করোনা ভাইরাস নিয়ে ৪ দশক আগে পূর্বাভাস!

করোনা ভাইরাস নিয়ে ৪ দশক আগে পূর্বাভাস!

বিষয়টি কাকতালীয়। বিস্ময়কর। কারণ, বর্তমান নোবেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রায় ৪ দশক আগে একটি থ্রিলার উপন্যাস লিখেছিলেন ঔপন্যাসিক ডিন কুনট্জ। তাতে ভাইরাল সংক্রমণ সৃষ্টি করে এমন একটি ভাইরাসের উল্লেখ করেন তিনি। এর নাম দেন উহান-৪০০। ওই উপন্যাসে এই ভাইরাসটি চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে একটি ল্যাবরেটরিতে জীবাণুঅস্ত্র হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। কাকতালীয় এখানেই যে, এই উহান থেকেই এবার নতুন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ডিন কুনট্জের ওই উপন্যাসের নাম ‘দ্য আইজ অব ডার্কনেস’।

ফলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, ১৯৮১ সালে লেখা ওই উপন্যাসে কি এই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পূর্বাভাষ দেয়া হয়েছিল? এসব নিয়ে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

বাস্তবতা এখন যেটা তাতে উপন্যাস এবং বাস্তবতার মধ্যে অনেক বড় ব্যবধান। এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে পশ্চিমা মিডিয়ার অনেক পত্রপত্রিকায়। তাতে বলা হচ্ছে, ১৯৮১ সালে লেখা ওই থ্রিলার উপন্যাসেই লেখক ডিন কুনট্জ এই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে পূর্বাভাষ দিয়েছিলেন বলে মনে করছেন তার ভক্তরা। চীনের উহানে ল্যাবরেটরিতে সৃষ্টি করা হয় তার উপন্যাসের জীবাণুঅস্ত্র ‘উহান-৪০০’। উহানের ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা হয় বলে এর এমন নাম দিয়েছিলেন তিনি। তাই ওই উপন্যাসের একটি চরিত্রকে বলতে শোনা যায়- ‘দে কল দ্য স্টাফ উহান-৪০০ বিকজ ইট ওয়াজ ডেভেলপড অ্যাট দেয়ার আরডিএনএ ল্যাবস আউটসাইট দ্য সিটি উহান’। অর্থাৎ তারা এর নাম দিয়েছেন ‘উহান-৪০০’। কারণ, এই ভাইরাসটি উহান শহরের বাইরে আরডিএনএ ল্যাবরেটরিতে সৃষ্টি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নিক হিন্টন তার টুইটারে লিখেছেন, ডিন কুনট্জে তার ১৯৮১ সালে লেখা একটি উপন্যাসে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। ওই একাউন্টে নিক হিন্টন ওই বইয়ের যে প্যাসেজে বা অংশে ওই বর্ণনা ছিল তার একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করেন। তবে এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকা থেকে ওই লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি তার উপন্যাসের তদন্তের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেন নি।

যদিও প্রথমে উহানে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে তথাপি বিজ্ঞানিরাকোনো ঐক্যমত আসেন নি যে, কিভাবে এবং কোথা থেকে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়, উহানে বন্যপ্রাণির একটি বাজার থেকে এই ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়েছে। অন্যরা বলেন, এই ভাইরাসটি চীনের ‘উহান ভাইরোলজি ল্যাব’ থেকে ছাড়া হয়েছে। ‘উহান ভাইরোলজি ল্যাব’ হলো চীনের বায়োসেফটি লেভেল। অর্থাৎ বায়োলজিক্যালি যেসব জিনিস সেখানে তৈরি হয় তার নিরাপদ ভাগাড় এটা। তবে এ তত্ত্বের পিছনে কোনো প্রমাণ নেই।

