গাজার রাস্তাগুলোকে গোলকধাঁধায় পরিণত করেছে হামাস

গাজার রাস্তাগুলোকে গোলকধাঁধায় পরিণত করেছে হামাস

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ২০১৪ সালের স্থল হামলার দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। আর এতেই বোঝা যাচ্ছে, গেরিলা কৌশলে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস কতটা দক্ষতা অর্জন করেছে, তাদের অস্ত্রভাণ্ডার কতটা কার্যকর হয়েছে।

হামাস যোদ্ধারা গ্রেনেড-সজ্জিত ড্রোন থেকে শুরু করে ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী অস্ত্রসহ নানা হাতিয়ার ব্যবহার করছে।

অক্টোবরের শেষ দিকে ইসরাইলি স্থল বাহিনী গাজায় প্রবেশ করার পর থেকে ইসরাইলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের ১১৯ সৈন্য নিহত হয়েছে। এদের প্রায় এক চতুর্থাংশই ট্যাংক ক্রু।

আর ২০১৪ সালে নিহত হয়েছিল ৬৬ জন। সেবার তিন সপ্তাহের স্থল হামলায় ইসরাইল সীমিত পরিসরে অভিযান চালিয়েছিল। তবে সেবার হামাসকে নির্মূল করার কোনো টার্গেট ছিল না।

অবসরপ্রাপ্ত ইসরাইলি মেজর জেনারেল এবং সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইয়াকুব আমিদরর বলেন, ২০১৪ সালের সাথে এবারের যুদ্ধের তুলনা হয় না। সেবার আমাদের সৈন্যরা গাজার মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করেছিল।
 
তিনি বলেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনী এখনো সুড়ঙ্গ সমস্যার ভালো কোনো সমাধান বের করতে পারেনি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ওই হামলায় ইসরাইলে ১,২০০ লোক নিহত হয়েছিল। হামাস প্রায় ২৪০ জনকে বন্দী করে। আর ইসরাইলি হামলায় গাজায় ১৮ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধ করছে না। তারা হামাসকে নির্মূল এবং বন্দীদের মুক্তির লক্ষ্য হাসিল না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ না করার কথা বলছে।

তবে ইসরাইল এখন পর্যন্ত তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারেনি। নেতানিয়াহুর পরররাষ্ট্রবিষযক উপদেষ্টা ওফির ফালক বলেন, 'প্রথম দিন থেকেই চ্যালেঞ্জ বিরাজ করছে। ইসরাইলি সৈন্যদের 'বিপুল মূল্য' দিতে হয়েছে।

হামাস তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে চলতি মাসে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। এতে বডিক্যামধারী যোদ্ধাদের কয়েকটি ভবন পাড়ি দিয়ে ইসরাইলি সাজোয়া যানে রকেট নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। ৭ ডিসেম্বর পোস্ট করা আরেকটি ভিডিওতে একই ধরনের দৃশ্য দেখা যায়।

আবার ৫ ডিসেম্বর এক ডিভিওতে সুড়ঙ্গ থেকে একটি ক্যামেরা বের হতে দেখা যায়। পেরিস্কোপের মতো ক্যামেরাটি ইসরাইলি সৈন্যদের অবস্থান নির্ণয় করে। তারপর মাটির নিচে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একটি হামাস সূত্র জানায়, তাদের যোদ্ধরা গুপ্তহামলা চালানোর জন্য যতটা সম্ভব ইসরাইলিদের কাছে চলে যায়। তিনি বলেন, 'আমরা এই ভূমিকে যেভাবে চিনি, তা অন্যরা চেনে না।' তিনি বলেন, এই পরিচিতিকে আমরা কাজে লাগাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের শক্তি এবং তাদের শক্তির মধ্যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না।

হামাস তাদের কতজন যোদ্ধা নিহত হয়েছে, তা জানায়নি। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাসের অন্তত সাত হাজার সদস্যকে হত্যা করেছে। তবে হামাস এই তথ্য প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তাদের অনেক কম সদস্য নিহত হয়েছে।

২০১৪ সালের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক ইসরাইলি কমান্ডার বলেন, এবার ইসরাইলি সৈন্যরা অনেক বেশি স্থানে ছড়িয়ে পড়ায় হামাস সহজেই তাদেরকে টার্গেট করতে পারছে। ফলে বেশি সৈন্য হতাহত হওয়াই স্বাভাবিক।সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর