যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনা

১০ মিনিট আগে ইরানে হামলা বন্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র

১০ মিনিট আগে ইরানে হামলা বন্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র

ড্রোন ভূপাতিত করার প্রতিবাদে ইরানে পাল্টা হামলা চালাতে চেয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। আকাশে প্রস্তুত ছিলো জঙ্গি বিমান আর জলপথে রণতরী, হামলা কোন তিন জায়গায় করা হবে তা চূড়ান্ত করার পরও মাত্র ১০ মিনিট আগে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তে হামলার পথে পা বাড়ায়নি দেশটি। রক্তপাত এড়াতে প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের কারণে যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়ালো বৈরি দুই দেশ ইরান-যুক্তরাষ্ট্র।

কেন এই হামলা সে প্রসঙ্গ নিয়ে টুইটে খোলামেলা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, "ইরানে পাল্টা হামলার জন্য নিশানা ঠিক করে পুরো প্রস্তুত ছিলো সেনাবাহিনী।"

হামলায় ১৫০ জনের মতো মারা যাবে এ তথ্য জানার পর ঠিক ১০ মিনিট আগে ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত বদল করেন। এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের যুক্তি ছিলো মানুষহীন ড্রোন ভূপাতিত করার সঙ্গে এ হামলা ন্যায্য হয় না। আর তাই শেষ মুহূর্তে তিনি হামলা বন্ধের নির্দেশ দেন। হামলা বন্ধ করলেও ইরানকে হুঁশিয়ারি দেন প্রেসিডেন্ট।

টুইটে ট্রাম্প বলেন, "সোমবার আন্তর্জাতিক জলসীমায় মানুষহীন একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে তারা (ইরান)। তিনটি ভিন্ন জায়গায় হামলা করার জন্য গতকাল রাতে (বৃহস্পতিবার) নিশানা ঠিক এবং পুরো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমরা। যখন প্রশ্ন করলাম হামলায় মারা যাবে কতজন? একজন জেনারেল জানালেন- ১৫০ জন। স্যার।

হামলার ১০ মিনিট আগে আমি তা বন্ধ করতে বললাম। কারণ মানুষহীন ড্রোন ভূপাতিত করার সঙ্গে এ হামলা ন্যায্য নয়।"

ইরানে হামলা হবে বৃহস্পতিবার রাতে এমনটার ইঙ্গিত দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস। ট্রাম্প হামলা বন্ধে সেনাবাহিনীকে নিদের্শ দেবার পূর্বে "হামলার প্রস্তুতি চলছে (ইরানে)" এমনটাই জানান দিয়েছিলো সংবাদ মাধ্যমটি।

হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমসে বলা হয়, "বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭.০০টা তখন (স্থানীয় সময়)। যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী আর কূটনীতিকরা অপেক্ষায় ছিলেন এই বুঝি ইরানের পরিকল্পিত স্থাপনায় হামলা হতে যাচ্ছে। ইরানের রাডার আর ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমও এই হামলার লক্ষ্য ছিলো।"

পত্রিকাটির রিপোর্টে আরো বলা হয়, "আকাশ পথে বিমান আর জলপথে যুদ্ধ জাহাজ তাক করাই ছিলো। হামলা বন্ধের নির্দেশ আসায় কোনো ক্ষেপণাস্ত্রই আর ছোঁড়া হয়নি।" পত্রিকাটি আরো জানায়, "ইরানের সেনাবাহিনী এবং সাধারণ নাগরিকদের কথা মাথায় রেখে, ঝুঁকি কম হিসেব করে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো শুক্রবার ভোর রাতে।"

তবে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে যে, "পেন্টাগন শীর্ষ কর্মকতারা এই বলেও সতর্ক করেছেন যে: যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের হামলা চালালে তা ঐ অঞ্চলে অস্থিরতা আরো বাড়িয়ে দেবে এবং সেখানে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র সেনাদের জন্য তা ঝুঁকিপূর্ণ হবে।"

যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এপি বলছে, "পেন্টাগন এবং ট্রাম্পের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ইরানে হামলা করার প্রস্তাব দেন।"

এপি আরো জানিয়েছে, "ইরানে হামলা নিয়ে কী করা হবে তা ঠিক করতে বৃহস্পতিবারের অধিকাংশ সময়টা নিরাপত্তা উপদেষ্টা আর কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গেই কাটিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হামলার করতে কঠোর অবস্থানে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন। তবে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। শেষতো হামলার পরিকল্পনা থেকে ফিরে আসে দেশটি।"

ইরানের দুই কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, "ইরানে হামলা অত্যাসন্ন-এমন একটা আভাস ওমানের মাধ্যমে বৃহস্পতিবারই পেয়েছে দেশটি। সতর্ক বার্তাটি ট্রাম্প ওমানের মাধ্যমে ইরানকে দিয়েছিলেন।"

শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, "(হামলা নিয়ে) আমাদের মধ্যে কোনো তাড়াহুড়া নেই।"

তিনি বলেন, "সেনাবাহিনীকে নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে, তারা উদ্যমী, যেখানে বলবো সেখানেই যাবে। পৃথিবীর সেরা বাহিনীগুলোর একটি।"

তেহরান বলছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষহীন একটি ড্রোন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার কারণে বৃহস্পতিবার সকালে তা ভূপাতিত করা হয়েছে।তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে ড্রোনটি আন্তর্জাতিক সীমানার মধ্যে ছিলো।

মূলত সেখান থেকেই দুই দেশের উত্তেজনা আরো প্রশমিত হয়েছে। চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সোমবার ইরান ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলকে বৈঠকে বসার আহবান জানিয়েছে। 

ইরানে হামলার ব্যাপারে পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে দেশটি। ইরানে যেকোনো ধরনের হামলা হলে তার জন্য আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মূল্য দিতে হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা।

বিবিসিকে ইরানের সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদ সাজ্জাদপোর বলেন, "ইরানের সীমান কেউ অতিক্রম করলে তখনি আমরা তার জবাব দেই।"

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি অভিযোগ করে আসছে ইরান ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তেলবাহী টেংকারে হামলার জন্য দায়ী। পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে। তেহরান জানিয়েছে পরমাণু সমৃদ্ধিকরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো যে শর্ত দিয়েছে শীঘ্রই তা ছাড়িয়ে যাবে দেশটি। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর পরমাণু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

এ বিষয়ে ট্রাম্পের সাফ কথা: "ইরানের কোনো পরমাণু শক্তি মেনে নেয়া হবেনা।" হুঁশিয়ারি ছাড়াও দেশটির উপর একের পর এক অর্থনৈতিক অবরোধ চাপিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

জিএস/