মোদির মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল

মোদির মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার দুই বছরের বেশি সময় পর মন্ত্রিসভায় প্রথম বড় ধরনের রদবদল আনলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই করোনাকালে কেবিনেটের আকারও বাড়িয়েছেন। আগে ছিল ৫৩, এখন হয়েছে ৭৪। বাদ পড়েছে ১৫ জন। নতুন যোগ হয়েছে ৩৬ জন। এর মধ্যে পূর্ণমন্ত্রী ৩০ জন আর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন ৪৪ জন। নতুন আসাদের মধ্যে তরুণমুখের বেশ প্রধান্য রয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ ধরনের রদবদল অনেকটা প্রত্যাশিত ছিল। কারণ, এ নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরেই জল্পনা চলছিল। অপরদিকে কেউ কেউ বলছেন, এবারের রদবদলে ‘ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের’ বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে এই করোনাকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের কারণে। ভারতের হাসপাতালগুলোতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় প্রবলভাবে অক্সিজেনের সংকট দেখা দেয়। এ নিয়ে সারা বিশ্বেই মোদির সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকের অভিমত, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেই মোদি-অমিত শাহ শিবির নতুন করে সরকার ও বিজেপিকে গোছানোর কাজ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে যেসব প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতাকে সরকারের মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদেরকে দলীয় সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজে দায়িত্ব দেওয়া হবে।

অপরদিকে মন্ত্রিসভায় তরুণদের স্থান দিয়ে চমক দিলেন মোদি-অমিত শাহ জুটি। ২০১৯ সালের মে মাসে মোদি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। সবচেয়ে কম বয়সী মন্ত্রী হেসেবে শপথ নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারের সংসদ সদস্য নিশীথ প্রামাণিক।

এবার মোদির মন্ত্রিসভায় বিজেপির পাশাপাশি জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ), লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি), আপনা দলসহ বিভিন্ন শরিক দলের মোট ৪৩ জন নেতা এদিন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

যার মধ্যে ৩৬ জন নতুন মুখ ও বাকি সাতজনের পদন্নোতি হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রানে, ড. বীরেন্দ্র কুমার, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, বিজেপি সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ ভূপেন্দ্র যাদব, রামচন্দ্র প্রসাদ সিং, মীনাক্ষি লেখি, এলজেপি সভাপতি পশুপতি কুমার পরশ, আপনা দল নেত্রী অনুপ্রিয়া সিং প্যাটেল, সত্যপাল সিং বাঘেল প্রমুখ।

অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী থেকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী পদে উন্নিত হওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন কিরেন রিজিজু, রাজকুমার সিং, হরদীপ সিং পুরী, জি কিষাণ রেড্ডি, অনুরাগ সিং ঠাকুর, পুরুষোত্তম রূপালা, মনসুখ মান্দাভিয়া।

নতুন এই মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন পশ্চিমবাংলার চার সংসদ সদস্য। এরা হলেন নিশীথ প্রামাণিক, জন বারলা, শান্তনু ঠাকুর ও সুভাষ সরকার। এদিন দেশের সব থেকে কনিষ্ঠতম মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন কোচবিহারের বিজেপি সংসদ সদস্য নিশীথ প্রামাণিক।

বুধবার রাতেই নতুন মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা হতে পারে বলে সূত্রে খবর। সন্ধ্যায় কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দিল্লিতে রাষ্ট্রপতিভবনের দরবার হলে নতুন মন্ত্রীরা শপথ নেন। তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

প্রায় দেড় ঘণ্টার এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন,বস্ত্র, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, জাতীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গড়করি, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জয়প্রকাশ নাড্ডা প্রমুখ। তবে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে এবার একাধিক হেভিওয়েট নেতা ও সাবেক মন্ত্রীর জায়গা হয়নি।

মন্ত্রিসভা রদবদলের আগে এদিন দুপুর থেকেই একে একে পদত্যাগ করেন প্রায় ১২ জন মন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি ওই ১২ জনেরই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে চারজন সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রীও আছেন। যাদের অন্যতম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর, আইন, ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক।

বাকিদের মধ্যে অন্যতম সার ও রসায়ন মন্ত্রী ডি. ভি. সদানন্দ গৌড়া, শ্রমমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) সন্তোষ গাঙ্গওয়ার, মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শমরাও ধত্রে, উপভোক্তা প্রতিমন্ত্রী রাওসাহেব দাদারাও দানভে, সামাজিক ন্যায়বিচারমন্ত্রী থাবরচান্দ গেহলট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিমন্ত্রী প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি। এই তালিকায় বাংলার দুই প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন-এরা হলেন বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী।

আসানসোলের বিজেপির সংসদ সদস্য বাবুল সুপ্রিয় ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু প্রতিমন্ত্রী, অন্যদিকে রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী ছিলেন নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে।

এদিন মন্ত্রিসভা রদবদলের আগে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিজেপির সভাপতি, বিজেপিসহ শরিক দলের নেতারা।