গাজায় ত্রাণ পাঠাতে নতুন প্রস্তাব পাস নিরাপত্তা পরিষদে

গাজায় ত্রাণ পাঠাতে নতুন প্রস্তাব পাস নিরাপত্তা পরিষদে

গাজায় অধিক ত্রাণ পাঠানোর একটি নতুন প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানে ব্যর্থ হয়েছে তা। কয়েকদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেয়া এড়ানোর বিষয়ে সমঝোতা প্রচেষ্টার পর এই প্রস্তাব পাস হয়। এখানে উল্লেখ্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ইসরাইলের চলমান আক্রমণের মুখে গাজায় ত্রাণ পাঠানো একটি বাস্তব সমস্যা বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। যদি এই যুদ্ধ অব্যাহত থাকে তাহলে গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি আছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

ওদিকে ৭ই অক্টোবর ইসরাইলে হামাস রকেট হামলার পর তাদেরকে নির্মূল করার নামে গাজায় ভয়ঙ্কর সামরিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে সেখানে কমপক্ষে ২০ হাজার সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। পানি, খাদ্য, ওষুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাবে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

তার পরও অব্যাহত সামরিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার নতুন ওই প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রস্তাবটি ভোটে দেয়ার কয়েক মিনিট আগে নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী পরিষদের অন্যতম রাশিয়া এতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব যুক্ত করে। এতে গাজায় অবাধে চলাচলের স্বাধীনতা দেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রস্তাবটিতে রাশিয়ার এই সংশোধনী পরাজিত হয়। ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যদিকে পরিষদের অন্য ১৩টি সদস্যদেশ টেকসই যুদ্ধবিরতির পরিবেশ সৃষ্টির পক্ষে ভোট দেয়। প্রস্তাবে বলা হয়, পুরো গাজা উপত্যকায় মানবিক কারণে যুদ্ধ বন্ধ ও মানবিক করিডোর সৃষ্টি করতে হবে। এতে বলা হয়, গাজা উপত্যকাজুড়ে ফিলিস্তিনি জনসাধারণের কাছে অবাধে অবিলম্বে, নিরাপদে বাধাহীন মানবিক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে।

প্রস্তাবে জাতিসংঘের মেকানিজম তদারকি করতে একজন সমন্বয়ক নিয়োগের কথা বলা হয়। ত্রাণ বিতরণ দ্রুতগতির এবং মসৃণ করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হবে জাতিসংঘের এই মেকানিজম। এ প্রক্রিয়ায় গাজায় ইসরাইল যে ‘স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া’ শুরু করেছে তাতে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে বলে প্রাথমিকভাবে ভয়ে ছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু প্রস্তাবে পরিষ্কার করা হয় যে, এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে। এই প্রস্তাবের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছে হামাস। তারা বলেছে, গাজায় মানুষের মানবিক চাহিদা মেটাতে এটা অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ। প্রস্তাবে সব জিম্মির অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে। এটা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বিষয়ক মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ডানিয়েল হাগারি।

ওদিকে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যখন এই প্রস্তাবের ওপর ভোট হচ্ছিল তখন ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ চলছিল। আল বুরেইজ থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর গাজার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ভয়াবহ স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। ৪৮ ঘণ্টায় সেখানে প্রায় ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক এজেন্সি বলেছে, মোট বসতির এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ লাখ মানুষ বিপর্যয়কর অবস্থায় রয়েছেন। তাদের হিসাবে গাজার পুরো ২২ লাখ জনগোষ্ঠীই ভয়াবহ খাদ্য সংকটে আছেন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সিন্ডি ম্যাককেইন বলেছেন, গাজার কোনো মানুষই অনাহার থেকে মুক্ত নন। কয়েক সপ্তাহ ধরে মিশর থেকে গাজায় ত্রাণ নিয়ে প্রবেশ করছে ট্রাক। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছে, গাজায় চাহিদার তুলনায় শতকরা মাত্র ১০ ভাগ খাদ্য প্রবেশ করছে।