রাতভর রাস্তায় পড়ে ছিল গিটারিস্ট হিরুর লাশ

রাতভর রাস্তায় পড়ে ছিল গিটারিস্ট হিরুর লাশ

জ্বর-সর্দিসহ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে কাবু নারায়ণগঞ্জের সংগীতাঙ্গনের অত্যন্ত প্রিয়মুখ বেজ গিটারিস্ট খায়রুল আলম হিরু। গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টা। অ্যাম্বুলেন্স আনা হলো হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। বাড়ির ভেতর থেকে অসুস্থ হিরুকে বের করে রাস্তায় নিয়ে আসা হলো। তাকে গাড়িতে তোলার জন্য এগিয়ে এলেন অ্যাম্বুলেন্স চালক ও দুই সহকারীও।

কিন্তু ঠাণ্ড-কাশি ও জ্বর শুনে তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পালিয়ে যান তারা। ডাক্তার, ওষুধ, চিকিৎসার অভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভীষণ রকম যন্ত্রণায় ছটফট করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অনেকের প্রিয় বেজ গিটারিস্ট হিরু। চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে দিলেন শোকার্ত মা ও বোন। বাড়িতে কোনো পুরুষ না থাকায় রাস্তায়ই পড়ে থাকে লাশ। প্রতিবেশীদের শত বলেও বাড়ির ভেতরে নেওয়াতে পারেননি তারা।

সবাই অপারগতা প্রকাশ করে যে যার মতো ফিরে যান। তাই সারারাত রাস্তায় রেখে সন্তানের লাশকে পাহাড়া দেন জন্মদাত্রী মা। পাশে বসে প্রিয় ভাইয়ের জন্য কেঁদে বুক ভাসান বোন। স্ত্রীর আর্তনাদে বাতাস ভারি হলেও মন গলেনি কারোরই।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর বাড়ির কাছে শহরের দেওভোগ কৃষ্ণচূড়া মোড়ের রতন ও ইকবালদের ফ্ল্যাটে হিরুদের বাস। দেড় বছরের ছেলে, স্ত্রী ও বোনকে নিয়ে থাকতেন তিনি। পরিবারের বাকি সব সদস্য ঢাকায় বসবাস করেন।

এদিকে এক কান দুই কান করে রাস্তায় লাশ পড়ে থাকার খবর পৌঁছায় সিটি করপোরেশনের কাছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় প্যানেল মেয়র-১ আফসানা আফরোজ বিভা ঘটনাস্থলে ছুটে যান তার টিমসহ স্থানীয় পুলিশ নিয়ে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তিনি সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় লাশ দাফনের উদ্যোগ নেন।

বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক উল্লেখ করে এই প্যানেল মেয়র আমাদের সময়কে জানান, গিটারিস্ট হিরু দুই বছর ধরে স্কিনজনিত রোগে ভুগছিলেন। এর মধ্যে গত ২৬ মার্চ থেকে তার জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়। পরে শহরের একজন প্রাইভেট ডাক্তারকে দেখালে বেশ কিছু পরীক্ষা করানো হয়।

এতে জানা যায়, তার ফুসফুসে পানি জমেছে। ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে সে অনুযায়ী ওষুধ খেতে বলে চিকিৎসক জানান, এতেই সেরে যাবে। কিন্তু জ্বর-সর্দি আর শ্বাসকষ্ট না কমায় পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা ভর্তি না করে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে তাকে ছেড়ে দেন।

ঘনিষ্ঠ একজন জানান, সোমবার রাতে হিরুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়। কিন্তু রোগীর মধ্যে করোনার উপসর্গ জ্বর-সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট রয়েছে জানতে পেরে অ্যাম্বুলেন্স চালক গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে তাকে আর হাসপাতাল পর্যন্ত নেওয়া যায়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই হিরু মারা যান। পরে তার মরদেহ আর বাড়িতে না ঢুকিয়ে গেটের কাছেই ফেলে রাখা হয়।

ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। একজন প্যানেল মেয়রও ছিলেন। আমি হিরুর মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। করোনা আতঙ্কে কেউ তার কাছে আসেনি। লাশটি দাফনের ব্যবস্থা করেছে সিটি করপোরেশন।’

এমজে/