গাজার আল-শিফা হাসপাতালকে ধ্বংসস্তূপ বানিয়েছে দখলদার ইসরায়েল

গাজার আল-শিফা হাসপাতালকে ধ্বংসস্তূপ বানিয়েছে দখলদার ইসরায়েল

বেশ কিছুদিন ধরে গাজার আল-শিফা হাসপাতালে অভিযানের পর আজ সোমবার সেখান থেকে ট্যাংক, সাঁজোয়া যানসহ সেনাসদস্যদের সরিয়ে নিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। কিন্তু ওই এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, আল-শিফা হাসপাতালটি সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে জীবনের সব অনুভূতি ধ্বংস করে দিয়েছে তারা।

ওই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মেদ মাহদি বলেন, হাসপাতালের বেশ কিছু ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের মরদেহ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পড়ে ছিল।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, আল-শিফা হাসপাতালের ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থান পুড়ে কালো হয়েছে। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কংক্রিটের আস্তরণ। অন্ধকার করিডরে পড়ে রয়েছেন কয়েকজন রোগী।

হাসপাতাল এলাকার আরেক বাসিন্দা ইয়াহিয়া আবু ইউসুফ বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী সরে যাওয়ার পর অনেক রোগীকে পাশের আহলি হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে এখনো রোগী, চিকিৎসক ও আশ্রয়হীন মানুষ রয়েছেন। আল-শিফা প্রাঙ্গণে যে কবরস্থান তৈরি করা হয়েছিল, তা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তিনি বলেন, অবস্থা বর্ণনাতীত। দখলদার বাহিনী জীবনের সব অনুভূতি ধ্বংস করে দিয়েছে।

ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, আল-শিফায় অভিযান চালিয়ে কয়েক শ বন্দুকধারীকে তারা আটক করেছে। সেখান থেকে অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য উদ্ধার করেছে। এ সময় বেসামরিক লোকজনের ক্ষতি করা হয়নি। 

তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ইসরায়েলের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলেছেন, এখানে কোনো বন্দুকধারী ছিলেন না।

গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ বলেছে, হাসপাতাল থেকে ১২ জনের বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এএফপি সাংবাদিকেরা সেখান থেকে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান সরে যেতে দেখেছেন। ইসরায়েলি বাহিনী অবশ্য সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ হাসপাতাল ভবনে বেশ কয়েকবার বিমান ও গোলা হামলার ঘটনা ঘটে। হামাসের মিডিয়া অফিস বলেছে, বিমান হামলার মধ্য দিয়ে তারা সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।

ইসরায়েল সেনাবাহিনী গত ১৮ মার্চ আল-শিফা হাসপাতালে অভিযান শুরু করে। তারা অভিযোগ করে, ওই হাসপাতালে হামাসের সদস্যরা লুকিয়ে আছেন। তাদের নির্মূল করতে এ হামলা। এর আগে তারা দাবি করে, আল-শিফা এলাকায় তারা ২০০ হামাস সদস্যকে হত্যা করেছে। তারা ভিডিও উন্মুক্ত করেছে, যেখানে আল-শিফা থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র ও অর্থ দেখানো হয়েছে। তাদের দাবি, এ অর্থ হামাস ও ইসলামিক জিহাদ ব্যবহার করত। হামাস এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
হামাস বলেছে, হাসপাতালের ভেতরে ও ভবনের ওপর ইসরায়েলি সেনারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেছেন, ২০টির বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু মরদেহের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার আগে ওই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আশ্রয়হীন অনেকেই অবস্থান করছিলেন। ইসরায়েলি সেনারা গত নভেম্বরে আল-শিফায় প্রথম অভিযান চালায়। কিন্তু পরে নাকি সেখানে হামাস আবার ফিরে এসেছে।

আজ ভোরে আল-শিফায় বিমান হামলার পাশাপাশি গাজার আরও কয়েকটি এলাকায়  হামলা হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৬৩ জন মারা গেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২ হাজার ৮৪৫-এ পৌঁছেছে, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

এর আগে গত অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে ১ হাজার ১৬০ জন নিহত হন। তাদের হাতে জিম্মি হয় ২৫০ জন।