হংকংয়ে সরকারকে ভড়কে দিল গণতন্ত্রপন্থীরা

হংকংয়ে সরকারকে ভড়কে দিল গণতন্ত্রপন্থীরা

গণতন্ত্রের জোরালো দাবিতে কয়েক মাসের টানা বিক্ষোভ সহিংসতার মাঝে রবিবার হংকংয়ের জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। ভোটের মাঠে ছিল রেকর্ড সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি, যা চীনপন্থী সরকারকে ভড়কে দিয়েছে।

গত ছয় মাসের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ-সহিংসতায় অবরুদ্ধ হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামের জন্য এ নির্বাচনকে তার জনপ্রিয়তা পরিমাপের মাপকাঠি হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে এ নির্বাচনকে নিজেদের জন্য ‘গণভোট’ হিসেবে দেখছেন গণতন্ত্রপন্থীরা।

নির্বাচনে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটাতে জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বেইজিংকেও কড়া বার্তা দিতে চাইছেন আন্দোলনকারীরা। খবর আলজাজিরা ও বিবিসির।

রোববার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সরকারি তথ্য-উপাত্ত বলছে, বিকাল ৭টা ৩০ মিনিটের মধ্যেই প্রায় ২৬ লাখ ভোটার (৬৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ) তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

২০১৫ সালের জেলা পরিষদ নির্বাচনে একই সময়ে ভোট পড়েছিল প্রায় ১৩ লাখ (৩৭ দশমিক ১২ শতাংশ)। অতীতের এ রেকর্ড এবার ভেস্তে গেছে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত ভোট দানের মাধ্যমে। শেষ কয়েক ঘণ্টায়ও ভোটাররা দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

রোববার মধ্যরাতের দিকে এ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ের ১৮টি জেলায় এ নির্বাচনে ৪৫২ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। লড়াইয়ে নেমেছেন রেকর্ড এক হাজার ১০৪ জন প্রার্থী। গণতন্ত্রপন্থী নেতা জশুয়া অংও নির্বাচনে লড়ছেন। আরও ২৭টি আসন গ্রামীণ এলাকার প্রতিনিধিদের জন্য বরাদ্দ।

এবার প্রথমবারের মতো সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। নিবন্ধিত ভোটার রয়েছেন প্রায় ৪১ লাখ ৩০ হাজার। হংকংয়ের জনসংখ্যা ৭৪ লাখ। কাউন্সিলরা স্থানীয় পরিষদের কিছু ব্যয় নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রিসাইকেলিং, পরিবহন ও গণস্বাস্থ্যের মতো এলাকার স্বার্থবিষয়ক বহু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এবার কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর আশা করছেন গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীরা। নগরীর প্রধান নির্বাহী বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে এ কাউন্সিলের কিছুটা প্রভাব আছে। হংকংয়ের বর্তমান স্থানীয় পরিষদে বেইজিংপন্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে।

গণতন্ত্রকামী রাজনীতিকরা যদি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান, তাহলে হংকং পার্লামেন্টের ছয়টি আসন তাদের নিয়ন্ত্রণে আসবে। একই সঙ্গে বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী নির্বাচনের জন্য সংসদের এক হাজার ২০০ সদস্যের যে প্যানেল রয়েছে; সেখানের ১১৭টি আসন তারা পাবেন।

এছাড়া আগামী বছরের আইনসভা নির্বাচনে জেলা কাউন্সিলর থেকে প্রার্থী করা হবে। ফলে এ ভোটে গণতন্ত্রপন্থীদের উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে। টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে নিজের ভোট দিয়ে ক্যারি লাম বলেন, জেলা নির্বাচনে মানুষের মতামতকে তার সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।

মিং লি নামের এক তরুণী জানান, তিনি আশা করছেন ভোটারদের বেশি উপস্থিতির মাধ্যমে সুবিধা পাবে গণতন্ত্রপন্থি শিবির। কিছু আসনে এর আগে গণতন্ত্রপন্থিরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি এবং এগুলো বেইজিংপন্থি প্রার্থীদের দখলে ছিল। এবার হয়তো সেসব আসনে সুবিধা পাবেন গণতন্ত্রপন্থিরা।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করছি ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জবাব হবে যেটি গন্ত্রতন্ত্রীদের আওয়াজকে আরও উঁচু করবে। সামাজিক সমস্যা জনগণকে ভোট দিতে উৎসাহী করছে এবং রাজনৈতিক ইস্যুতে মনোযোগী করছে।’

হংকং বাপ্টিস্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক কেনেথ জান বলেন, ‘হংকংয়ের জনগণ এ নির্বাচনকে মত প্রকাশের আরেকটি মাধ্যম হিসেবে দেখছে।’ চীনের বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিলের বিরোধিতা করে গত ছয় মাস আগে হংকংয়ের হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে।

তীব্র আন্দোলনের মুখে বিতর্কিত ওই বিল প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও বিক্ষোভকারীরা রাজপথ ছাড়েনি।

স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়েছে। রোববার হংকংয়ের রাস্তায় খুব কমসংখ্যক বিক্ষোভকারীকে দেখা গেছে। বিক্ষোভের আশঙ্কায় দাঙ্গা পুলিশের সদস্যরা ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।

এমজে/