জাতির উদ্দেশে ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের ভাষণ

যুদ্ধের ময়দানে একা ছেড়ে গেল পশ্চিমারা

যুদ্ধের ময়দানে একা ছেড়ে গেল পশ্চিমারা

বিপদের দিনে কেউ পাশে থাকে না। এই চির সত্যটিই এবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, রাশিয়ার সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরুর পর থেকে একেবারে এককভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কিয়েভ। মস্কোর প্রথম দিনের আগ্রাসনে ইউক্রেনের ১৩০ নাগরিক নিহত হয়েছেন। খবর এএফপির।

মধ্যরাতের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ওই ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রকে রক্ষায় আমরা একাই যুদ্ধ করে যাচ্ছি। কারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত? এ ক্ষেত্রে আমি তো কাউকে দেখছি না। কারা ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য পদের নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত? এ ব্যাপারে সবাই শঙ্কিত।’ জেলেনস্কি আরও বলেন, রাশিয়ার ‘নাশকতা চালানো গ্রুপ’ রাজধানী কিয়েভে প্রবেশ করেছে। তিনি নগরীর নাগরিকদের সজাগ থাকার এবং কারফিউ পালনের আহ্বান জানান।

রাজধানী কিয়েভ নিজের বাসভবন থেকে দেওয়া ওই বার্তায় তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার প্রথম লক্ষ্য আমি, দুই নাম্বার আমার পরিবার, তবু পালাব না। রাশিয়া চায় আমাকে শেষ করে আমার দেশকে রাজনৈতিকভাবে নিঃস্ব করে দিতে। কিন্তু আমি পালাব না। এখানেই থাকব। যেখানে আমার সেনারা প্রতি মুহূর্তে রাশিয়ার সঙ্গে লড়াই করছে। সরকার পতন ও নতুন সরকার গঠনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।’ ২০১৯ সালে বিপুল ভোটে জিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পদাভিষিক্ত হন ভলোদিমির। তার আগে ইউক্রেনের টিভির জনপ্রিয়তম কৌতূকশিল্পী ছিলেন তিনি।

ইউক্রেন ত্যাগে জেলেনস্কির নিষেধাজ্ঞা : বৃহস্পতিবার রুশ আক্রমণের পরপরই ইউক্রেনের জনগণের জন্য একটি ‘গতিবিধি ডিক্রি’তে স্বাক্ষর করেছেন। ডিক্রি অনুযায়ী দেশটির ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষরা দেশত্যাগ করতে পারবেন না। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্সির ওয়েবসাইটের একটি এন্ট্রিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে, যুদ্ধ করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।’

ঘরে ঘরে পেট্রোলবোমা তৈরি রাখুন : রাজধানী কিয়েভের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা ওবোলোনের বাসিন্দাদের রাশিয়ান যানবাহন এবং সৈন্যদের গতিবিধি সম্পর্কে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। শুক্রবার এক মন্ত্রণালয়ের টুইটার পেজে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘আপনারা পেট্রোলবোমা তৈরি করুন। দখলদারদের উড়িয়ে দিয়ে শহর দখলমুক্ত রাখুন।’ এএফপি।

শুক্রবার মার্কিন গোয়েন্দারা জানিয়েছে, রাশিয়ান সৈন্যরা শহরের উপকণ্ঠে আক্রমণ শানিয়েছে। শিগগিরই তারা কিয়েভে প্রবেশ করবে। তারা শহরের কাছাকাছি একটি বিমানবন্দর দখল করবে, সৈন্যরা সেখানে আসবে এবং ইউক্রেন সরকারকে জিম্মি করবে। কারণ প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সেখানে আটকে আছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ান সৈন্যদের পেট্রোলবোমা দিয়ে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

কিয়েভ রক্ষায় হাতে হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে সরকার : রাজধানী রক্ষায় কিয়েভবাসীদের হাতে হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে ইউক্রেন সরকার। শুক্রবার এক বিবৃতিতে মেয়র সাবেক বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ভিতালি ক্লিতশ্চকো বলেন , পুরো শহরটাই এখন প্রতিরক্ষা এবং পালটা হামলা বলয়ের মধ্যে রয়েছে। নাগরিকদের হাতে বন্দুক, একে-৪৭ তুলে দেওয়া হয়েছে। ‘যুদ্ধাহতদের সেবাবিষয়ক প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে তাদের। প্রয়োজন পড়লে কিয়েভের পথে পথে, অলিতে-গলিতে গেরিলা হামলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে তারা।’