যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০

ভোট যুদ্ধে সমানে টক্কর বাইডেন-ট্রাম্পের

ভোট যুদ্ধে সমানে টক্কর বাইডেন-ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জয়ী হতে যাচ্ছেন সেটি এখনও পরিস্কার নয় কারণ কিছু অঙ্গরাজ্যের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে এই বিষয়টি যেখানে করোনাভাইরাসের কারণে ডাক মারফত আসা ভোট এখনও গণনা করা হয়নি।

প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প অনেকগুলো রাজ্যেই উল্লেখযোগ্য ভাবেই এগিয়ে আছেন তবে মনে করা হচ্ছে যে ব্যালটগুলো এখনও গণনা করা হয়নি সেগুলো গণনা করলে হয়ত ফলাফল জো বাইডেনের পক্ষে যেতে পারে কারণ বাইডেনের সমর্থকরা বিপুল সংখ্যায় ডাক মারফত ভোট দিয়েছেন।

এই অনিশ্চয়তা সত্বেও ট্রাম্প আজ বুধবার খুব ভোর বেলায় হোয়াইট হাউজে ক্যামেরার সামনে হাজির হয়ে ঘোষণা করেন যে তিনি বিশ্বাস করেন তিনি জয়লাভ করেছেন এবং বলেন যে আর কোন ভোট গণনা বন্ধ করাতে তিনি সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হবেন। ট্রাম্প বলেন , তাঁর কথায় , “ এটি আমাদের দেশে বড় রকমের জালিয়াতি। আমি এরই মধ্যে জয়লাভ করেছি”।

এর আগে বাইডেন তাঁর নিজের শহর ডেলাওয়ারের উইলমিংডনে তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তাদের ধন্যবাদ জানান এবং এই আস্থা রাখতে বলেন যে শেষ পর্যন্ত তিনি টিকে যাবেন ।

তিনি তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন , “ আপনারা বিশ্বাস রাখুন , আমরা এই নির্বাচনে জিততে চলেছি”। এই সময়ে তাঁর সমর্থকরা করতালি এবং গাড়ির হর্ণ বাজিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। তবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রাজ্যের ভোট গণনার সময়ে দেখা যায় যে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে আছেন।

সে বিষয়ে বাইডেন বলেন , “ আমাদের ধৈর্য্য রাখতে হবে”।

ওদিকে হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্প টুইট করেন, “ আমরা বিপুল ভাবে এগিয়ে আছি কিন্তু তারা নির্বাচনে চুরি করার চেষ্টা করছে”। টুইটার অবশ্য ঐ পোস্টকে বিতর্কিত এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সম্বলিত বার্তা বলে চিহ্নিত করেছে।

পরে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলেন রিপাবলিকান আইনজীবিরা জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান এবং উইসকনসিন রাজ্যগুলোর ভোট গণনা বন্ধ করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টকে আদেশ দিতে আবেদন করবেন।

এই সব রাজ্যে ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন তবে ডেমক্র্যাটিক দলের শক্ত ঘাঁটিগুলোর ভোট গণনা করলে বাইডেন এগিয়ে যেতে পারেন। সেই ভোটগুলো হচ্ছে বড় বড় শহরের যেখানে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন খুব কম। প্রেসিডেন্ট যে ভোট গণনা বন্ধ করানোর সংকল্প ব্যক্ত করেছেন বাইডেনের পক্ষ থেকে তাকে আমেরিকান জনগণ, যারা নির্বাচনের আগে ভোট দেয়ার বিকল্পটা বেছে নিয়েছিলেন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়ার অত্যন্ত জঘন্য প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করা হয়।

এ দিকে প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচনে ডেমক্র্যাটরা, যেমনটি আশা করা গিয়েছিল , তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রেখেছেন তবে সেনেট নির্বাচনে অব্যাহত ভাবে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত কারণ গোটা দেশে সেএট নির্বাচনে ফলাফল এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

রিপাবলিকান সেনেটর কেন্টাকির মিচ ম্যাকনেল সপ্তম বারের মতো ছয় বছর মেয়াদের জন্য এই নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।

যেসব রাজ্যে ঝুলে আছে নির্বাচনের ফল

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন মোট ভোটের গড় বা জাতীয় ভোট নয়, বরং রাজ্যগুলোতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ভাগ্য গড়ে দেয় ভোটাররা। সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্লোরিডা, ওহাইও এবং টেক্সাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাজ্য জিতেছেন। কিন্তু আরও চার বছর প্রেসিডেন্ট থাকতে হলে তাকে জিততে হবে আরও কিছু রাজ্য। অন্যদিকে বাইডেনেরও আছে কিছু ভিন্ন উপায়। কিন্তু কোনটাই চূড়ান্ত নয়।

• অ্যারিজোনা- ঐতিহ্যগতভাবে রিপাবলিকান, কিন্তু এবার এটিও ব্যাটলগ্রাউণ্ড। বাইডেন এগিয়ে আছেন এখন পর্যন্ত। কিছু গণমাধ্যম তাকেই সম্ভাব্য বিজয়ী বলছে।

• জর্জিয়া- আরেকটি রিপাবলিকান রাজ্য যেখানে এবার তুমুল লড়াই হচ্ছে। ট্রাম্প অল্প ব্যবধানে এগিয়ে আছেন তবে কিছু এলাকার ভোট এখনো গণনা বাকী।

• নেভাডা- বাইডেন এখানে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে। অল্প ব্যবধানে এগিয়ে আছেন তিনি।

• উইসকনসিন- গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউণ্ড। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যটি ডেমোক্র্যাটদের হাতে থাকলেও ২০১৬ সালে হেরে গিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন। এবার এখনো অল্প ব্যবধানে এগিয়ে আছেন বাইডেন

• মিশিগান- হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। তবে ডেমোক্র্যাট সমর্থিত বেশ কিছু এলাকার ব্যালট গণনা বাকী আছে।

• পেনসিলভানিয়া- বিশটি ইলেক্টোরাল ভোট এখানে। বড় ব্যাটলগ্রাউণ্ড। ট্রাম্প এ মূহুর্তে এগিয়ে আছেন। কিন্তু পোস্টাল ভোট পড়েছে এখানে বিপুল সংখ্যায় যেগুলোর গণনা এখনো শুরু হয়নি। রিপাবলিকানদের আইনি লড়াই শুরু হতে পারে এখান থেকেই।