যুক্তরাষ্ট্রে আরেক কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার অভিযোগে ৭ পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

যুক্তরাষ্ট্রে আরেক কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার অভিযোগে ৭ পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

আরো একজন নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করেছে মার্কিন পুুলিশ। এ অভিযোগে রোচেস্টারের মেয়র লাভলি ওয়ারেন পুলিশের সাত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ক্রমবর্ধমান বর্ণবাদ থেকেই এই হত্যাকান্ড। জর্জ ফ্লয়েড নামের কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে নৃশংসভাবে হত্যার প্রায় দু’মাস আগে হত্যা করা হয়েছে ডানিয়েল প্রুদে নামের এক ব্যক্তিকে। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে আবার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে। ডানিয়েল প্রুদেকে হত্যা করা হয়েছে মার্চে। কিন্তু সবেমাত্র এ বিষয়টি রিপোর্ট করা হয়েছে।

বিষয়টি গোপন ছিল। জর্জ ফ্লয়েডকে যেভাবে মাটিতে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে, অনেকটা একই রকম ঘটনা ঘটেছে এ ক্ষেত্রেও। এ তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় ডানিয়েল প্রুদে হত্যার পর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সাত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তবে তারা ছুটিতে থাকাকালীন বেতন পাবেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

রোচেস্টারের মেয়র ওয়ারেন বৃহস্পতিবার এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি বলেছেন, কাউন্সিলের পরামর্শক্রমে আমি ওই কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করছি। একই সঙ্গে তদন্ত সম্পন্ন করার জন্য আহŸান জানাচ্ছি এটর্নি জেনারেলের প্রতি। তিনি আরো বলেন, ডানিয়েল প্রুদেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, আমাদের সমাজ। এবং এক্ষেত্রে আমিও ব্যর্থ। তার মৃত্যু আমাদেরকে আরো জানান দিয়েছে যে আমরা এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে, যা আমরা অতীতেও মুখোমুখি হয়েছি এবং এখনও হচ্ছি।

এ সময় তিনি জানান, সিটি পুলিশ প্রধান লা’রন সিঙ্গলটারি মাত্র গত মাসের শুরুর দিকে তাকে এ বিষয়টি অবহিত করেছেন। এর আগে তাকে জানানো হয় নি ডানিয়েল প্রুদের ঘটনা। হত্যাকান্ডের সময় পুলিশের বডি ক্যামেরায় যে ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল, তা জনগণের অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রকাশ করা হয় বুধবার। ফলে এই হত্যাকাÐের বিস্তারিত সামনে চলে আসে। মিস ওয়ারেন বলেন, শুরুতে তাকে ঘটনা সম্পর্কে যেভাবে বর্ণনা করেছিলেন পুলিশ প্রধান, ভিডিওতে দেখা যায় তার চেয়ে পুরো ভিন্ন ঘটনা। মিস ওয়ারেন আরো বলেন, পুলিশ প্রধানের এমন আচরণে তিনি গভীরভাবে, ব্যক্তিগতভাবে ও পেশাগতভাবে হতাশ। তবে এ সময় পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেন নি মিস ওয়ারেন ।

ওদিকে জনগণের কাছ থেকে বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগ বুধবার প্রত্যাখ্যান করেছেন পুলিশ প্রধান সিঙ্গলটারি। তিনি বলেছেন, তারা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন নি। ওদিকে এপ্রিলে তদন্তভার হাতে নিয়েছেন নিউ ইয়র্কের এটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস-এর অফিস।

কিভাবে মারা যান ডানিয়েল প্রুদে
ডানিয়েল প্রুদের ভাই জো বলেছেন ডানিয়েলের মানুসক সমস্যা ছিল। এ জন্য ২৩শে মার্চ তিনি পুলিশে কল করেন। এদিন রাস্তায় হালকা তৃষারপাত হচ্ছিল। পুলিশ পৌঁছামাত্র নগ্ন হয়ে রাস্তায় দৌড়ানো শুরু করেন ডানিয়েল। পুলিশের বডি ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিতে দেখা যায়, পুলিশ যখন তাকে নিবৃত করতে সক্ষম হয় তখন রাস্তার ওপর শুয়ে পড়েছেন ডানিয়েল। এরপরই তাকে পুলিশ কর্মকর্তাদের কথা মেনে চলতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে তিনি রাস্তার ওপর বসে পড়েন। আবার ক্ষুব্ধ হন। এ সময় তিনি পুলিশের কাছে অর্থ অথবা একটি বন্দুক দাবি করেন। তিনি মাটিতে কয়েক দফা থুথু ফেলেন। তবে কোনো শারীরিক ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন এমনটা দেখা যায় নি। পুলিশ বলেছে, এ সময় ডানিয়েল প্রুদে তাদেরকে বলেছেন যে, তার কোভিড-১৯ আছে। এ সময় তারাই তার গায়ে থুথু ছিটায়। একজন কর্মকর্তাকে দেখা যায়, ডানিয়েল প্রুদের মাথা দুই হাতে ধরে নিচের দিকে চাপ দিচ্ছেন। আর বলছেন, থুথু ফেলা বন্ধ করো। তাদের কথা শোনেন ডানিয়েল। এক পর্যায়ে প্যারামেডিকসদের ডাকা হয়। এম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। ৩০ শে মার্চ তার পরিবারের সদস্যরা তার লাইফ সাপোর্ট প্রত্যাহার করান।

এমজে/