হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার কারণে থমথমে দিল্লি, মৃতের সংখ্যা ৪২ গ্রেফতার ৫১৪

হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার কারণে থমথমে দিল্লি, মৃতের সংখ্যা ৪২ গ্রেফতার ৫১৪

টানা কয়েকদিনের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার পর ব্যাপক পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের কারণে দিল্লির অবস্থা এখন থমথমে। শুক্রবার সকাল থেকে কিছু এলাকায় ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু মৃতের সংখ্যা বেড়েছে আজও। সকালে ৩৮ হলেও মৃতের সংখ্যা বেড়ে এখন ৪২ জন। এছাড়া গ্রেফতার করা হয়েছে ৫১৪ জনকে।

গত রবিবার থেকে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দিল্লি পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলে তখন জানায় ভারতের হাইকোর্ট। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের মদদ দেয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে মোদি সরকার দিল্লি পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে বদলি করেন।

দায়িত্ব নিয়ে তাই দিল্লির নতুন পুলিশ কমিশনার ঘোষণা দিয়েছেন, অভিযুক্তদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে৷ দশকের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক এই দাঙ্গার জন্য দায়ী করা হচ্ছে মোদি সরকারের হিন্দুত্ববাদী পদক্ষেপকে। এরমধ্যে এনআরসি, সিএএ এবং এনপিআর উল্লেখযোগ্য।

মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠেছে তারা দেশটির প্রায় ২০ কোটি মুসলিমের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। এছাড়া দিল্লির এবারের এই দাঙ্গার জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিজেপির এক নেতাকে। তার নেতৃত্বেই ক্ষমতাসীন বিজেপি নাগরিকত্ব সংশোধন আইন বিরোধীদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালানো হয়। আরও কিছু বিজেপি নেতাও রয়েছেন।

পুলিশ বলছে, দাঙ্গায় ৩৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন কিন্তু স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো সূত্রের বরাতে জানাচ্ছে এই সংখ্যাটা ৪২ জন—যা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির পুরো এলাকা এখনও থমথমে। আতঙ্কিত মানুষ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। অনেকে রয়েছেন স্বজন হারানোর শোকে। কেউ আহতদের নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন।

দিল্লি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, হিংসার আগুনে ভষ্মীভূত অনেক বাড়িঘর-দোকানপাটের আশেপাশের ড্রেনগুলোতে তারা মরদেহের উদ্ধারে তল্লাশি চালাচ্ছেন। এদিকে শুক্রবার জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে মসজিদ আছে এমন এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে দু’টি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের কথা জানানো হয়েছে। তবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা দিয়েছেন, সহিংসতার ঘটনায় নিহত বয়স্কদের পরিবারকে ১০ লাখ ও নিহত নাবালকদের পরিবারকে ৫ লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তা দেবে তার রাজ্য সরকার।

বিজেপি নেতাদের উস্কানিমূলক মন্তব্যের ঘটনায় এফআইআর করার ‘সহায়ক পরিবেশ’ এখন নেই বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। আজ দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছে, পুলিশের কর্মকর্তারা সব অডিও-ভিডিও খতিয়ে দেখছেন। তাই এফআইআর দায়ের পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘যথাযথ সময়ে’ এফআইআর দায়ের করা হবে।

ভারত সরকার এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, গত বুধবার সকালের পর থেকে উত্তর-পূর্ব দিল্লির সেসব এলাকায় আর কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। মূলত গত ডিসেম্বরে মোদি সরকার দেশটির ৭০ বছরের পুরনো নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার পর থেকেই বিক্ষোভ চলছে। আইন অনুযায়ী, তিন দেশের অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত।

এমন আইন সংসদে উত্থাপন হওয়ার পর থেকে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিশেষ করে ভারতের সবচেয়ে রাজ্য উত্তরপ্রদেশে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপর দমনাভিযান চালালে অন্তত ৩০ জন সেখানে নিহত হয়। সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলিমের বাস। এতকিছুর পরও মোদি সরকার আইনটি পাশ করায় সংসদে।