সাংবাদিকদের ভিসা: যুক্তরাষ্ট্র-চীন পাল্টাপাল্টি

সাংবাদিকদের ভিসা: যুক্তরাষ্ট্র-চীন পাল্টাপাল্টি

যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াকে টার্গেট করে নতুন ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করছে চীন। পরস্পরের মিডিয়া আউটলেটকে টার্গেট করে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি। তারই সর্বশেষ ধাপ এটি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ার জন্য কাজ করেন এমন সাংবাদিকের ভিসা বাতিল হতে পারে চীনে। প্রেস ক্রেডেনশিয়াল কার্ড ইস্যুতে গড়িমসি করছে চীন। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে যখন উত্তেজনা বিরাজ করছে তখন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমে কাজ করা বিদেশি সাংবাদিদের বিরুদ্ধে নতুন এই ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে চীন কর্তৃপক্ষ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। সাধারণত বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের যে প্রেস ক্রেডেনশিয়াল কার্ড দেয়া হয় চীন থেকে, তার মেয়াদ থাকে এক বছর।

এর মেয়াদ শেষ হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে নতুন করে তা নবায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এমন সময় গত সপ্তাহে বেশ কিছু সাংবাদিককে একটি চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে চীন। তাতে বলা হয়েছে, তাদের প্রেস ক্রেডেনশিয়ালের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নতুন প্রেস কার্ডের পরিবর্তে তাদেরকে এই চিঠি ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা যে সাংবাদিক এটা প্রমাণ করতে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রেস কার্ডের সঙ্গে এই চিঠিটি সঙ্গে রাখতে হবে। যেহেতু চীনের ভিসা প্রেসকার্ডের সঙ্গে রাখতে হয়, তাই সাংবাদিকদের একটি নতুন ভিসা দেয়া হয়েছে। এর মেয়াদ মাত্র দুই মাস। স্বাভাবিক ভিসার মেয়াদ এক মাস হলেও, এই ভিসার মেয়াদ সে তুলনায় অত্যন্ত কম।

উপরন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ বলেছে, অস্থায়ী প্রেস ক্রেডেনশিয়াল যেকোনো সময় বাতিল করা হতে পারে। এর ফলে অনেক সাংবাদিক বিপদে পড়ে যেতে পারেন। কারণ, তারা জানতে পারছেন না, কতদিন বৈধভাবে তারা চীনে অবস্থান করতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছেন সিএনএনের সাংবাদিক ডেভিড কালভার। তিনি একজন আমেরিকান।

সিএনএন জানতে পেরেছে যে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের জন্য যেসব যুক্তরাষ্ট্রের অথবা যুক্তরাষ্ট্রের নন- এমন সাংবাদিক কাজ করেন, তাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে। চীনা কর্মকর্তারা কালভারকে বলে দিয়েছেন, সর্বশেষ যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সেটা রিপোর্টিং করার কারণে নয়। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা সাংবাদিকদের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন যে আচরণ করেছে, তার প্রতিশোধ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে চীন।

চীন যে ভিসার মেয়াদ সংক্ষিপ্ত করেছে সে বিষয়ে রবিবার নিশ্চিত করেছেন সিএনএনের মুখ্যপাত্র। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি বেইজিংয়ে অবস্থান করা আমাদের একজন সাংবাদিককে ভিসা দেয়া হয়েছে মাত্র দু’মাসের জন্য। স্বাভাবিক সময়ে এর মেয়াদ থাকে ১২ মাস। তবে চীন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। স্থানী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা সেখানে কাজ অব্যাহত রাখবো।

রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, চীন সরকারের এমন তৎপরতা সম্পর্কে তাদেরকে সম্প্রতি জানিয়েছে বেইজিংয়ে অবস্থানরত কূটনীতিকরা। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মর্গান ওরতাগাস বলেছেন, এসব কর্মকান্ডের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই হতাশ। এতে চীনে রিপোর্ট করার পরিবেশের অবনতি ঘটবে।

উল্লেখ্য, গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত চীনা সাংবাদিকদের ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয় ওয়াশিংটন।

চীন থেকে বলা হয়, চীনা সাংবাদিকরা ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য যে আবেদন করেছিলেন, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের তরফ থেকে তারা কিছুই জানতে পারেন নি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা সাংবাদিকদের কাজ ও জীবনযাপন বিঘ্নিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। যদি চীনা সাংবাদিকদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হয়, তাহলে নভেম্বরের শুরুর দিকে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। প্রকৃতপক্ষে এ সময়েই সিএনএনের কালভারের নতুন চীনা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।