স্বৈরশাসনের অধীনে একটা দিন কেমন মিয়ানমারে

স্বৈরশাসনের অধীনে একটা দিন কেমন মিয়ানমারে

পহেলা ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটানোর পর থেকে জনজীবন বদলে গেছে। রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আর সেনাদের তা দমনের চিত্র। সামরিক বাহিনীর টহল। দেশজুড়ে এক বছরের জরুরি অবস্থা আর রাতের বেলা কারফিউ।

ব্যাংকগুলোতে টাকা তুলে নেওয়ার লাইন। সব সময় ভয়-আতঙ্ক। কখন কাকে তুলে নিয়ে যায় সেনা-পুলিশ সদস্যরা। জেনারেশন জেড বা ১৯৮৬ সালের পর থেকে ২০১১ পর্যন্ত জন্ম নেওয়া প্রজন্মের কাছে এটি ভিন্নধর্মী চিত্র। ১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছর টানা সামরিক শাসন ছিল মিয়ানমারে। ২০১০ সাল থেকে মানুষ কিছুটা স্বাধীনতা পেতে শুরু করে।

২০১৫ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির এনএলডি সরকার গঠন করে। সামরিক বাহিনীর তীব্র প্রভাব থাকার পরও কিছুটা উদার অবস্থা চলছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় নির্বাচনে সেনা সমর্থিত ইউএসডিপি শোচনীয়ভাবে হেরে যাওয়ার পর নিজেদের প্রভাব হারানোর শঙ্কায় আবারও ক্ষমতা নিয়ে নেয় তাতমাদো নামে পরিচিত মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আবার শুরু হয় অর্ধশতাব্দীর ভূতের বিরুদ্ধে লড়াই।

ইরাবতি পত্রিকার ইংরেজি ভার্সনের সম্পাদক কিয়াও ঝোও মোয়ে লিখেছেন, স্বৈরশাসনের অধীনে মিয়ানমারের প্রতিটি নাগরিকের দিন শুরু হয় গ্রেফতার বা দমন-পীড়নের তীব্র ভয় ও অনিশ্চয়তা নিয়ে। ১৯ দিন ধরে আমরা একরকম দুঃস্বপ্নের দিন কাটাচ্ছি। সবাই তাদের বাচ্চার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

যখন আমি ‘প্রতিটি নাগরিক’ বলি, তখন সেখানে পাঁচ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে বাদ থাকে কেবল জান্তা নেতা, তাদের সহযোগী ও সমর্থকরা। কিন্তু তারা হাতেগোনা। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত ছিল কড়া সামরিক শাসন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এবারের পরিস্থিতি তখনকার চেয়েও খারাপ। সূর্য ওঠার পর হাজারো মানুষ তাদের ঘর ছেড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হতে রাস্তায় নামেন।

তরুণ, বৃদ্ধ, ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক, চাকরিজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত- সবাই অংশ নেন। তাদের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকলেও দাবিতে কোনো বৈচিত্র্য নেই।

দাবি সবার এক। ন্যায়বিচার ও অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। সবার মধ্যে চিরস্থায়ী শক্তি দেখা যায়। যদিও তারা জানে তাদের সামনে কী ঝুঁকি রয়েছে। যখনই তারা অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদ শুরু করে, ধীরে ধীরে গ্রেফতার ও দমন-পীড়নের খবর আসতে থাকে।

শুক্রবার (১৯ ফেব্র“য়ারি) কাচিন রাজ্যের রাজধানী মাইতকিনাতে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদকারীদের দাঙ্গা-পুলিশ ও সেনা সদস্যরা তীব্র মারধর করে। সেখান থেকে অন্তত ১২ জনকে গ্রেফতার করে এবং পরে মাইতকিনা এডুকেশন কলেজের দুজন শিক্ষককে গ্রেফতার করে। সেনা শাসনবিরোধী আর কোনো বিক্ষোভে অংশ নেবে না মর্মে লিখিত নিয়ে ১৪ জনকেই সন্ধ্যায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনের সুলে মোড় ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। অভ্যুত্থানের পর থেকে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হচ্ছে শহরটিতে। কিছু বিক্ষোভকারী গ্র“প বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোর সামনে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছে। গান গাইছে, শুনছে।

কিছু রাষ্ট্রদূত বের হয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। মিয়াইনিগন মোড়ে বিক্ষোভকারীরা পেঁয়াজ ও চাল গাড়িতে তুলে দিতে সহায়তা করছেন। পুলিশ তাদের দেখছিল। তাদের স্লোগান ছিল ‘গাড়ি ভেঙে ফেলা প্রতিবাদ’ ‘ধীরে চালানো প্রতিবাদ’। দুপুরের একটু আগে রাজধানী নেপিদো থেকে এলো সবচেয়ে খারাপ খবর। এক সপ্তাহ আগে পুলিশের গুলিতে আহত ২০ বছর বয়সি ছাত্রী মা মিয়া খাইন হাসপাতালে মারা গেছে।

এমজে/