গাজায় সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন মন্তব্য করায় জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি ইসরাইলের

গাজায় সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন মন্তব্য করায় জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি ইসরাইলের

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ বলেছেন, গাজায় সুস্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে ইসরাইল। মঙ্গলবার তার করা এ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ইসরাইল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিবকে এ মন্তব্যের কারণে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। ইসরাইলি মুখপাত্র লিওর হায়াত বলেছে, জাতিসংঘ মহাসচিবের এক মিনিটের বক্তব্য সারসংক্ষেপশূন্য। এর মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসের পক্ষ অবলম্বন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গাজায় অব্যাহতভাবে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ২৪ ঘন্টায় সেখানে কমপক্ষে ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইসরাইলের নৃশংসতায় এরই মধ্যে গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে নিরাপত্তা পরিষদ। মঙ্গলবার অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের একটি সেশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, হামাস ৭ই অক্টোবর যে সহিংসতা চালিয়েছে তার পক্ষে কোনো অজুহাত চলে না। তাই বলে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামষ্টিক যে শাস্তি দেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি সতর্ক করেন। তিনি বলেন, গাজায় যা প্রত্যক্ষ করছি আমরা তা সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আরও পরিষ্কার করে বলতে চাই, সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত কোনো পক্ষই আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তবে এক্ষেত্রে তিনি ইসরাইলের নাম উল্লেখ করেননি।

তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিরা ৫৬টি বছর শ্বাসরুদ্ধকর এক দখলদারিত্বের শিকার হচ্ছেন। ফলে হামাসের হামলা খালি খালি ঘটেনি। এই যুদ্ধে গাজায় বেসামরিক লোকজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

তার এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়েছেন ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইলি কোহেন। গুতেরাঁর দিকে আঙুল তুলে তিনি দেখিয়েছেন ইসরাইলের ইতিহাসে একটিমাত্র হামলায় শিশুসহ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, মিস্টার মহাসচিব আপনি কোন জগতে বাস করেন? তার চেয়ে একধাপ এগিয়ে গিয়ে অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান। তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, সন্ত্রাস এবং হত্যাকাণ্ডের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন মহাসচিব।

হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ বা বিরতি দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আরব রাষ্ট্রগুলো, রাশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশ। এ জন্য মঙ্গলবার ফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া রোধে বৃহত্তর কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে সম্মত হন তারা। ওদিকে ইসরাইলি সেনা ও দখলিকৃত পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে লড়াই তীব্র হয়েছে। অশান্ত হয়ে উঠেছে ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত। যদি এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাবে। হামাসের হাতে জিম্মি ইসরাইলিদের যেহেতু মুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সে জন্য ইসরাইলকে গাজায় স্থল হামলার পরিকল্পনা স্থগিত করার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইদ ইরাভানি নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে অন্যায়ভাবে ইরানকে দায়ী করার চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, দ্ব্যর্থহীনভাবে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পক্ষান্তরে আগ্রাসীদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধকে আরও ছড়িয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।