নারীর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলে কখনই স্বীকৃতি পাবে না তালেবান

নারীর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলে কখনই স্বীকৃতি পাবে না তালেবান

আফগানিস্তানে যতদিন পর্যন্ত নারীদের ওপর আরোপিত বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা থাকবে ততদিন তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষে ‘প্রায় অসম্ভব’। এমনটাই বলেছেন আফগানিস্তানে জাতিসংঘের দূত এবং সহায়তা মিশনের প্রধান রোজা ওতুনবায়েভা। বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি বলেন, তালেবানরা জাতিসংঘ ও এর সদস্য দেশগুলির কাছ থেকে স্বীকৃতি চায়। কিন্তু একইসাথে তারা জাতিসংঘের সনদে প্রকাশিত মূল মূল্যবোধের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।

ওতুনবায়েভা নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, তালেবান নারীদের বিরুদ্ধে যে বাধা সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে যে ডিক্রি ও বিধিনিষেধ প্রণয়ন করেছে তাতে আমি হতবাক। আমরা তাদের জানিয়েছি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই ডিক্রিগুলো কার্যকর থাকবে, ততদিন তাদের সরকারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের দ্বারা স্বীকৃতি দেয়া প্রায় অসম্ভব।

২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। এরপর প্রায় দুই বছর পাড় হয়ে গেলেও বিশ্বের কোনো দেশ তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। এর আগেও একবার তালেবান ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। সেসময় দেশব্যাপী কট্টোর শরিয়া কায়েম করেছিল সংগঠনটি। এই দফায় প্রথম বারের তুলনায় বেশ উদার হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান।

কিন্তু ক্ষমতা দখলের পর থেকে নারীদের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চলেছে সংগঠনটি। বর্তমানে আফগানিস্তানে প্রাইমারি স্কুলের পর নারীদের পড়াশুনা নিষিদ্ধ। এছাড়া তাদের চাকরি করারও সুযোগ নেই। তারা জিম কিংবা পার্কে যেতে পারেন না। পাশাপাশি তালেবানরা প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড সহ তাদের ইসলামী আইনের কঠোর ব্যাখ্যাগুলো আবার ফিরিয়ে এনেছে। এতে মুসলিম দেশগুলোরও সমর্থন পাচ্ছে না তারা। আফগানিস্তানের প্রতি সবথেকে সহানুভূতিশীল দেশ কাতারও নারী অধিকার নিশ্চিতে তালেবানকে অব্যাহত চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

তালেবান গত ৫ই এপ্রিল মৌখিক ভাবে জাতিসংঘকে জানায় যে মানবিক সংগঠনগুলোতে কর্মরত নারীদের উপরেও আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। সে দেশে প্রায় ৪০০ আফগান নারী জাতিসংঘের হয়ে কাজ করেন। এর ফলে এখন থেকে তাদেরকেও বাড়ি থেকে কাজ করতে হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদ তালেবানের এই আদেশের নিন্দা জানিয়েছে এবং গত ২৭শে এপ্রিল সর্বসম্মত ভাবে পাশ হওয়া প্রস্তাবে এই আদেশ বাতিল করার করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে তালেবান তাদের সিদ্ধান্তে অবিচলিত রয়েছে। তাদের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুনজাদা এ মাসে সরকারী মুখপাত্রদের আদেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন তাদের বিবৃতিতে ইসলামি আইন প্রয়োগের উপর জোর দেয়।

তিনি দক্ষিণাঞ্চলের শহর কান্দাহারে এক বৈঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ গোটা বিশ্বকে জিম্মি করে রেখেছে এবং তাদের কথা ছাড়া কিছুই নড়ে চড়ে না। তালেবান প্রকৃতপক্ষে আফগানিস্তানের সকল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু অমুসলিমরাতো বটেই, এমনকি মুসলিম দেশগুলোও এটি মেনে নিতে অস্বীকার করছে।