ইউক্রেন-রাশিয়া আলোচনা

রাশিয়া নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিলে নিরপেক্ষ থাকবে ইউক্রেন

রাশিয়া নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিলে নিরপেক্ষ থাকবে ইউক্রেন

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথমবার ইউক্রেন-রাশিয়া আলোচনায় দৃশ্যত অগ্রগতি হয়েছে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপের প্রথমদিনের আলোচনা শুরু হয় তুরস্কে। আলোচনা শেষে রাশিয়া বলছে, আলোচনা গঠনমূলক ছিল। আলোচনায় যে অগ্রগতি হয়েছে তার প্রমাণ, রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের প্রস্তাব পেশ।

প্রস্তাব গ্রহণ করে রাশিয়া বলেছে, তারা এখন এই প্রস্তাবগুলো বিবেচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে পেশ করবেন। এর আগে রাশিয়া জানিয়েছে, আলোচনায় আস্থা বাড়াতে এবং অগ্রগতি আনতে কিয়েভ এবং চেরনিহিভে উল্লেখযোগ্যভাবে হামলা কমাবে।

আলোচনার আয়োজক দেশ তুরস্কও প্রথম দিনের আলোচনা শেষে বলেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও তুরস্কে অনুষ্ঠিত আলোচনা থেকে ‘যুগান্তকারী মুহূর্ত’ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

তাছাড়া পুতিন প্রস্তাব মেনে নিলে, কিংবা গররাজি হলেও হয়তো আলোচনার দরজা সহসা বন্ধ হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সামরিক হামলা-প্রতি হামলার ভয়াবহতা থেকে বেসামরিক মানুষ কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাবে। অন্তত রাশিয়ার সাম্প্রতিক আচরণ এমনটাই মনে হচ্ছে। নমনীয় ইউক্রেনও। তবে কি যুদ্ধ শুরুর ৩৪তম দিনে এসে সংঘাত বন্ধের আশার আলো ফুটলো? তবে কী তুরস্কে অনুষ্ঠিত আলোচনা থেকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শেষের শুরু হলো?

প্রথম দিনের আলোচনা শেষে রাশিয়ার প্রধান আলোচক ভ্লাদিমির মেডিসঙ্কি বলেছেন, প্রথম দিনের আলোচনা ‘গঠনমূলক’ ছিল। দুই পক্ষের মধ্যে এই আলোচনা টানা কয়েকঘণ্টা চলে।

মেডিসঙ্কি বলেন, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে পাওয়া প্রস্তাব এখন বিবেচনার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

এ সময় তিনি বলেন, সংঘাত বন্ধে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চুক্তিকে সম্মত হলেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকের সম্ভাব্যতা তৈরি হবে।

প্রথম দিনের আলোচনায় অংশ নেওয়া ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা বলেছেন, আলোচনায় তারা রাশিয়ার কাছে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে নিরপেক্ষ অবস্থান মেনে নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। আর নিরাপত্তা নিশ্চয়তাদানকারীর হিসেবে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রসহ আটটি দেশের নাম প্রস্তাব করেছেন।

অর্থাৎ এই প্রস্তাবের অর্থ হলো ইউক্রেন কোনো সামরিক জোটে যোগ দেবে না বা কোনো সামরিক ঘাঁটি দেশটিতে করতে দেবে না।

এ ছাড়া ক্রিমিয়ার অবস্থান কি হবে তা ঠিক করতে দুই পক্ষের মধ্যে আগামী ১৫ বছর আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে ইউক্রেন। পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি শুরু হলে তা কার্যকর হবে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া।

অন্যদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের আলোচনায় ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে বলে দাবি করেছেন আয়োজক দেশ তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। আলোচনা শেষে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত সাভাসগলু বলেন, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছেছে। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়েও তারা একমত হয়েছেন।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আরও গুরুতর বিষয়গুলো নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আলোচনা করবেন। তারপর দুই দেশের নেতারাও বৈঠকে বসতে পারেন।

এর আগে রাশিয়ার সেনাবাহিনী দাবি করে, মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে চলমান আলোচনায় অগ্রগতি আনতে কিয়েভ ও চেরনিহিভে অভিযানের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা হবে।

রুশ উপপ্রতিরক্ষা মন্ত্রী আলেক্সান্ডার ফোমিন বলেন, এই সিদ্ধান্তের মানে হলো সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে এবং ‘অধিকতর আলোচনার পরিস্থিতি তৈরিতে’ চলমান আলোচনায় ‘আস্থা বাড়নো’।

আর ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, কিয়েভ এবং চেরনিহিভের আশপাশ থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে।

এদিকে হোয়াই হাউস বলেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পশ্চিম ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে মঙ্গলবার ফোনে কথা বলবেন। বাইডেন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালির নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

মঙ্গলবার দু’দিনব্যাপী এই আলোচনা তুরস্কের প্রেসিডেন্সিয়াল দোলমাবাহচ অফিসে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়। সোমবার দুই দেশের আলোচকরা তুরস্কে পৌঁছান। এর আগে রাশিয়ার মিত্র বেলারুশে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে প্রথম ধাপের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। যদিও সেই আলোচনা থেকে ইতিবাচক কোনো অগ্রগতি আসেনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করে। ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়া ব্যাপক আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়ে। এই সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ মস্কোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।