ত্রিমুখী সংকটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ভারতের আত্মা: মনমোহন সিং

ত্রিমুখী সংকটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ভারতের আত্মা: মনমোহন সিং

আসন্ন বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভারত। তাও আবার একইসঙ্গে তিনদিক থেকে। বিপদের এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। শুক্রবার ভারতের দ্য হিন্দু সংবাদপত্রে লেখা এক কলামে এ বিপদের কথা জানান তিনি। এতে তিনি লিখেন, উদার গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল হিসেবে যে ভারত গড়ে উঠেছিল তা এখন ভারত পিছিয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা প্রকাশ করেন, চলমান সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের প্রভাব এই ত্রিভূজ ভারতের আত্মাকে ক্ষত বিচ্ছিন্ন করে দেবে। একইসঙ্গে বিশ্বে অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে ভারতের যে অবস্থান ছিল তাও ধ্বংস হয়ে যেতে আরে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে দিল্লিতে বড় ধরণের সহিংসতা দেখা গেছে। আমরা কোনো কারণ ছাড়াই অর্ধশত ভারতীয়কে হারিয়েছি।

আরো কয়েকশত মানুষ আহত হয়েছে। রাজনীতিবিদদের উস্কানিতে সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, সরকারি স্থাপনা ও বসত বাড়ি জ্বলেছে এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। এটি ভারতের ইতিহাসের এক অন্ধকার যুগ। জনগণকে রক্ষার যে ধর্ম আইনরক্ষাকারী সংস্থাগুলোর পালন করার কথা ছিল তাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। বিচার বিভাগ এবং গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমও তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।
তিনি আরো বলেন, যখন আমাদের অর্থনীতি ধুকছে তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেশের অর্থনীতিকে শুধু আরো ধীর করবে। এখন এটি স্পষ্ট যে, ভারতের অর্থনীতির এই দুর্দশার কারণ, দেশের বেসরকারি ক্ষাতে পর্যাপ্ত পরিমানে বিনিয়োগ নেই। বিনিয়োগকারী, শিল্পপতি ও উদ্যোক্তারা নতুন প্রকল্প হাতে নিতে চাচ্ছেন না। তারা এসকল প্রকল্প থেকে সব হারানোর ঝুঁকিতে ভুগছেন। সামাজিক অস্থিরতা ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তাদের এ ভয়কে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে সামাজিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু ভারতে এখন তা ঝুঁকির মুখে। বিনিয়োগ কমে যাওয়া মানে কর্মসংস্থান কমে যাওয়া, আয় কমে যাওয়া। অর্থাৎ, সার্বিকভাবে দেশে ক্রয় ও চাহিদাও কমে যাবে। এক ভয়াবহ চক্রে আটকে গেছে ভারতের অর্থনীতি।

তিনি উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্বজুড়ে মহামারির রূপ ধারণ করা করোনা ভাইরাস নিয়েও। মনমোহন সিং তার কলামে লিখেন, এটি এখনো স্পষ্ট নয় যে বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাস কতখানি প্রভাব ফেলবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, ভারতের উচিৎ এ ভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করা। স্বাস্থ্যখাতে এমন একটি বিপর্যয় হতে পারে রাষ্ট্রের জন্য সবথেকে বড় হুমকি। ভারত সাম্প্রতিক সময়ে এত বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে নি। তাই ভারতবাসীর উচিৎ সম্মিলিতভাবে এই হুমকির মোকাবেলা করা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই জনগণকে কাজের মাধ্যমে বোঝাতে হবে, শুধু কথার মাধ্যমে নয়। তাকে জাতিকে আশ্বস্থ করতে হবে যে, তিনি করোনা ভাইরাস নিয়ে জ্ঞাত এবং এটি প্রতিরোধে তিনি সাহায্য করবেন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভারত সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা দ্রুততার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে।

এমজে/