হার মানতে প্রস্তুত নন ট্রাম্প

হার মানতে প্রস্তুত নন ট্রাম্প

জয়ের আশা ক্রমাগত ফুরিয়ে আসলেও পরাজয় মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলতে রাজি নন যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ মানুষদের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো আভাস দিয়েছে, হোয়াইট হাউসে অবস্থান ধরে রাখতে লড়াই চালিয়ে যাবেন তিনি। এমন অবস্থায় ট্রাম্পের প্রচার সহযোগীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প ভিত্তিহীনভাবে নির্বাচনে জালিয়াতির যে অভিযোগ তুলেছেন, তা নিয়ে বিব্রত হচ্ছে এক পক্ষ।

আর আরেকটি পক্ষ তার এমন দাবির সঙ্গে সহমত জানিয়ে পরাজয় না মেনে নেওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে। ট্রাম্পের কী কী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে তা নিয়ে অ্যাটর্নিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার শিবিরের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টারা। আবার, আরেক পক্ষ আশা করছেন পরাজিত হলেও সে ফল মেনে নেবেন তাদের এ প্রার্থী।

৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন বিভিন্ন সুইং স্টেটে এগিয়ে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে। শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড জর্জিয়া ও পেনসিলভানিয়াতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। তবে এপি ও ফক্স নিউজ অ্যারিজোনাতে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করলেও শুক্রবার সেখানে ব্যবধান কমিয়ে এনেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, চূড়ান্ত ফল সহসাই জানা যাবে না, কারণ ভোট গণনা এই সপ্তাহজুড়েই চলবে। তবে এখন যে পর্যন্ত ফলাফল পাওয়া গেছে তাতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে বাইডেনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

তবে পরাজয় স্বীকার করে প্রার্থীদের বক্তব্য দেওয়ার যে প্রচলন রয়েছে সে বক্তব্য এখনও প্রস্তুত করেননি ট্রাম্প। ঘনিষ্ঠজনদের তিনি বলেছেন, নির্বাচনে হার মানার কোনও ইচ্ছে তার নেই। বরং, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও পুত্রদের মাধ্যমে নিজের অবস্থান জোরালোভাবে উপস্থান করে যাচ্ছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে এক হাত নিয়েছেন ট্রাম্পের দুই পুত্র ট্রাম্প জুনিয়র ও এরিক। বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র রিপাবলিকান সমর্থকদের উদ্দেশে টুইটারে লিখেছেন–'ইচ্ছা ও লড়াই করার সক্ষমতা দেখানোর যথাযথ একটি প্ল্যাটফর্ম আছে তাদের। তবে উল্টো দেখা যাচ্ছে, গণমাধ্যমের সামনে তারা মুষড়ে পড়ছে। উদ্বেগের কারণ নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প লড়াই করে যাবেন। আর বরাবরের মতো তারা কেবল দেখতে থাকবেন!’

ট্রাম্পের আরেক ছেলে এরিক ট্রাম্প সমর্থকদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, ‘কোথায় রিপাবলিকানরা! কিছুটা তো মেরুদণ্ড থাকা উচিত। এই জালিয়াতির বিরুদ্ধে লড়ুন। এই সময়ে আপনারা ভেড়ার পালে মিশে গেলে আমাদের ভোটাররা আপনাদের কখনোই ভুলবে না।’

যুক্তরাষ্ট্র সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার সকালে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সদর দফতরের ভেতরে দ্বিমুখী বাস্তবতা দেখা গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনকে ঠেকাতে এক পক্ষ আইনি সুযোগগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করলেও আরেক পক্ষ মেনে নিয়েছে যে তারা হেরে গেছেন।

ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পলিটিকোকে বলেন, `ভোটার জালিয়াতি নিয়ে বড় ধরনের মামলা কিংবা কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ শেষ। আর বেশিরভাগ মানুষই সেটা জানে। কেউ কেউ তা মেনে নিতে সময় নিচ্ছেন।’

ট্রাম্পের সাবেক এক সহযোগী বলেন, ‘আমি যতটুকু বুঝি, আমরা হেরে গেছি।’ এ সহযোগী নির্বাচনের দিন রাতে তার পরেও ভাবছিলেন তার প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হবেন। তবে এখন সে আশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

ওই সাবেক সহযোগী বলেন, তিনিও প্রেসিডেন্টের মতো করেই বিশ্বাস করেন মহামারি পরিস্থিতিতে ভোটের নীতিমালায় যে পরিবর্তন এসেছে সে কারণেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর জয়ের পথে নেই।

সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সত্যিকার চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডৌজসহ শীর্ষ সহযোগীদের কেউ প্রেসিডেন্টের কাছে পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র হাজির করছেন না। বরং নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে বলে ট্রাম্প যে ভিত্তিহীন দাবি জানিয়েছেন তার পেছনে এসব সহযোগী রসদ জুগিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এতে হোয়াইট হাউসের অনেক কর্মীর মধ্যে বিরক্তি তৈরি হয়েছে। তাদের বিশ্বাস মিডৌজই প্রেসিডেন্টকে নির্বাচন অবৈধ হয়েছে বলে দাবি করার জন্য মদদ দিচ্ছেন। বুধবার সকাল থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে দেখা যায়নি। তবে তিনি আইনি লড়াই চালানোর জন্য প্রেসিডেন্টের তৈরি করা তহবিলে অর্থ দিয়ে ট্রাম্পকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।