হংকং নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আইন পাস, চীনের বদলা নেয়ার হুঁশিয়ারি

হংকং নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আইন পাস, চীনের বদলা নেয়ার হুঁশিয়ারি

হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনে সমর্থন ও সুরক্ষায় মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট সম্প্রতি যে বিলটি পাস করেছিল তাতে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনের জোরালো ও ক্ষুদ্ধ আপত্তি আর বেইজিং সমর্থিত হংকং সরকারের নিন্দা সত্ত্বেও তিনি বিলটিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আইনে পরিণত করলেন।

কংগ্রেসের দুই কক্ষে সর্বসম্মতভাবে ‘হংকং হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি’ নামের বিলটি পাস হয়। আইন অনুযায়ী, চীনের অংশ হলেও হংকংয়ের নিজস্ব আইন ও অর্থনৈতিক নিয়ম আছে। বার্ষিক পর্যালোচনায় যাচাই করা হবে যে হংকংয়ের আইনকে খর্ব করে চীন সেখানকার বেসামরিক স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন ক্ষুন্ন করছে কিনা।

হংকং এর মাধ্যমে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বা মর্যাদা পাবে। বিশেষ বাণিজ্য মর্যাদা বজায় রাখতে হংকং যাতে যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করতে পারে তা নিশ্চিতে হংকংয়ের পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ বাণিজ্য মর্যাদা বলতে বোঝাচ্ছে, চীনের ওপর আরোপিত মার্কিন কোনো নিষেধাজ্ঞা হংকংয়ের জন্য কার্যকর হবে না।

এছাড়া ওই আইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও আরোপ হতে পারে। উল্লিখিত বিলটি ছাড়াও মার্কিন সিনেটে আরও একটি বিল পাস হয়। বিলটি পাসের মাধ্যমে হংকংয়ের পুলিশের কাছে জনবিক্ষোভ দমনে ব্যবহৃত কাঁদানে গ্যাস, পিপার স্প্রে, রাবার বুলেট ও স্ট্যান গান রফতানি নিষিদ্ধ করা হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শি (জিনপিং), চীন এবং হংকংয়ের মানুষের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিলটিতে স্বাক্ষর করেছি। চীন-হংকংয়ের নেতা-প্রতিনিধিরা মতপার্থক্য দূর করে সবার দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য একটা সুস্পষ্ট মীমাংসা করতে সক্ষম হবেন, এমন প্রত্যাশার করে এই আইন করা হচ্ছে।’

চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ের নির্বাহী সরকার জোরালোভাবে এই আইনের বিরোধিতা করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, এই আইন পাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হংকংয়ের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। এই আইন হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং এর মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।

দীর্ঘদিন ধরে চলা চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর ব্যাপারে সম্প্রতি দুই দেশের প্রেসিডেন্ট ইতিবাচক অগ্রগতির কথা জানিয়েছিলেন। তার মধ্যে ট্রাম্প এই বিলটিতে স্বাক্ষর করলেন। বিল পাসের সময়ই এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে চীন তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপে তৈরি এই আইনের বদলা নেয়ার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছে।

ট্রাম্প গতকাল বিলটিতে স্বাক্ষর করার পর চীন পুনরায় এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, মার্কিন এই আইন একইসঙ্গে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। চীনে এই আইনকে তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি অভিহিত করে এর নেতিবাচক ফলাফলের হুমকি দিয়ে রেখেছে।

সিনেটে বিলটি পাস হওয়ার পর অনেকে ধারণা করেছিলেন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে মরিয়া ট্রাম্প এই সময়ে এমন বিলে স্বাক্ষর করবেন না। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসে বিলটির পক্ষে সমর্থন এত ব্যাপক ছিল যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি এর বিরোধিতাও করতেন, তাহলেও এটি আইন হিসেবে পাস হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

এমজে/