ইউক্রেন পরিস্থিতি : নিরাপত্তা পরিষদে গভীর উদ্বেগ

ইউক্রেন পরিস্থিতি : নিরাপত্তা পরিষদে গভীর উদ্বেগ

ইউক্রেন পরিস্থিতি সপ্তাহান্তে আরো নাজুক হয়েছে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থা (ওএসসিই)। ১৯৭৫ সালে সংস্থাটি গঠনের পর থেকে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড পিসবিল্ডিং অ্যাফেয়ার্স রোজমেরি ডিকার্লো।

ইউক্রেনের প্রধান শহরগুলিতে তীব্র বোমা হামলার পটভূমিতে ওএসসিই’র কার্যক্রম সম্পর্কে সোমবার জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে আয়োজিত বার্ষিক ব্রিফিং -এ এসব কথা বলেন তিনি।

রোজমেরি ডিকার্লো বলেন, সপ্তাহান্তে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছে। ইউক্রেনের অসংখ্য শহরে নিরবচ্ছিন্ন গোলাবর্ষণ এবং বোমাবর্ষণের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সেখানে বেসামরিক মানুষ প্রতিদিন নিহত হচ্ছে, সেইসাথে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন অনুসারে, জনবহুল এলাকাগুলোতে রাশিয়ানবাহিনী গুচ্ছ অস্ত্র ব্যবহার করছে।

‘রাশিয়ার আগ্রাসন ইউরোপীয় নিরাপত্তা স্থাপত্যের মূল ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে,’ বলেও মন্তব্য করেন আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল।

অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি কোঅপারেশন ফর ইউরোপ (ওএসসিই) ১৯৭৫ সালে ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বিষয়ক সম্মেলন থেকে জন্ম হয়। এটিতে বর্তমানে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র রয়েছে ৫৭টি। এটি সন্ত্রাস দমন, সাইবার নিরাপত্তা এবং সুশাসনের মতো বিষয়গুলোতে আঞ্চলিক সংলাপ এবং আলোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে।

এছাড়াও ওএসসিই ইউরোপ জুড়ে বিভিন্ন ধরনের অন-দ্য-গ্রাউন্ড কাজ গ্রহণ করে, যার মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী সহায়তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ।

সংস্থার ইতিহাস এবং জাতিসঙ্ঘের সাথে এর ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের কথা স্মরণ করে মিসেস ডিকার্লো বলেন, ইউক্রেনের আজকের মর্মান্তিক সঙ্ঘাত ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় ও শক্তিশালী করার প্রক্রিয়ার গুরুত্বকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

জাতিসঙ্ঘ ক্রমাগত ইউক্রেনে ওএসসিই এর কাজকে সমর্থন করে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের নিরপেক্ষ, নিরস্ত্র বিশেষ পর্যবেক্ষণ মিশন - যা সেখানে ২০১৪ সালে কিয়েভের অনুরোধের পরে মোতায়েন করা হয়েছিল এবং ত্রিপক্ষীয় যোগাযোগ গ্রুপে ওএসসিই এর নিযুক্তি, একটি কূটনৈতিক গ্রুপিং যা ইউক্রেন এবং রাশিয়ান ফেডারেশনকেও অন্তর্ভুক্ত করে।

মিসেস ডিকার্লো নিরপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে ইউরোপে দীর্ঘস্থায়ী আস্থা-নির্মাণের ব্যবস্থা, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এবং অন্যান্য কাঠামো ভেঙে ফেলার ঝুঁকি রয়েছে। ভয়ানক মানবিক পরিস্থিতির মধ্যে, জাতিসঙ্ঘ ইউক্রেনের জনগণের প্রতি তার সমর্থন বাড়াচ্ছে এবং সেইসাথে একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী কূটনৈতিক সমাধানের সমর্থনে ওএসসিইসহ মূল অংশীদারদের সাথে তার সম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে।

এছাড়াও নিরাপত্তা পরিষদে ব্রিফিং করেন পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ওএসসিই-এর বর্তমান চেয়ারম্যান-ইন-অফিস জেবিগনিউ রাউ। এসময় তিনি বলেন, ‘গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বাস্তবে পরিণত হয়েছিল।’

তিনি আরো বলেন, রাশিয়ান ফেডারেশনের পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন ইউরোপে অতীতের সকল প্রত্যয়কে ভেঙে দিয়েছে।

রাশিয়ার এ হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাশিয়ান বাহিনী জনসংখ্যার ইচ্ছা ভঙ্গ করার প্রয়াসে বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করছে, আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ অস্ত্র দিয়ে স্কুল ও হাসপাতালে আঘাত করছে।

জেবিগনিউ রাউ আরো বলেন, কূটনীতির দরজা এখনো খোলা রয়েছে এবং মস্কোকে শান্তিপূর্ণভাবে সঙ্কটের অবসান ঘটাতে সংলাপে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নীরব না থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের বিচার করা হবে তাদের কৃতকর্ম অনুযায়ী।’

এমজে/