গাজা দখল করা হবে মস্ত বড় ভুল: জো বাইডেন

গাজা দখল করা হবে মস্ত বড় ভুল: জো বাইডেন

যুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন করলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইসরাইল যদি গাজা উপত্যকা দখল করে নেয় তাহলে তা হবে মস্ত বড় এক ভুল। যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিট প্রোগ্রামে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। রোববার ইসরাইল যখন গাজায় স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন তিনি এ মন্তব্য করেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ।

উল্লেখ্য, ৭ই অক্টোবর গাজার যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাস কয়েক হাজার রকেট নিক্ষেপ করে ইসরাইলে। এতে কমপক্ষে ১৩০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছে। এরপর থেকে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসরাইল। বিরামহীনভাবে তারা বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ অবরোধ সৃষ্টি করেছে গাজায়। সেখানে খাদ্য, পানি, ওষুধসহ সব রকম মৌলিক চাহিদা সরবরাহে এই অবরোধ। ফলে গাজার সাধারণ মানুষ বর্ণনাতীত দুর্ভোগে ভুগছেন।

এরই মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ১২ লাখ মানুষকে সরে দক্ষিণে চলে যাওয়ার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এরপরই সেখানে স্থল, আকাশ ও নৌপথে হামলা চালানোর ঘোষণা দেয় ইসরাইল। এর উদ্দেশ্য গাজাকে পুরোপুরি দখল করে নেয়া। এ বিষয়ে জো বাইডেনের কাছে প্রশ্ন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইল যদি গাজা দখল করে নেয়, তাহলে তাতে তিনি সমর্থন করবেন কিনা। জবাবে বাইডেন বলেন, আমি মনে করি সেটা হবে এক মস্ত বড় ভুল। ফিলিস্তিনি সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না হামাস। তাই গাজায় প্রবেশ করে হামাসের উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

ওদিকে গাজায় ইসরাইলের হামলায় নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ২৬৭০। এরপরও রেহাই পাচ্ছে না তারা। তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। কিন্তু গাজার মাটিতে পা রাখার বিষয়ে কড়া সতর্কতা দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে গাজা অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি অনেক মানুষকে সেখান থেকে উদ্ধার করা যায়নি। সাহায্য দাতা গ্রুপগুলো মানবিক বিপর্যয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তারা মনে করছে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। হামাসের এই সংগ্রাম বঞ্চিত সব মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে ৬ দিনের যুদ্ধের সময় প্রথম গাজা দখল করে ইসরাইল। তারপর এর পুরোটাই আবার ২০০৫ সালে ফিরিয়ে দেয় ফিলিস্তিনের কাছে। এর এক বছর পরে ১৪০ বর্গমাইলের এই উপত্যকায় আকাশ, স্থল এবং নৌপথে অবরোধ দেয় ইসরাইল। গাজার সঙ্গে রয়েছে মিশর ও ভূমধ্যসাগরের সীমান্ত। ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ধর্মনিরপেক্ষ ফাতাহ মুভমেন্টের কাছ থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস। এরপরই গাজার বিরুদ্ধে আবার কঠোর অবরোধ আরোপ করে ইসরাইল। হামাসকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একদল কাপুরুষ বলে আখ্যায়িত করেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করে দেয়া হবে কিনা। এর জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি তাই চাই। কিন্তু সেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে। একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের উপায় থাকতে হবে। এর মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে ইঙ্গিত করেন।

তার কাছে ৬০ মিনিটের সাংবাদিক স্কট পেলে জানতে চান, এই যুদ্ধে কি যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা জড়িত হবে? জো বাইডেন বলেন, আমার মনে হয় না যে, সেটা প্রয়োজন হবে। এরই মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করেছেন তিনি। রাশিয়ার আগ্রাসন সত্ত্বেও তিনি ইউক্রেনে সেনা পাঠাননি। জো বাইডেন বলেন, ইসরাইলের সেনারাই সেখানে চমৎকার যোদ্ধা বাহিনী। তাদের যা প্রয়োজন হবে আমরা তা দেবো। এরই মধ্যে ইসরাইলকে সমর্থন করে তার শক্তি বৃদ্ধি করতে ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে দুটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।