ঝুলন্ত রাজ্যে ‘কমলা ঝড়’ তুলবেন বাইডেন

ঝুলন্ত রাজ্যে ‘কমলা ঝড়’ তুলবেন বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন তার রানিং মেট হিসেবে কমলা হ্যারিসকে বেছে নেয়ার সুফল পেতে শুরু করেছেন। ভারতীয়-জ্যামাইক্যান বংশোদ্ভূত এ নারীকে রানিং মেট ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্লাক রেডিও তাদের জনপ্রিয় শোতে কমলাকে নিয়ে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে।

কমলার নাম ঘোষণার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় বাইডেনের প্রচারণা শিবিরের তহবিলে জমা পড়েছে ৩৪ মিলিয়ন ডলার, যা রেকর্ড। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঝুলন্ত রাজ্যগুলোতে (সুইং স্টেটস) ‘কমলা ঝড়’ তোলার পরিকল্পনা করছেন বাইডেন।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, আগামী সপ্তাহগুলোতে সুইং স্টেটগুলোর কৃষ্ণাঙ্গ, অভিবাসী, তরুণ অ্যাকটিভস্ট ও নারী ভোটারদের সঙ্গে ওয়াশিংটন থেকে অনলাইনে জনসংযোগে নামবেন কমলা। এর পরবর্তী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে বাইডেন-কমলা জুটির যৌথ টেলিভিশন সাক্ষাৎকার।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আর মাত্র ৮১ দিন বাকি। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারাতে জোর প্রচারণায় নেমেছে বাইডেন-কমলা জুটি। বৃহস্পতিবার বাইডেনকে পাশে রেখে করোনাভাইরাস নিয়ে ব্রিফিং করেছেন কমলা।

পরে ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা হিসেবে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন, যাকে বিশেষজ্ঞরা ‘বাইডেন-হ্যারিস কৌশল’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। ওই বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের গভর্নরদের নির্দেশ দিয়েছেন যাতে নাগরিকরা ঘরের বাইরে বের হওয়ার আগে মাস্ক পরেন।

মাস্কবিধি মানলে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচবে বলেও জানান বাইডেন। কমলা বলেন, ‘এটাই আসল নেতৃত্ব। যারা জনগণের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা করেন।’

এদিন করোনাভাইরাস নিয়ে ট্রাম্পের ভূমিকার সমালোচনা করেন বাইডেন। প্রেসিডেন্টকে ধারালো বাক্যবাণে আক্রমণ করেন কমলা। বলেন, ‘করোনাভাইরাস বিশ্বের সব দেশকেই আক্রান্ত করেছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর কারণ, এ ভাইরাসকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প। ভাইরাস টেস্ট চালু করা থেকে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরা প্রশ্নে তার অবস্থান বৈপরীত্যে

ভরা। একেক সময়ে একেক কথা বলছেন। মাতালের মতো তিনি দাবি করেছিলেন, বিশেষজ্ঞদের চেয়েও করোনা বিষয়ে তার জ্ঞান বেশি। এর ফল- এখন প্রতি ৮০ সেকেন্ডে একজন মার্কিনি করোনায় মারা যাচ্ছেন।’

বাইডেনের অর্থনৈতিক টিম বলছে, সংখ্যালঘু ভোটার টানতে এবং তহবিলকে চাঙ্গা করতে কমলার কারিশমার ঝাকুনি দেখবে যুক্তরাষ্ট্র। এ কথার প্রমাণও এখন হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে। কমালার নাম ঘোষণার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ডেমোক্র্যাট প্রচারণা শিবির ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচনে জিততে বাইডেনকে শহরতলির অধিক অবস্থাসম্পন্ন ও শিক্ষিত নারী ভোটারদের হাতে রাখতে হবে।

অন্যদিকে তৃণমূল পর্যায়ে অশ্বেতকায়, বিশেষত আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটারদের উজ্জীবিত করতে হবে। একইসঙ্গে তরুণ অ্যাকটিভিস্টদেরও নজর কাড়তে হবে। বিশেষ করে সুইং স্টেটগুলোতে এসব ভোটারদের টানতে না পারলে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে কমলাই হতে পারে বাইডেনের জিয়নকাঠি।

সুইং স্টেট হচ্ছে সেসব রাজ্য যেগুলো প্রার্থীদের কারণে ভোট এদিকে বা ওদিকে যেতে পারে। যেসব রাজ্যে অনেক সময় প্রচারণা বিনিয়োগ বা প্রার্থীদের না পাঠানোর কারণে বিজয়ী হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ওহাইও বা ফ্লোরিডার মতো ঝুলন্ত রাজ্যগুলোতেই মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়।

২০২০ সালের এরকম সুইং স্টেট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে আরিজোনা, পেনসিলভেনিয়া এবং উইসকনসিনকে। এবার এসব রাজ্যে বিশেষ নজর দিয়েছেন বাইডেন। তিনি এসব রাজ্যের সংখ্যালঘু ও নারীদের ভোটার টানতে কমলাকে নিয়োগ দিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে তার ভার্চুয়াল অভিযান।

বাইডেনের প্রচারণা শিবির আশা করছে, আফ্রিকান-আমেরিকান অধ্যুষিত শহর ডেট্রয়েট, মিলাওয়াউকি ও ফিলাডেলফিয়াকে হাতে রাখতে সক্ষম হবেন হ্যারিস। এছাড়া তিনি অভিবাসী অধ্যুষিত আরিজোনা, ফ্লোরিডা ও টেক্সাসের ভোটারদের অনুপ্রাণিত করতে পারবেন।

এমজে/