সময়ের সঙ্গে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হচ্ছে, অনাহারে দুর্গতরা

সময়ের সঙ্গে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হচ্ছে, অনাহারে দুর্গতরা

ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপ মরক্কো। এখনও এর নিচে চাপা পড়ে আছেন অসংখ্য মানুষ। যারা বেঁচে আছেন, তাদেরকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিস্তব্ধ হয়ে আসছে ধ্বংসস্তূপ। তবুও উদ্ধারকর্মীরা সন্ধান করছেন, যদি একজনও জীবিত মানুষকে উদ্ধার করা যায়! অন্যদিকে যেসব মানুষ বেঁচে আছেন, তাদের জন্য জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রত্যন্ত ওইসব এলাকায় পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

উদ্ধারকাজে গ্রামবাসীও খালিহাতে হাত লাগিয়েছেন। তারা আস্ত এক একটা কংক্রিটের স্তর সরিয়ে ফেলছেন। উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে মেশিনারি বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। উল্টো যে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছেন, তাদের দাফন করার জন্য কবর খুঁড়তেই এসব মেশিনারি বেশি দরকারি হয়ে পড়েছে।

এক গ্রামবাসী বলেছেন, আমাদের আর কিছুই নেই। মানুষ অনাহারে আছে। শিশুরা পানি চাইছে। আমাদের সাহায্য করুন।

উল্লেখ্য, শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে পর্যটন শহর মারাকেশের দক্ষিণে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। গত ৬০ বছরের মধ্যে এটাই সেখানে সবচেয়ে প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ২১২২। আহত হয়েছেন ২৪২১ জন। তার মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে বাড়িঘর। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। একের পর এক ভবন বিধ্বস্ত হয়ে চলার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থাপনা মারাকেশ শহরও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দেশটির ষষ্ঠ বাদশা মোহাম্মদ শনিবার থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। জাতীয় পতাকা রাখা হয়েছে অর্ধনমিত। নামানো হয়েছে ব্লাড ব্যাংক। সরবরাহ দেয়া হচ্ছে পানি, খাদ্য, তাঁবু ও কম্বল। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেসব প্রত্যন্ত এলাকা, সেখানে অনেক ঘন্টা চেষ্টা করেও উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারেনি। ফলে সেখানকার মানুষের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। পাহাড়ের ওপর থেকে পাথর পড়ে রোড বন্ধ হয়ে গেছে। আমিজমিজ নামের ছোট্ট শহরে বহু ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালটি ফাঁকা। দেখে মনে হচ্ছে এর ভিতর প্রবেশ করা নিরাপদ নয়। পক্ষান্তরে রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে হাসপাতালের বাইরে তাঁবুতে। হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রায় ১০০ মৃতদেহ শনিবার নেয়া হয়েছে ওই হাসপাতালে। তিনি বলেন, তা দেখে আমি শুধু চিৎকার করে কেঁদেছি। এত্ত মানুষ মারা গেছেন! এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও কিশোর। ভূমিকম্পের পর আমি ঘুমাতে পারিনি। আমাদের কেউই ঘুমাতে পারেননি।

রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে তাঁবু। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন সব হারানো মানুষ। কিছু মানুষ ধুলোমাটিতেই ঘুমাচ্ছিলেন। বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবদেল করিম ব্রুউরির (৬৩)। তিনি বলেন, বাড়ি আর ফিরে যাইনি। লোকজন আরও সাহায্য চাইছে। আমরা একে অন্যকে সাহায্য করছি। বাইরে থেকে কোনো সাহায্য আসছে না। তাঁবু তৈরির জন্য আমাদের আরও কম্বল প্রয়োজন বলে জানালেন আলি আইত ইউসেফ। সরকার যে তাঁবু দিয়েছে তা যথেষ্ট নয়।