ওয়াশিংটনের চাপের মুখেও ইরানের পাশে বাকিরা

ওয়াশিংটনের চাপের মুখেও ইরানের পাশে বাকিরা

মঙ্গলবার ইরান ও স্বাক্ষরকারী দেশগুলো আবার পরমাণু চুক্তির প্রতি আস্থা প্রকাশ করলো। ইরানের উপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা চাপানোর প্রচেষ্টার বিরোধিতার প্রশ্নেও ঐক্য অটুট রইলো।

আমেরিকার প্রবল চাপ সত্ত্বেও ইরান ও আন্তর্জাতিক সমাজের মধ্যে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি এখনো টিকে রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে তেহরান কিছু শর্ত লঙ্ঘন করলেও এখনো পুরোপুরি চুক্তি বর্জন করেনি।

বাকি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীন পরমাণু চুক্তি চালু রাখতে বদ্ধপরিকর৷ মঙ্গলবার ভিয়েনায় এক বৈঠকে সব পক্ষ এমন অঙ্গীকার করেছে৷

আলোচনার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি হেলগা স্মিড এক টুইট বার্তায় লেখেন, যে অংশগ্রহণকারীরা ইরান চুক্তি বাঁচিয়ে রাখতে ঐক্যবদ্ধ এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বোঝাপড়া পুরোপুরি কার্যকর করার পথ খুঁজতে বদ্ধপরিকর।

ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে সরে এলেও সেই চুক্তিকেই হাতিয়ার করে ইরানের উপর কার্যত জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর করতে চাইছে। ইরান চুক্তি লঙ্ঘন করছে, এমন যুক্তি দেখিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সে দেশের বিরুদ্ধে ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া চালু করতে চাইছে ওয়াশিংটন। চুক্তির বাকি স্বাক্ষরকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের এক্তিয়ার ও যুক্তি মানতে নারাজ।

ফলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চলতি মাসেই বিষয়টিকে ঘিরে আবার সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। প্রায় কোনো দেশই এই প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একমত না হওয়ায় সেই উদ্যোগ বিফল হবে বলে পূর্বাভাষ দিয়েছেন আগস্ট মাসে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি দেশ ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডিয়ান ত্রিয়ানসিয়া জানি৷। চলতি মাসে সভাপতি হিসেবে নাইজারও সে বিষয়ে একমত।

নিরাপত্তা পরিষদে বিফল হলেও ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের উপর চাপ বাড়াতে রাখতে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। পরমাণু চুক্তির অংশগ্রহণকারী দেশগুলির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়েও ট্রাম্প সে সব দেশের বিরুদ্ধে কী মনোভাব নেন, সে বিষয়েও জল্পনাকল্পনা চলছে।

ওয়াশিংটনের চাপের মুখে ও বাকিদের উপর চাপ বাড়াতে ইরান প্রকাশ্যে চুক্তির কিছু শর্ত লঙ্ঘন করলেও সার্বিকভাবে চুক্তি মেনে চলছে। আন্তর্জাতিক পরিদর্শনকারীদেরও সে দেশের বেশিরভাগ পরমাণু স্থাপনায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। সদিচ্ছা দেখাতে গত সপ্তাহে ইরান এমনকি দুটি গুদামে ইনস্পেকটরদের প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে৷ সেখানে অঘোষিত পরমাণু উপাদান রাখা আছে বলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। পরমাণু চুক্তির আগেই সেই সব গুদাম চালু ছিল বলে ইরান এতকাল পরিদর্শনকারীদের সেখানে প্রবেশের সুযোগ দেয়নি।

পরমাণু চুক্তি সার্বিকভাবে মেনে চললেও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হচ্ছে না। বিশেষ করে অন্য দেশকে পরমাণু উপাদান সরবরাহের প্রশ্নে সংশয় দেখা দিচ্ছে৷ সে দেশ নাতানৎস পরমাণু কেন্দ্র থেকে উন্নত সেনট্রিফিউজ পাচার করেছে বলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে৷ জুলাই মাসে সেই কেন্দ্রে অন্তর্ঘাতের ঘটনা ঘটেছিল।

ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ বলে তিনি দাবি করেন। ডয়চে ভেলে।