সাংবিধানিক সংকটে পড়বে পাকিস্তান!

সাংবিধানিক সংকটে পড়বে পাকিস্তান!

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দৃশ্যত নতুন করে সাংবিধানিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে পাকিস্তান। পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করার পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে জাতীয় নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে সংবিধানে। কিন্তু নতুন শুমারির প্রেক্ষিতে পার্লামেন্টের আসন পুনর্বিন্যাস করার কথা বলছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন)। তা করতে গেলে সময় লাগবে কমপক্ষে চার মাস। ফলে নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ।

শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পিএমএলএনের নেতারা। নতুন শুমারির ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাসের পর নির্বাচন করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে সমর্থন করেছেন তারা। নির্বাচন কমিশনকে তারা জানিয়েছেন সব দল নতুন শুমারি অনুযায়ী নির্বাচন করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু একইদিন তার ভিন্নতা জানান দিয়েছে সদ্য বিদায়ী সরকারের সবচেয়ে শক্তিশালী জোটসঙ্গী পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। তারা বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন ৯০ দিনের মধ্যেই হতে হবে।

যদি এই সময় অতিক্রম করে তাহলে দেশ একটি সাংবিধানিক সংকটে পড়বে। কারণ, সংবিধান সংশোধন করার কোনো এক্তিয়ার নেই বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। ফলে ৯০ দিনের মধ্যে তাদের নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। যদি তা না হয়, তাহলে তা হবে সংবিধানের লঙ্ঘন।

শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে দলটি জানায় তাদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির (সিইসি) মিটিং হয়েছে। সেখানে নির্বাচন এবং দেশের অবনতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

গত ১৭ই আগস্ট পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন নতুন শুমারির ভিত্তিতে পার্লামেন্টের সীমানা পুনর্বিন্যাসের শিডিউল ঘোষণা করে। এ মাসের শুরুতে কাউন্সিল অব কমন ইন্টারেস্টস (সিসিআই) এই শুমারি অনুমোদন করে।

নির্বাচন কমিশনের শিডিউলে দেখা যায় পার্লামেন্টের আসন সীমানা পুনর্বিন্যাসে প্রায় চার মাস সময় লাগবে। তার অর্থ হলো প্রাদেশিক পরিষদ ও জাতীয় পরিষদ বিলুপ্ত করার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এর প্রেক্ষিতে এবারের শুমারিকে ‘বিতর্কিত’ বলে মন্তব্য করেছেন পিপিপি'র ভাইস প্রেসিডেন্ট সিনেটর শেরি রেহমান। তিনি বলেছেন, কাউন্সিল অব কমন ইন্টারেস্ট (সিসিআই) বলেছে- আসন পুনর্বিন্যাসের কারণে নির্বাচন বিলম্বিত করা যাবে না।

পক্ষান্তরে পিএমএলএন নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, সংবিধান ও আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সীমানা পুনঃনির্ধারণের শিডিউল ঘোষণা করেছে। তারা বলেছে, পার্লামেন্টের আসন পুনর্বিন্যাস করা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া নবায়ন একইসঙ্গে সম্পন্ন হতে হবে। তবে নির্বাচন বিলম্বিত করা উচিত হবে না। তাই তারা এ বিষয়ে আবারও আচরণবিধি নিয়ে পরামর্শ করার আহ্বান জানিয়েছে। আহ্বান জানিয়েছে ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য নিষিদ্ধ করতে। তারা আরও আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচনে প্রার্থীদের শুধু পোস্টার ও স্টিকারের খরচ প্রচারণার সময় কমিয়ে আনতে। মিডিয়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণার সুযোগ দেয়া ঠিক হবে না। এই সুযোগ পাবে শুধু রাজনৈতিক দলগুলো। এর জবাবে পিএমএলএন’কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজা বলেছেন, সীমানা পুনর্বিন্যাস ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড একযোগে এগিয়ে নেয়া হবে। তিনি আশ্বাস দেন, নির্বাচন হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। নির্বাচনের সময়ে সব দলই সমান সুযোগ পাবে।

ওদিকে সংবাদ সম্মেলনে পিপিপির নেত্রী শেরি রেহমান বলেন, নির্বাচন কমিশনের সদস্যরাও মনে করেন নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় পরিষদের আসন সংখ্যায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। তাই নির্বাচন বিলম্বিত করা উচিত হবে না। তিনি আরও বলেন, সংবিধানে কোনো পরিবর্তন বা আইনে কোনো পরিবর্তন আনার এক্তিয়ার নেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। তাদেরকে এমন ম্যান্ডেট দেয়া হয়নি। সিন্ধুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ বলেছেন, সীমানা পুনর্বিন্যাসের কারণে নির্বাচন মুলতবি হোক তা তারা চান না। তার ভাষায়- আমাদের লক্ষ্য হলো নির্বাচন হতে হবে সময়মতো। নতুন যে শুমারি চলছে তার কারণে সীমানা পুনর্বিন্যাস করার কোনো প্রয়োজন নইে।

অন্যদিকে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বার বার সময়মতো নির্বাচন দাবি করেছেন। বিশেষ করে বেলুচিস্তান, পাঞ্জাব প্রদেশ এবং জাতীয় পরিষদের আগাম নির্বাচন দাবি করেন তিনি। পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে তিনি নির্বাচন দাবি করেছিলেন। যখন গত বছর এপ্রিলে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তখন তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। যদি আগাম নির্বাচন দেয়া হতো, তাহলে তার জয়ের সম্ভাবনা ছিল প্রবল। দৃশ্যত, এ কারণে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন দেয়নি সদ্য বিদায়ী জোট সরকার। তারা ক্রমশ নির্বাচন পিছানোর চেষ্টা করেছে, যাতে এই সময়ের মধ্যে ইমরান খানের জনপ্রিয়তায় ধস নামিয়ে দেয়া যায় বা তাকে রাজনীতির মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেয়া যায়। তারই ধারাবাহিকতায় ইমরান এখন কুখ্যাত অ্যাটক জেলে বন্দি। নির্বাচন নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে না হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছে পিপিপি।

ওদিকে আগামী অক্টোবরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ দেশে ফিরবেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ও নওয়াজের ছোটভাই শাহবাজ শরীফ।