। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে বেশ ভালোভাবেই। বর্তমানে সে পরিস্থিতি কাটিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম আবার চাঙ্গা হয়ে উঠছে। তবে এর আগেই কভিডের মধ্যেও দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশকিছু বড় কোম্পানি উল্লেখযোগ্য হারে মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ভালো মুনাফার সুবাদে বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় পরিমাণে লভ্যাংশেরও ঘোষণা দিচ্ছে কোম্পানিগুলো।

সর্বশেষ ২০২০-২১ হিসাব বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এমজেএল বাংলাদেশ, বিডি ল্যাম্পস, বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, স্কয়ার টেক্সটাইলস, রেনাটা, বিএসআরএম লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিলস, সামিট পাওয়ার, এপেক্স ফুটওয়্যার ও ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের মতো বড় কোম্পানিগুলো উল্লেখযোগ্য মাত্রায় মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। আকর্ষণীয় লভ্যাংশ পেয়েছেন কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগকারীরাও।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি খাতের কোম্পানি এমজেএল বাংলাদেশের ২০২০-২১ হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭ টাকা ৫৩ পয়সা। এ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। আগের বছরে শেয়ারপ্রতি ৫ টাকা ৫২ পয়সা আয় করেছিল কোম্পানিটি।

প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ল্যাম্পসের (বিডি ল্যাস্পস) সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ৫ টাকা ১০ পয়সা। আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি ৯ টাকা ৮৮ পয়সা লোকসান দিয়েছিল কোম্পানিটি। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে বিডি ল্যাম্পসের পর্ষদ।

সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরে বেক্সিমকো লিমিটেডের ইপিএস হয়েছে ৭ টাকা ৫৩ পয়সা। আগের বছরে এর পরিমাণ ছিল ৫১ পয়সা। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ৩৫ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে কোম্পানিটির পর্ষদ।

ওষুধ খাতের কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ২০২০-২১ হিসাব বছরে সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ১১ টাকা ৪৯ পয়সা। আগের বছরে তা ছিল ৭ টাকা ৮৮ পয়সা। ২০২১ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পর্ষদ।

২০১৯-২০ হিসাব বছরে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সমন্বিত ইপিএস ছিল ১৫ টাকা ৭ পয়সা। সেখান থেকে বেড়ে সর্বশেষ হিসাব বছরে তা দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৯৯ পয়সায়। কোম্পানিটির পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের ২০২০-২১ হিসাব বছরের জন্য ৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে।

বস্ত্র খাতের কোম্পানি স্কয়ার টেক্সটাইলসের ২০২০-২১ হিসাব বছরে সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৪১ পয়সা। আগের বছরে তা ছিল ২৭ পয়সা। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে স্কয়ার টেক্সটাইলসের পর্ষদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার গ্রুপের অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রধান মো. কবির রেজা বণিক বার্তাকে বলেন, ফার্মাসিউটিক্যালস ব্যবসায় রফতানি থেকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি না হলেও স্থানীয় বাজারে ভালো ব্যবসা হয়েছে। তাছাড়া আড়াই শতাংশ হারে করপোরেট কর কমানোর ফলে কোম্পানির মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে কাঁচামালের তুলনায় ইয়ার্নের ভালো দাম পাওয়ার কারণে টেক্সটাইলের ব্যবসা বেড়েছে। পাশাপাশি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর সুফলও পেয়েছে কোম্পানি।

২০২০-২১ হিসাব বছরে ওষুধ খাতের কোম্পানি রেনাটার সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৫১ টাকা ৯৪ পয়সা, যেখানে আগের হিসাব বছরে এর পরিমাণ ছিল ৪১ টাকা ১৭ পয়সা। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৫৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৪৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ।

ইস্পাত খাতের কোম্পানি বিএসআরএম লিমিটেডের ২০২০-২১ হিসাব বছরে সমন্বিত ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৯৬ পয়সায়, যা আগেরবার ছিল ৩ টাকা ৯০ পয়সা। ২০২০-২১ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪০ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটির পর্ষদ। এর আগে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

বিএসআরএম গ্রুপের তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি বিএসআরএম স্টিলসের ২০২০-২১ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সা। আগের বছরে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৯৭ পয়সা আয় করেছিল কোম্পানিটি। ২০২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে। এর আগে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

জানতে চাইলে বিএসআরএম গ্রুপের অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রধান শেখর রঞ্জন কর বণিক বার্তাকে বলেন, মূলত বিক্রির পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি রডের দাম বাড়ার কারণে কোম্পানির ব্যবসা থেকে ভালো আয় হয়েছে। এর বিপরীতে আর্থিক ব্যয় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এতে বছর শেষে কোম্পানির মুনাফায় ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কভিডের কারণে গত বছর নির্মাণ খাত এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছিল। এ বছর করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় নির্মাণকাজের গতি অনেক বেড়েছে। সরকারের বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প থেকেও রডের চাহিদা বেড়েছে। সব মিলিয়ে এসব কারণেই কয়েক বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে ভালো ব্যবসা করা সম্ভব হয়েছে।

বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি সামিট পাওয়ারের ২০২০-২১ হিসাব বছরে সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৫ টাকা ২৫ পয়সা। আগের বছরে ইপিএস ছিল ৫ টাকা ১৭ পয়সা। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সুপারিশ করেছে।

২০২০-২১ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে চামড়া খাতের কোম্পানি এপেক্স ফুটওয়্যারের পর্ষদ। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৯ টাকা ৩৬ পয়সা। আগের বছরে এর পরিমাণ ছিল ৫ টাকা ৬২ পয়সা।

জানতে চাইলে এপেক্স ফুটওয়্যারের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আব্দুল মোনেম ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, পণ্য রফতানি আগের তুলনায় বেড়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জুতার চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও বিক্রি বেড়েছে। অবশ্য জাহাজীকরণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রফতানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়িকভাবে চ্যালেঞ্জে পড়তে হচ্ছে।

প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ২০২০-২১ হিসাব বছরে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫৪ টাকা ২১ পয়সায়। যেখানে আগের বছরে ইপিএস ছিল ২৪ টাকা ২১ পয়সা। আলোচ্য হিসাব বছরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ২৫০ শতাংশ ও উদ্যোক্তা পরিচালকদের জন্য ১৭০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে ওয়ালটন হাইটেকের পর্ষদ।