সতর্কতা ছাড়া বেসামরিক টার্গেটে হামলা হলে জিম্মিদের হত্যা করবে হামাস

সতর্কতা ছাড়া বেসামরিক টার্গেটে হামলা হলে জিম্মিদের হত্যা করবে হামাস

বেসামরিক ব্যক্তিদের টার্গেট করা হলে ইসরাইলি জিম্মিদের হত্যা করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে হামাস। একই সঙ্গে সেই দৃশ্য প্রচার করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ওদিকে গাজায় অ্যাপার্টমেন্ট, মসজিদ, হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের মধ্যে পড়ে নিহত হয়েছেন ইতালি, থাইল্যান্ড, ইউক্রেনের নাগরিকরাও।

এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, গাজায় অবিরত হামলার মধ্যেও হামাস ঘোষণা দিয়েছে সতর্কতা দেয়া ছাড়া ফিলিস্তিনিদের একটি বাড়িতে একটি ইসরাইলি বোমার বিপরীতে একজন করে ইসরাইলি জিম্মিকে হত্যা করা হবে। ওদিকে এরই মধ্যে উভয় পক্ষে নিহতের সংখ্যা ১৫০০ অতিক্রম করেছে। যদিও ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে, গাজার চারপাশে ১৫০০ হামাস যোদ্ধার লাশ পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। গাজায় একদিকে যেমন হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল, তেমনি বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য এবং জ্বালানিতে পুরোপুরি ব্লকেড বা অবরোধ দিয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে তারা ৩ লাখ রিজার্ভ সেনাকে তলব করেছে। ফলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, যেকোনো সময় ভয়ঙ্করভাবে গাজায় স্থল অভিযান শুরু হতে পারে।

গাজায় সীমান্ত বেড়া এলাকা ‘নিজেদের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণে’ নেয়ার দাবি করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এই সীমান্ত দিয়ে হামাসের অনেক যোদ্ধা প্রবেশ করেছে ইসরাইলে। তাদের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ওই সীমান্ত দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো হামাস যোদ্ধা ইসরাইলে প্রবেশ করেনি। তবে ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এখনো কিছু অস্ত্রধারী থাকার আশঙ্কা করছে তারা। যে সীমান্ত দিয়ে হামাস যোদ্ধারা প্রবেশ করেছে, সেই এলাকায় এখন মাইন পেতে রাখার পরিকল্পনা করছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ইসরাইলের টিভি চ্যানেলগুলো বলছে, হামাসের হামলায় ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে। কমপক্ষে ২৬০০ মানুষ আহত হয়েছে। কয়েক ডজন ইসরাইলিকে জিম্মি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৬০ জনই তরুণ ও যুবক শ্রেণির ইসরাইলি।

এই হামলার কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি প্রতিশোধ নেয়ার কর্কশ বক্তব্য দিয়েছেন। ইরান সমর্থিত হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন- শিশুদের পর্যন্ত বেঁধে হত্যা ও অন্যান্য সহিংসতার। তিনি আরও বলেন, জঘন্য শত্রুরা এই যুদ্ধ চেয়েছিল। তারা তা পাবে। ওদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, কমপক্ষে ৬৮৭ জন ফিলিস্তিনি এই যুদ্ধে বিমান হামলায় শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৭২৬ জন। এসব পরিসংখ্যান শনিবারের পর থেকে। তারা আরও বলেছে, যেসব স্থানে হামলা করছে ইসরাইল তার মধ্যে আছে অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক, একটি মসজিদ, হাসপাতাল। হামলায় সব সড়ক, বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল প্যালেস্টাইনিয়ান টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির প্রধান কার্যালয়েও বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এই হামলায় ল্যান্ডলাইন টেলিফোন, ইন্টারনেট ও মোবাইল সার্ভিস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সোমবার রাতেও এই হামলা অব্যাহত ছিল। ইসরাইলি সেনারা বলেছে, তারা সমুদ্রপথে, আকাশপথে গাজায় টার্গেটে হিট করেছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি অস্ত্র মজুদাগার। এ অবস্থায় হামাসের মুখপাত্র আবু উবাইদা সোমবার ইসরাইলিদের প্রতি হুমকি ইস্যু করেছেন। বলেছেন, তাদের হাতে কয়েক ডজন ইসরাইলি জিম্মি আছেন। জিম্মিদের হত্যার যে হুমকি দিয়েছে হামাস, তার তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দেয়নি ইসরাইল। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইলি কোহেন বলেছেন, হামাসের হাতে জিম্মি আছেন কমপক্ষে একশত ইসরাইলি। ওদিকে গাজার উত্তর ও পূর্বাঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। এ জন্য তারা মোবাইল কল পর্যন্ত করছে। এই সতর্কতার অর্থ হলো, সেখানে অভিযান পরিচালনা করবে সেনাবাহিনী। এ অবস্থায় গাজা সিটির রিমাল অঞ্চল থেকে মানুষজন তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছিলেন। এমনই একজন অধিবাসী ৭৩ বছর বয়সী সালাহ হানুনেহ। তিনি বলেন, আমরা নিজেদেরকে নিয়ে, ছেলেমেয়ে, নাতিপুতি, পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে দৌড়ে পালিয়েছি। এখন বলতে পারি, আমরা শরণার্থী হয়ে পড়েছি। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। এটা কোনো জীবন? একে জীবন বলে না।

গাজা সীমান্তে রাতে রকেট হামলার সাইরেন অনেকটাই কমে আসে। মাত্র দু’দিনের মধ্যে ৩ লাখ রিজার্ভ সেনাকে সক্রিয় করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। এর অর্থ তারা গাজায় ভয়ঙ্কর স্থল অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। প্রধান সামরিক মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ডানিয়েল হাগারি বলেন, কখনো এত পরিমাণ রিজার্ভ সেনাকে ডাকা হয়নি। আমরা আক্রমণে যাচ্ছি। ওদিকে ওয়াশিংটন বলেছে, তারা ইসরাইলকে তার নিরাপত্তায় সহায়তার জন্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, গোলাবারুদ ও অন্যান্য নিরাপত্তা সহায়তা পাঠাচ্ছে। প্রতি বছর ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা বাবদ ৩৮০ কোটি ডলার দিয়ে থাকে ওয়াশিংটন। এই সংকটের মধ্যে ইরানকে জড়ানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সামরিক কর্মকর্তা জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল চার্লস কিউ ব্রাউন।