ইমরান খানকে ছাড়াই পাকিস্তানে ভোট আজ

ইমরান খানকে ছাড়াই পাকিস্তানে ভোট আজ

পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার। এই নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা ইমরান খানের অনুপস্থিতি। একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ইমরান কারাগারে বন্দী।

এদিকে নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তানের কিছু এলাকায়। গতকাল বুধবার পৃথক বোমা ও গ্রেনেড হামলায় অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৪২টি। এর মধ্যে ২৭২ আসনে সরাসরি ভোট হয়। ভোট গ্রহণ উপলক্ষে গতকালই সংশ্লিষ্ট এলাকায় নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ইমরান খানকে সাজা প্রদান, তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতাদের আদালতের বারান্দায় ছোটাছুটি ও দলীয় প্রতীক কেড়ে নেওয়া—এমন নানা বিষয় আলোচনায় রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) পায়নি।

এবারের নির্বাচনে এগিয়ে আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম ফজলের (জেইউআই-এফ) নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক রয়েছে। করাচিতে জামায়াতে ইসলামির জনপ্রিয়তা বেড়েছে বলে জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মাঠ ছাড়বে না পিটিআই
নির্বাচনের আগে দৃশ্যত খড়্গ নামে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়ানো পিটিআইয়ের ওপর। দলীয় প্রধান ইমরান খানসহ শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা কারাবন্দী। দলীয় প্রতীকে ভোট করতে পারছে না পিটিআই। এই পরিস্থিতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে আছেন দলটির নেতারা। আজকের ভোটের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। ভোটে হস্তক্ষেপ হতে পারে, সেটা মাথায় রেখেই কৌশল সাজানোর কথাও বলেছেন পিটিআই কর্মী–সমর্থকেরা।

রাজধানী ইসলামাবাদের একটি বিপণিবিতানের মুঠোফোন বিক্রয়কর্মী বরকত উল্লাহ। ২২ বছর বয়সী এই তরুণ বলেন, ‘পতাকা-ব্যাজ এগুলো দেখানোর জন্য। কিন্তু ভোট দেব মন থেকেই।’

ইসলামাবাদের আরেক বাসিন্দা হাসান আলী জানালেন, পিটিআইয়ের পতাকা ও ব্যাজ পরিধান করে এবং দলীয় সংগীত গাইতে গাইতে তিনি ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ২৮ বছর বয়সী হাসান বলেন, ‘কতজনকে তারা ঠেকাবে? আমি কাউকে ভয় পাই না।’ প্রয়োজনে অন্য দলের লোকজনের সঙ্গে মিশে গিয়ে তিনি ইমরানের পিটিআইকে ভোট দিয়ে আসবেন।

জোড়া বোমা হামলায় নিহত ২৮
জাতীয় নির্বাচনের আগের দিন গতকাল বেলুচিস্তান প্রদেশে জোড়া বোমা হামলায় কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হয়েছেন। প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে পিশিন জেলায়। সেখানে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারের কার্যালয়ের সামনে বিস্ফোরণে ১৮ জন নিহত হন। এর দেড় শ কিলোমিটার দূরে কিল্লাহ সাইফ উল্লাহ জেলায় দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে ১০ জন নিহত হন। এই দুই বিস্ফোরণে আরও প্রায় ৪০ জন আহত হয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পিশিন জেলায় বিস্ফোরণের অনেকগুলো ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিস্ফোরণের পরে গাড়ি ও মোটরসাইকেল ছিন্নভিন্ন হয়ে সড়কে পড়ে আছে।

এদিকে গতকাল করাচির হাজি লেমো গথ এলাকার প্যাটেল হাসপাতাল এলাকায় বিস্ফোরণে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক শিশুসহ আরও দুজন আহত হয়েছেন। পুলিশ বলেছে, নিহত ব্যক্তিই গ্রেনেড বহন করছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। গ্রেনেডটি তাঁর হাতে বিস্ফোরিত হয়েছিল।

অন্যদিকে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীদের হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন জেইউআই-এফের জ্যেষ্ঠ নেতা হাফিজ হামদুল্লাহ। পুলিশ জানায়, বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে চামান শহরে যাওয়ার পথে মাইজাই আদ্দা এলাকায় গতকাল তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।

এর আগে মঙ্গলবার বেলুচিস্তান প্রদেশের মাকরানসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীদের বাড়ি এবং ভোটকেন্দ্র লক্ষ্য করে কমপক্ষে নয়টি গ্রেনেড হামলা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সন্ধ্যায় কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহী কোয়েটার কিল্লি আহমেদজাই এলাকার একটি সরকারি স্কুলে গ্রেনেড ছোড়ে। কেচ জেলার হোশাব এলাকায় জাতীয় ডেটাবেজ ও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের একটি কার্যালয়েও গ্রেনেড হামলা হয়েছে।

জাতীয় পরিষদে আওয়ারান এলাকা থেকে বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টির (মেঙ্গল) প্রার্থী মির মোহাম্মদ ইয়াকুবের বাড়িতে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। বুলেদাতে পিএমএল-এনের প্রার্থী মির মোহাম্মদ আসলাম বুলেদির বাড়িতেও হামলা হয়েছে।

ন্যাশনাল পার্টির নেতা আবদুল কাদের সাজদি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর বালুচের বাড়ি লক্ষ্য করেও হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া পিপিপির প্রার্থী আগা গুলের বাড়িতে গ্রেনেড হামলার খবর পাওয়া গেছে।