একদিকে আইসিজের আহ্বান, অন্যদিকে গাজায় হামলা

একদিকে আইসিজের আহ্বান, অন্যদিকে গাজায় হামলা

জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) গাজায় গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিলেও তীব্র বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে ইসরাইল ও এর শাসকরা। তারা উন্মত্ত এক গণহত্যায় মেতে উঠেছে। গাজাকে সত্যি ‘নির্জন দ্বীপে’ পরিণত করার লক্ষ্য স্থির করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, মুসলিম দেশগুলো সহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু থোরাই কেয়ার করছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাদের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর শুনানিতে আদালত গাজায় গণহত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু কে নেবে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা! আদালতের ওই নির্দেশ অন্তর্বর্তীকালীন। আদালত জানিয়েছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা যে গণহত্যার অভিযোগে মামলা করেছে, তার বিচার করার এক্তিয়ার আদালতের আছে।

তবে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি আদালত। ফলে গাজার খান ইউনুস অঞ্চলে নাসের হাসপাতালের কাছে স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থাপনাগুলোতে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। এর ফলে নাসের হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে বিদ্যুৎ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। একই অবস্থা রাফায়। সেখানে একটি আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।

৭ই অক্টোবর ইসরাইলে রকেট হামলা চালায় গাজার যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাস। তাতে কমপক্ষে ১১৩৯ জন নিহত হয়। এরপর কয়েকদিন যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে গাজার ওপর ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরাইল। তাতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৬ হাজার ৮৩ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলছেন, আইসিজে গাজায় সব রকম গণহত্যা বন্ধের পক্ষে রুলিং দিয়েছে। তা সত্ত্বেও বোমা হামলা অব্যাহত রাখে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। শুক্রবার দিবাগত রাতভর রাফা শহরে একটি আবাসিক ভবনকে টার্গেট করে ইসরাইল। সেখানে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। খান ইউনুসে অব্যাহতভাবে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। কয়েক সপ্তাহে তাদের আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়েছে সবচেয়ে বড় নাসের হাসপাতাল। খান ইউনুসে বসবাসকারীরা বলছেন, তারা আবারও ঠিক গাজার অন্য অঞ্চলগুলোতে যা চলছে, সেই অভিজ্ঞতার মুখে।

গাজার সবচেয়ে বড় আল শিফা হাসপাতাল এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। শুক্রবার রাতে শুরু হয়ে শনিবার ভোরেও নাসের হাসপাতালে হামলা চালিয়ে তা দখলের চেষ্টা করছিল ইসরাইলিরা। ওই হাসপাতালটিতে জ্বালানির ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর ফলে বেশির ভাগ সেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আল আমাল হাসপাতালেও হামলা চালানো হয়েছে। ওদিকে ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনায় শুক্রবার হামলা চালিয়েছে লেবাননে যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ৯টি হামলার দায় স্বীকার করেছে তারা। প্রথম হামলা হয় সকালে। হুনিনের কাছে ইসরাইলি সেনাদের অবস্থানস্থল টার্গেট করে তারা। ৬টি হামলা হয়েছে রাতে।

জাতিসংঘের আইসিজেতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সব রকম ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা যে আহ্বান জানিয়েছে তার সবটাতে ভেটো দিয়েছেন উগান্ডার একজন বিচারক জুলিয়া সেবুতিন্ডে। দেশটি বলেছে, এই বিচারক উগান্ডার প্রতিনিধিত্ব করেন না। জাতিসংঘের ওই আদালতের ১৭ জন বিচারক ইসরাইলের বিরুদ্ধে ৬টি বিধান ব্যবহার করে ভোটে দেয়। এর বিরুদ্ধে ভোট দেন জুলিয়া সেবুতিন্ডে। উগান্ডা সরকারের মুখপাত্র আদোনিয়া আয়েবেয়ার এক্সে বলেন, আইসিজের দেয়া রুলিংয়ে বিচারক সেবুতিন্ডে ফিলিস্তিন ইস্যুতে উগান্ডা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন না।