করোনা আতঙ্কে ৫৪ হাজার বন্দিকে ছেড়ে দিচ্ছে ইরান

করোনা আতঙ্কে ৫৪ হাজার বন্দিকে ছেড়ে দিচ্ছে ইরান

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তৃতি ঠেকাতে ৫৪ হাজারেরও বেশি কয়েদিকে মুক্তি দিচ্ছে ইরান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয় এমন বন্দিদের মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্র গোলামহোসেইন ইসমাইলি বলেছেন, যে সব কয়েদির দেহে কভিড-১৯ এর উপস্থিতি পাওয়া যাবে না, কেবল তাদেরই জামিন দেয়া হবে। আর যেসব বন্দির সাজার মেয়াদ ৫ বছরের বেশি, তাদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে না বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

বিবিসি জানিয়েছে, জামিনে মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় ব্রিটিশ-ইরানি সমাজকর্মী নাজানিন জাঘারি-র্যাটক্লিফও আছেন বলে যুক্তরাজ্যে ইরানের রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড ও কিলবার্নের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।

তিনি বলেন, ‘আজ-কালের মধ্যে নাজানিন জাঘারি ছাড়া পেতে পারেন বলে রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন।’

২০১৫ সালে তেহরানে মেয়েসহ গ্রেফতার হন নাজানিন। এরপর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ব্রিটিশ-ইরানি নাগরিক হ্যাম্পস্টিডের ভোটার।

তেহরানের এভিন কারাগারে বন্দি নাজানিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে বলে শনিবার তার স্বামী সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কর্তৃপক্ষ তার দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখতে রাজি হয়নি বলেও অভিযোগ ছিল তার।

সোমবার ইসমাইলি এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, নাজানিনের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ‘তিনি (নাজানিন) তাদেরকে তার স্বাস্থ্য ভালো বলে আশ্বস্ত করেছিলেন’, বলেছেন ইরানের বিচার বিভাগের এ মুখপাত্র।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নতুন এ করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে ৯০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১১০ জনে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কভিড-১৯ এর উপস্থিতি চীনের বাইরেই বেশি দেখা যাচ্ছে। ইরানের পাশাপাশি ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাইরাসটির সংক্রমণ বিশ্বজুড়েই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। করোনাভাইরাস দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ইরানের ৭৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে দুই হাজার ৩৩৬ জনের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি মিলেছে। তবে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বলেও অনেকের ধারণা।

শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশটির জরুরি চিকিৎসাসেবা বিভাগের প্রধান পীরহোসেন কলিভান্দসহ অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দেহেও কভিড-১৯ এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এমনকি পার্লামেন্টের ২৯০ সদস্যের মধ্যে ২৩ জনের দেহেও প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। এ সংখ্যা মোট এমপির ৮ শতাংশ।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনিকে লেখা পার্লামেন্টের স্পিকার আলী লারিজানির একটি চিঠিতে এই চিত্র উঠে এসেছে বলে জানান তিনি।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির এক উপদেষ্টা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সোমবার মারা গেছেন। ৭১ বছর বয়সী মোহাম্মদ মীরমোহাম্মাদি খামেনির খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে।