লাদাখে ভারত-চীন ফের উত্তেজনা

লাদাখে ভারত-চীন ফের উত্তেজনা

ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে লাদাখ সীমান্ত। উত্তেজনা হ্রাসে কয়েক মাসের চেষ্টার পর সীমান্তে ফের মুখোমুখি অবস্থানে চীনা ও ভারতীয় সেনারা।

উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে আরেক চোট। ট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে ভারত। চীনা সীমান্ত বরাবর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাতে সেনা সমাবেশ করছে।

এছাড়া চীনঘেঁষা সব সীমান্তেই জোর নজরদারির পাশাপাশি হাই অ্যালার্ট জারি করেছে। রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে সিকিম সীমান্তে। চীনের বিরুদ্ধে সমঝোতা ভেঙে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে নয়াদিল্লি।

তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং। সেই সঙ্গে হুশিয়ারি দিয়েছে, সীমান্তে সামরিক শোডাউন করলে ভারতের পরিণাম খুবই ভয়ংকর হবে।

সর্বশেষ শনিবার রাত ও রোববার সকালে দুই পক্ষের সেনার মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভারতীয় স্পেশাল ফোর্সের এক সেনা নিহত হয়েছেন।

তবে সেনা মৃত্যুর এ খবর অস্বীকার করেছে নয়াদিল্লি। ওই সংঘর্ষের পরে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হলেও উত্তেজনা মোটেই কমেনি। খবর আলজাজিরা, ডয়েচে ভেলে ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

গত মে মাস থেকেই লাদাখে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ জুন রাতের অন্ধকারে ভারতীয় ও চীনা বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি সংঘাতের ঘটনা ঘটে। নৃশংস হামলায় ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হন। নিহত হয় চীনা পক্ষেও।

এরপর শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাপর্যায়ে দফায় দফায় আলোচনার এক সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছায় দুই দেশ। কিন্তু চলতি সপ্তাহে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লাদাখ সীমান্ত। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ২৯ আগস্ট সীমান্তে চীনা সেনাদের আগ্রাসনের একটি প্রচেষ্টা থামিয়ে দিতে পেরেছে তারা।

পাল্টা দাবিতে বেইজিং জানিয়েছে, তারা সীমান্তে কোনো আগ্রাসনের প্রচেষ্টা চালায়নি। ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, গত সাতদিনে পরপর দু’বার মুখোমুখি সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রথম দিন শনিবার সামান্য সংঘাত হলেও দ্বিতীয় দিন রোববার তেমনটা ঘটেনি।

চীনা সেনার প্রায় ৫০০ জওয়ান ওই এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু অনেকদিন আগে থেকেই ওই এলাকায় ভারতীয় সেনা কড়া নজর রেখেছে।

চীনা বাহিনীর অনুপ্রবেশের চেষ্টা রুখে দিতে পারলেও ভারতীয় সেনা এক জওয়ান নিহত হন বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। আরেক জওয়ান গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহত হওয়া সেনা জওয়ান স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের ছিলেন। তিনি মূলত ছিলেন তিব্বতের।

তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনও সেই জওয়ানের নিহত হওয়ার কোনো খবর দেয়া হয়নি। তিব্বতের সংসদের নির্বাসিত সদস্য নামগাল ডোলকার সেই জওয়ানের শহীদ হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে লাদাখে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, যে কোনো সময় ফের বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-চীন সীমান্তবর্তী প্রতিটি অঞ্চলে হাই অ্যালার্ট জারি করেছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত সেনা।

গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, পূর্ব লাদাখে প্যানগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে ভারতীয় সেনাকে ব্যস্ত রেখে উত্তর-পূর্ব ভারতের চীন সীমান্তে বড়সড় আক্রমণ চালাতে পারে চীন।

বিতর্কিত এলাকায় ইতোমধ্যে আর্মার্ড রেজিমেন্ট মোতায়েন করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। একই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারতীয় বাহিনীও। বেশকিছু এলাকায় দুই দেশের ট্যাঙ্ক বাহিনী পরস্পরের নিশানায় রয়েছে।

প্যানগং পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মঙ্গলবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। এ সময় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং সেনাপ্রধান এমএম নরভনে বৈঠকে হাজির ছিলেন।

এদিন নয়াদিল্লির চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র জি রং বলেন, চীনে সেনা সংযত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আমরা চাই, ভারতীয় সেনা উসকানিমূলক আচরণ বন্ধ করুক এবং বৈঠকে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করুক।

এমজে/