রমজানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সা:-এর আমল

রমজানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সা:-এর আমল

পবিত্র রমজানকে দশক হিসেবে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দশক রহমত, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত ও তৃতীয় দশক নাজাত। রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই অতি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে শেষ দশকের গুরুত্ব অত্যধিক। কেননা, এই দশকে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল। তা হলো রাত জাগরণ, লাইলাতুল কদর, ইতেকাফ ও সাদাকায়ে ফিতর আদায় ইত্যাদি।

শেষ দশকের আমল : রমজানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সা: ইবাদত-বন্দেগিতে অধিক মনোযোগী হতেন। অন্যান্য সময়ে করা আমলগুলো এই সময় বৃদ্ধি পেতো। শেষ দশকে রাসূল সা:-এর কয়েকটি আমল হলো-

রাত জাগরণ : উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রমজানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ সা: ইবাদতের জন্য লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে ফেলতেন তথা ইবাদতের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত-১৯৮৯)। হজরত আয়েশা রা: থেকে অপর বর্ণনায় রয়েছে- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: রমজানের শেষ দশকে ইবাদতে অধিক সচেষ্ট থাকতেন, যা তিনি অন্য সময়ে করতেন না (মুসলিম, মিশকাত-১৯৮৮)।

লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান : লাইলাতুল অর্থ রাত। কদরের এক অর্থ সম্মান, মর্যাদা, সুমহান। আরেক অর্থ তাকদির বা ভাগ্য নির্ধারণ। লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানিত রজনী বা ভাগ্য নির্ধারণের রজনী। এই রাত হাজার মাসের চেয়ে মর্যাদাবান এবং এই রাতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত করা হয় বলে এই রাতকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। মহানবী সা: এ রাত অনুসন্ধান করতেন এবং উম্মতকেও অনুসন্ধান করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে শবেকদর তালাশ করো’ (বুখারি, মিশকাত-১৯৮৩)। কদরের রজনীর নির্দিষ্ট বর্ণনা কুরআন ও হাদিসে নেই। ফলে রাতটি নির্ণয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে কদর রমজানের ২১তম রাত, কারো মতে ২৩তম রাত, কেউ বলেন ২৫তম রাত, কেউ বলেন ২৯তম রাত। ইমাম আবু হানিফা রহ:-এর মতে ২৭তম রাত।

ইতেকাফ করা : ইতেকাফ রমজানের শেষ দশকের বিশেষ আমল। ভোগবাদী দুনিয়ার মিথ্যে মায়া ত্যাগ করে, পরিবার-পরিজন, চাকরি-বাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য ইত্যাদি বর্জন করে কেবল মনিবের সন্তুষ্টির জন্য একান্তে বসে ইবাদত-বন্দেগি করা উচ্চ মানসম্পন্ন মুমিনের পরিচয়। হজরত আয়েশা রা: বলেন, মহানবী সা: রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন, যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাঁকে ওফাত দান করেন। তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীরা এভাবে ইতেকাফ করতেন (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত-১৯৯৬)।

সাদাকাতুল ফিতর : সাদাকা অর্থ দান, জাকাত ইত্যাদি। আর ফিতর অর্থ ভঙ্গ করা, বিদীর্ণ করা, সৃষ্টি করা ইত্যাদি। উভয় শব্দের যৌথ অর্থ দানের মাধ্যমে ভঙ্গ করা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন দান ও ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করা হয়, তাই এই দান সাদাকাতুল ফিতর এবং এই দিনকে ঈদুল ফিতর বলা হয়। ধনী স্বাধীন মুসলমান ব্যক্তির ওপর সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব। মহানবী সা: রমজানে অধিক পরিমাণে দান করতেন। আয়েশা রা: বলেন, রমজানে রাসূল সা:-এর দান সদকা করার ব্যাপারে উৎসাহ উদ্দীপনা অধিক বেড়ে যেত। তিনি রমজান মাসকে শাহরুল মুয়াসাত তথা সহানুভূতির মাস বলে ঘোষণা করেন। সাদাকায়ে ফিতর দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে ওয়াজিব হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: সাদাকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজাকে অনর্থক ও অশালীন বাক্যালাপ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং নিঃস্বদের খাদ্য দানের জন্য (সুনানে আবু দাউদ)। রমজানের শেষ দশককে অধিক গুরুত্ব দেয়ার আরেকটি কারণ হলো- পবিত্র রমজানের ২৪ তারিখ কুরআন মাজিদ নাজিল হয়।

লেখক : প্রধান ফকিহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী