মারিউপোল এখন মৃত্যুপুরী : ৭৫ ফুট দীর্ঘ পরিখায় লাশের সারি

মারিউপোল এখন মৃত্যুপুরী : ৭৫ ফুট দীর্ঘ পরিখায় লাশের সারি

মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, চোখ আর চেহারার সামান্য অংশ ছাড়া আপাদমস্তক ঢাকা তাদের। এরা মারিউপোলের এখন পর্যন্ত বেঁচে থাকা ভাগ্যবানদের কয়েকজন। রাশিয়ানদের আগ্রাসী হামলায় নিহত হতভাগ্য মানুষগুলোকে নামাচ্ছেন গণকবরে। বুধবার দক্ষিণ ইউক্রেনের অবরুদ্ধ শহর মারিউপোলে একটি গণকবরে মৃতদেহ নামাচ্ছিলেন তারা। কবরস্থ হওয়াদের বিদায় জানাতে কোনো নিকটাত্মীয় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

স্বেচ্ছাসেবীদের দিকে চোখ রাখলে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কথা মাথায় এলেও গত সাতদিন ধরেই ইউক্রেনে কোভিডে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা শূন্যে। কিন্তু রুশ হামলা এখন কোভিডের চেয়েও ভয়ংকর। বোমা হামলায় ক্ষত-বিক্ষত মারিউপোলের ধ্বংসস্তূপ থেকে ওঠানো হচ্ছে সারি সারি লাশ। মারিউপোল যেন এক লাশের শহর।

কবরে নামানো মৃতদেহগুলো বডি ব্যাগে, কম্বলে মোড়ানো ছিল। রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে মারিউপোলে অন্তত ১ হাজার ৩০০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শহরের মেয়রের একজন উপদেষ্টা। শহরটি থেকে হারিয়ে গেছে পানি ও বিদ্যুৎ পরিষেবা। শহরটির ডেপুটি মেয়র সের্গেই অরলভ বলেন, ‘সত্যিই, আমরা গুনে শেষ করতে পারব না-কত লোকের মৃত্যু হয়েছে। কারণ, এখনো ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ শুধু উঠছেই।’

শীর্ষ স্থানীয় আঞ্চলিক পুলিশ কর্মকর্তা পুতিনের সরকারকে কোনো ‘যুক্তি ছাড়াই বিশাল যুদ্ধাপরাধ’র অভিযোগ এনেছেন। মারিউপোলে এ বর্বর হামলার নিন্দা করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রাশিয়ার অপরাধমূলক আক্রমণের নিন্দা করে বলেছেন, ‘পুতিনকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে’।

মারিউপোল আজভ সাগর সংলগ্ন ইউক্রেনের কৌশলগত শহর। ৪ লাখ ৩০ হাজার জনসংখ্যার এ শহরটিতে এখন তৈরি হয়েছে মানবিক সংকট। খাদ্য ও ওষুধের অভাবে শহরটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন দেশরক্ষার সংকল্পে বুকবাঁধা মারিউপোলবাসী। আশঙ্কা করছেন বসে থাকলে তারাও শায়িত হতে পারেন সরকারি গণকবরে-যেখানে তাদের ‘বিদায়’ বলার কেউ থাকবে না।

এমজে/