মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ তুঙ্গে, সরকারি দপ্তরে কর্মবিরতির আহ্বান

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ তুঙ্গে, সরকারি দপ্তরে কর্মবিরতির আহ্বান

মিয়ানমারে গতকাল রোববার ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছে সেনা অভ্যুত্থান বিরোধীরা। আজ সোমবার আরো বড় ধরনের বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে সব সরকারি দপ্তরে কর্মবিরতি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এমনটি বলা হয়।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ বন্দি নির্বাচিত নেতাদের মুক্তির আন্দোলনে আস্তে আস্তে অংশগ্রহণ বাড়ছে। গত সোমবার সেনা প্রধান ও সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গণতন্ত্রপন্থি জাফরান বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় গণজমায়েত হয় গতকাল রোববার সামরিক জান্তা বিরোধী বিক্ষোভে।

সেনাশাসন বিরোধী বিক্ষোভের নেতা এই থিঞ্জার মং ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে ফেসবুক পোস্টে বলেন, ইয়াঙ্গুনের প্রতিটি জায়গা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসুন, শান্তিপূর্ণভাবে গণজমায়েতে অংশ নিন।

সেনাশাসনের সাত দিন পেরিয়েছে। এখন পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশগুলো শান্তিপূর্ণই রয়েছে। ১৯৮৮ এবং ২০০৭ সালের মতো দমনপীড়নের ঘটনা ঘটেনি। তবে গতকাল ইয়াঙ্গুনে বেশকিছু সেনা ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে। ফলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে বদলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

দুজন বিক্ষোভকারী মং সাউঙ্খা ও থেট সি উইন তাঁদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁদের নিজ নিজ বাড়িতে খুঁজতে গিয়েছিল। তাঁরা অন্যত্র রয়েছেন এবং এখনো মুক্ত আছেন।

কর্মবিরতির ডাক

রাজপথের বিক্ষোভকারীদের পথ দেখান মিয়ানমারের চিকিৎসকেরা। ৩০টি শহরের প্রায় ৭০টি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সেনা অভ্যুত্থানের দুদিন পরেই কর্মবিরতির মাধ্যমে প্রতিবাদ করেন। পরে তাতে যুক্ত হন ইয়াঙ্গুনসহ কয়েকটি শহরের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। পরে সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদেরও অনেকে এই আন্দোলনে যোগ দেন।

আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় মিন কো নাইং বলেছেন, ‘সব সরকারি দপ্তরের কর্মীদের সোমবার থেকে কাজে না যোগ দেওয়ার অনুরোধ করছি।’ এই মিন কো নাইং ১৯৮৮ সালে অং সান সু কিকে সামনে আনেন। ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান অং সান সু চি।

ইন্টারনেট সেবা চালু

গতকাল রোববার দিনব্যাপী মিয়ানমারে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার পর তা আবার চালু হয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ক্ষোভের মাত্রা বেড়ে গতকাল রোববার প্রতিবাদে অংশগ্রহণ বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে ইন্টারনেট সেবা চালু হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার ও ছবি শেয়ারিং সাইট ইনস্টাগ্রাম ব্লকই রয়েছে।

গত সোমবার এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গত সোমবার দেশটির নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিকে বন্দি করার পর ক্ষমতা দখল করে।

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে আমদানি-রপ্তানি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে দেশটির পুলিশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সু চিকে আটকে রাখার জন্য বলা হয়েছে। রাজধানী নেপিদোর একটি থানা থেকে প্রাপ্ত নথিতে বলা হয়েছে, সু চির বাসভবন অনুসন্ধান করে সামরিক কর্মকর্তারা কয়েকটি রেডিও খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো অবৈধভাবে আমদানি করে বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর থেকেই পুলিশের এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অনলাইন সরব হয়ে ওঠেন অনেকে।

এ ছাড়া দেশটির সামরিক জান্তার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের সোচ্চার অবস্থান ক্রমেই আরো জোরদার হচ্ছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ অনেক দিক থেকেই সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানো হয়েছে এবং অং সান সু চির মুক্তি দাবি করা হয়েছে।

এমজে/