বর্তমান করোনা ভাইরাস এবং উপন্যাসের উহান-৪০০ ভাইরাসের মধ্যে খুব বেশি মিল হলো তাদের উৎপত্তিস্থল। এ ছাড়া তাদের মধ্যে মিল খুব সামান্যই। ‘দ্য আইজ অব ডার্কনেস’ উপন্যাসে উহান-৪০০ হলো একটি জীবাণু অস্ত্র, ভাইরাস। মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যে এতে শতকরা ১০০ ভাগ মানুষকে হত্যার ক্ষমতা আছে। উপন্যাসে বর্ণনা করা হয়েছে, এই ভাইরাসটি সৃষ্টি করা হয়েছে একটি শহর বা একটি দেশকে সমূলে উৎখাত বা মুছে দেয়ার জন্য। এতে ব্যয়বহুল কোনো কিছু ব্যবহার করতে হবে না।

তাই উপন্যাসের একটি চরিত্রকে বলতে শোনা যায়, ‘উহান-৪০০ একটি খাঁটি অস্ত্র। এটি শুধু মানবজাতির ওপর প্রভাব ফেলে। অন্য কোনো জীবিত প্রাণি এটা বহন করতে পারে না। সিফিলিসের মতো, উহান-৪০০ কোনো মানুষের দেহের বাইরে এক মিনিটের বেশি জীবিত থাকতে পারে না। এর অর্থ হলো, এটা কোনো কিছুকে স্থায়ীভাবে সংক্রমিত করতে পারে না। কোনো স্থানকে পুরোপুরি সংক্রমিত করতে পারে না অ্যানথ্রাক্সের মতো এবং অন্য ভাইরাস সংক্রান্ত মাইকোঅর্গানিজম যেমন পারে। ’

বাস্তবে নতুন করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর শতকরা হার মাত্র ২ থেকে ৩ ভাগ। এটি বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে এক মিনিটের বেশি সময়। হতে পারে কয়েক ঘন্টা বা দিন। যদিও বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে এখনও গবেষণা করছেন।

নিক হিন্টন তার উপন্যাসে বলেছেন, উহান-৪০০ ভাইরাসটি আক্রমণ করে মানুষের ব্রেনে। উপন্যাসের একটি চরিত্রকে দিয়ে তিনি বলিয়েছেন, ‘এই ভাইরাস মানুষের ব্রেনের মূলে স্থানান্তর হয়। তারপর তা বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ শুরু করে। আক্ষরিক অর্থে তা ব্রেনের টিস্যুকে খেয়ে ফেলতে থাকে, যেমন ব্যাটারির এসিড গিলে খায় পনির বাঁধার জালি কাপড়কে। এই ভাইরাসটি বেনের একটি অংশকে ধ্বংস করে দেয়, যা শরীরের সব স্বয়ংক্রিয় কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে’।

অন্যদিকে নতুন করোনা ভাইরাস প্রাথমিকভাবে সংক্রমিত হয়ে মানুষের শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে। তা আরো কঠিন আকার ধারণ করে নিউমোনিয়াতে রূপান্তরিত হয়। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট।

উপন্যাসে বর্ণিত উহান-৪০০ ভাইরাসকে তার বংশবৃদ্ধির সময় মাত্র চার ঘন্টা বলা হয়েছে। অন্যদিকে করোনা ভাইরাস কয়েক দিন এমন কি দুই সপ্তাহে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। চূড়ান্তভাবে হতাশার কথা হলো একটি বিতর্কিত তত্ত্ব। তাতে বলা হয়েছে, ‘দ্য আইজ অব ডার্কনেস’-এর প্রথম সংস্করণে এই ভাইরাসকে বলা হয়েছিল ‘গোর্কি-৪০০’। রাশিয়ার গোর্কি শহরে বসে এই জীবাণু অস্ত্রের ল্যাব সম্পর্কে লিখেছিলেন বলে এমন নাম দেয়া হয় বলে বলা হয়েছে। ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়। তারপরের সংস্করণে তিনি ওই ভাইরাসের নাম পাল্টে সেখানে চীনকে ভিলেন বানান।

এমজে/