হেগের আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করলো সু চি

হেগের আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করলো সু চি

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দেশটির শীর্ষ নেতা অং সান সু চি। তার দাবি, অভিযোগকারী পক্ষ গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়েছে।

আলজাজিরা জানায়, নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে নিজের বক্তব্যে এই দাবি করেন সু চি।

মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রোহিঙ্গা গণহত্যা ও জাতিগত নিধনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নভেম্বরে অভিযোগ আনে গাম্বিয়া।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ১৭ জন বিচারপতির উপস্থিতিতে তিনদিন ব্যাপি এই শুনানি শুরু হয়।

শুনানির প্রথমদিন সু চির উপস্থিতিতে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী নৃশংস কর্মকাণ্ডের অভিযোগগুলো তুলে ধরেন গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু।

বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানির শুরুতে মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি। এতে তিনি গাম্বিয়ার আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।

সু চি জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতকে বলেন, ‘এটা দুঃখের বিষয় যে, গাম্বিয়া রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে একটি অসম্পূর্ণ, বিভ্রান্তিকর চিত্র তুলে ধরেছে। শুধু অনুমানের ভিত্তিতে গণহত্যার বিষয়টি মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।’

তিনি মিয়ানমারকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘যে রাষ্ট্র অপরাধের তদন্তে সক্রিয়, দোষীদের অভিযুক্ত করে এবং সেনাকর্মী ও কর্মকর্তাদের শাস্তি দেয়, সেই রাষ্ট্রের কি গণহত্যার উদ্দেশ্য থাকতে পারে?’

সু চি বলেন, ‘এখানে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর অধিক নজর দেয়া হলেও আমি আশ্বাস দিচ্ছি যে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বেসামরিক অপরাধীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তার ভাষ্য, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি ‘জটিল’ এবং সেখানে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ‘দুর্ভোগ’ তিনি স্বীকার করেন, যাদের অনেকেই নিরাপত্তার জন্য পালিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

তবে ২০১৭ সালের রক্তাক্ত সহিংসতাকে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ বলে অবহিত করেন। রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

এদিকে সু চির এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মিয়ানমারের একজন গবেষক মং জারনি।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের অত্যন্ত হতবাক করা একটি মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করলাম। রোহিঙ্গাদের গণহত্যার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছেন সু চি।’

তিনি বলেন, ‘একজন বার্মিজ হিসেবে আমি অত্যন্ত লজ্জিত। সেখানে আমি যা শুনতে পেয়েছে তা মিথ্যাচার ও প্রতারণাপূর্ণ।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনায় পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

গণহত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ।

এই ঘটনায় বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে মামলাটি দায়ের করে গাম্বিয়া।

প্রসঙ্গত, গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দুই দেশই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই কনভেনশন শুধু দেশগুলোতে গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয়; বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য বিচার করতে বাধ্য করে।